শয্যায় কাটা পা ও পেটে ‘গ্যাস’ |
‘ডু ইট নাউ’ স্বাস্থ্য-তদন্তে, সাসপেন্ড দুই ডাক্তার |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
অভিযোগ ফাইলবন্দি করে বছরের পর বছর ফেলে রাখার দিন শেষ। যে কোনও নালিশের দ্রুত তদন্ত এবং ঝটিতি ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য-কর্তাদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং এরই প্রেক্ষিতে এ বার ‘ডু ইট নাও’-এর নজির গড়ল স্বাস্থ্য দফতর।
প্রথম ধাপেই ‘কর্তব্যে অবহেলা’ ও রোগীর প্রতি ‘অমানবিক’ আচরণের অভিযোগে সাসপেন্ড করা হল জেলার দুই চিকিৎসককে। এক জন কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক, অন্য জন মালদহ জেলা হাসপাতালের অর্থোপেডিক শল্যচিকিৎসক। স্বাস্থ্য-কর্তারা জানিয়েছেন, অভিযোগের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে এঁরা সরকারি হাসপাতালে তো বটেই, বাইরেও রোগী দেখতে পারবেন না।
কী নালিশ ওঁদের বিরুদ্ধে?
প্রথম জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এক প্রসূতির পেট কাটার পরে বলেন, পেটে রয়েছে গ্যাস। অথচ পরে ওই হাসপাতালেরই ডাক্তারেরা জানান, মহিলার পেট থেকে মৃত ভ্রূণ বেরিয়েছে। দ্বিতীয় জন আহত এক যুবকের দু’টি কাটা পা সংরক্ষণের বদলে রোগীর বালিশের নীচে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। টানা পাঁচ ঘণ্টা ওই কাটা পা দেখে আশপাশের রোগীরাও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
২৪ অগস্ট মালদহ স্টেশনে লাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারির বাসিন্দা সোরেন টুডুর দু’টো পা-ই হাঁটুর নীচ থেকে কাটা যায়। মালদহ সদরের ইমার্জেন্সিতে ড্রেসিং করে তাঁকে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। অভিযোগ, কর্তব্যরত অর্থোপেডিক সার্জন সন্দীপ চক্রবর্তী পা জোড়া লাগানোর চেষ্টা তো করেনইনি, তা ময়না-তদন্তেও পাঠাননি। উল্টে সে দু’টো রোগীর বেডেই রেখে দেন!
এতে হইচই শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, ডাক্তারের উদাসীনতা কোন পর্যায়ে গেলে তিনি এমন আচরণ করতে পারেন? স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় সন্দীপবাবুকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের তদন্ত হলেও নিষ্পত্তি হয়নি। একাধিক বার চেষ্টা করেও সন্দীপবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
জুনের গোড়ায় কৃষ্ণনগর সদরে ঊষা দুর্লভ নামে এক প্রসূতির পেট কেটে ‘গ্যাস’ পেয়েছিলেন স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক শুভেন্দু দত্ত। পরে ওই হাসপাতালই জানায়, উষাদেবীর পেট থেকে সাড়ে সাত মাসের মৃত ভ্রূণ বেরিয়েছে! সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ করেন ঊষাদেবী ও তাঁর স্বামী। প্রাথমিক তদন্তে শুভেন্দুবাবুকে ‘দোষী’ বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য-কর্তারা। দফতরের খবর, শুভেন্দুবাবুর বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি। শুভেন্দুবাবু বরাবরই নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। সাসপেনশনের চিঠি পেয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আগের বক্তব্যেই স্থির রয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় কথা বলে দেখব, কী করা যায়।” স্বাস্থ্যভবনের বক্তব্য: মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনে করেন, এমন সব গুরুতর অভিযোগের পরেও অভিযুক্ত কাজ করে গেলে সরকারের প্রতি জনতার আস্থা ধাক্কা খাবে। তাই চিকিৎসায় গাফিলতির তদন্তে আর আপস বা ঢিলেমির প্রশ্ন নেই।
|