ট্রাক-ট্রাক্টরের দাপাদাপি বাড়ায় আতঙ্কিত বালুরঘাট শহরবাসী। গত দু’সপ্তাহে লরি ও ছোট গাড়ির ধাক্কায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারাত্মক জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ৯ জনকে। ছোটখাট দুর্ঘটনা রোজই ঘটছে। নিত্যযাত্রীদের তরফে নানা মহলে আর্জি জানানো হলেও যানজট রুখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হননি বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, পুরসভা, পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যে চাপানউতোরও চলছে দেখে বাসিন্দাদের ক্ষোভ বাড়ছে। ইতিমধ্যে পুরসভার পক্ষ থেকেও পুলিশকে সব জানানো হয়েছে। বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাস বলেন, “যানজটের সমস্যা দেখার দায়িত্ব পুলিশের। শহরের কিছু এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।” দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগ বলেন, “শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট পার্কিং জোন না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।” তবে আরএসপি পরিচালিত পুরসভার কর্তারা যাই বলুন, শহরের বাসিন্দাদের একাংশ যানজটের সমস্যার জন্য তাঁদেরই দুষছেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই পুরসভা গত ৫০ বছরে বাজার এলাকায় পার্কিং জোন গড়তে পারেনি। বেআইনি দখলদারদের উচ্ছেদ করেনি। ওই অবস্থার কারণে রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে রিকশা, বাইক ও ছোট গাড়ি। সম্প্রতি পুরকর্তারা সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা এবং বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, অফিস ও বাজার এলাকায় বড় ছোট গাড়ি পার্কিং এবং ট্রাক্টর চলাচলের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কাছারি রোড, ডানলপ মোড়, সাধনা মোড়, সাড়ে তিন নম্বর মোড়, বিশ্বাসপাড়া মোড় হয়ে বাসস্ট্যাণ্ড পর্যন্ত রাস্তায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রাক ও ট্রাক্টর ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে পণ্য ওঠানামা করে যাচ্ছে। ইঁট, বালি, গোবর বোঝাই ট্রাক্টর চকভবানি কালীবাড়ি এলাকায় থানার সামনে দিয়ে লাফাতে লাফাতে ছুটে চলছে। শুধু কী বেসরকারি গাড়ি! পুলিশ ও বিএসএফের গাড়ি রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকায় ডানলপ মোড়ে প্রতি দিন যানজটের সমস্যা হচ্ছে।
যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের ফলে দুর্ঘটনা লেগেই আছে ওই শহরে। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু তার পরেও কেন কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না সেটাই বাসিন্দারা বুঝতে পারছেন না। প্রশ্ন উঠছে পুরসভা কী শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞার নোটিস দিয়েই দায় এড়িয়ে যেতে পারে! নাগরিকদের প্রতিদিনের সমস্যা সমাধানে তাঁদের কিছু করণীয় নেই? স্থানীয় বাসিন্দাদের মতো ক্ষোভ আড়াল করেননি বালুরঘাটের মহকুমাশাসক দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শুধু নোটিশ জারি করে পুরসভা দায় এড়াতে পারে না। নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্য দেখার দায়িত্ব পুরকর্তাদের প্রধান কাজ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবহণ দফতরকে অভিযান চালাতে বলা হবে। পুরসভাকেও ব্যবস্থা নিতে হবে।” |