অবাধে কাঠ চুরি ও হাতির উপদ্রব দক্ষিণবঙ্গে বন দফতরের প্রধান দুই সমস্যা সমাধানে এ বার উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য। বুধবার জঙ্গলমহলের তিন জেলার বনাধিকারিকদের নিয়ে মেদিনীপুর ডিএফও অফিসে বৈঠক করেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। ছিলেন অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল রাকেশ সিংহ। বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, “কাঠ চুরি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর হাতির উপদ্রব ঠেকাতে ত্রিপুরা থেকে ৩টি কুনকি হাতি নিয়ে আসা হচ্ছে।”
যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিস্তারিত জানাতে হবে বলে মঙ্গলবারই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঠ চুরি আটকাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সব কাজ যথাযথ ভাবে হচ্ছে কি না, তার নজরদারি প্রয়োজনে তিনি নিজেই করবেন। এর পরই এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বনাধিকারিকদের মেদিনীপুরে বৈঠক করেন বনমন্ত্রী। উন্নয়নের রূপরেখা নির্দিষ্ট করা হয়। অক্টোবর থেকে এই রূপরেখা মেনে কাজ করবে বন দফতর। বন দফতরের সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করবে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর। এ দিনের বৈঠকে হাজির পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা জানান, বন দফতর পরিকল্পনা তৈরি করলে, তাঁরা অর্থ সাহায্য করবেন। |
দীর্ঘদিন অশান্ত ছিল জঙ্গলমহল। সেই সুযোগে বেড়েছে অবাধে কাঠ চুরি। পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন মাসে ৭০০ কিউবিক মিটার চোরাই কাঠ উদ্ধার করেছে বন দফতর। বাজারদর প্রায় ১ কোটি টাকা। বনমন্ত্রীর অভিযোগ, “আগে সরকারি মদতে কাঠ পাচার হত। তাই জঙ্গল শেষ হয়ে যাচ্ছিল। কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছিল। এত দিনের অভ্যেস সহজে বদলানো যাবে না। তবু কাঠ চুরি অনেকটাই কমেছে। তবে এতে আমরা সন্তুষ্ট নয়। কাঠ চুরি রোধে আরও কঠোর হবে সরকার।” বিনা অনুমতিতে কোনও কাঠ কল চালানো যাবে না বলে মন্ত্রী জানান। নভেম্বরের মধ্যেই প্রতিটি কাঠ কলকে বন দফতরের অনুমতি নিতে হবে। না হলে অবৈধ কাঠ কল বন্ধ করে দেওয়া হবে। কাঠ চুরি বন্ধে বন দফতরের পরিকাঠামো উন্নয়নও প্রয়োজন। কারণ, পর্যাপ্ত কর্মী ও গাড়ির অভাবে তল্লাশির কাজে অসুবিধা হয়। মন্ত্রীকে এই সমস্যা জানিয়েছেন বন-কর্তারা। মন্ত্রীর আশ্বাস, “কর্মী ও গাড়ির ঘাটতি পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দক্ষিণবঙ্গে হাতির উপদ্রবও দিন দিন বাড়ছে। দলমা থেকে আসা হাতির দলের দাপট তো রয়েইছে। তার উপর দলমার দল থেকে প্রতি বছরই একটি-দু’টি করে হাতি থেকে যাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গে ‘রেসিডেন্সিয়াল’ হাতির সংখ্যাও বেড়েছে। তাদের দাপটেও মাঝেমধ্যেই নাভিশ্বাস ওঠে জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামবাসীদের। গত বছর আবার দলমা থেকে আসা হাতির দল ফিরতেই পারেনি। জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছে তারা। ফসল খেয়ে, ঘরবাড়ি ভেঙে ক্ষতির বহর বাড়িয়েছে। হাতির হানায় প্রাণহানিও হয়েছে একাধিক। সমস্যা সমাধানে ত্রিপুরা থেকে কুনকি হাতি আনছে বন দফতর। মন্ত্রী বলেন, “আমাদের রাজ্যে কুনকি হাতির সংখ্যা খুবই কম। যে ক’টি রয়েছে তা-ও উত্তরবঙ্গে।” দক্ষিণবঙ্গের জন্য যে ৩টি কুনকি হাতি আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইতিমধ্যে তাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। খাদ্যাভ্যাস, কতটা তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, আরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন কি না, সবই জানতে চেয়েছে রাজ্য বন দফতর।
সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি উন্নয়নেও জোর দেওয়া হচ্ছে। গরিবদের জন্য বাড়ি তৈরি, একশো দিনের প্রকল্পে সেচ বাঁধ তৈরি, কালভার্ট তৈরি, রাস্তা তৈরি-সহ নানা কাজ করে বন দফতর। এ সবের পাশাপাশি শালপাতার থালা তৈরি করে গরিব মানুষকে স্বনির্ভর করা, ভেষজ চাষ-সহ আরও নানা প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোথায় কোন প্রকল্প করা সম্ভব, এর জন্য কত খরচ হতে পারে, বন বিভাগের কাছে তার রিপোর্ট চেয়েছেন মন্ত্রী। |