সম্পাদক সমীপেষু ...
পথ-দুর্ঘটনা প্রতিরোধকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হোক
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন সরকার ‘মরচে ধরা রাজ্যে’ (২৬-৮) ১০০ দিন পূর্ণ করল। আর সে দিনই ভয়ঙ্কর একটা খবর চোখে পড়ল। ১৩০ কিলোমিটার বেগে ছুটে আসা একটি বাস দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে ধাক্কা দিলে বাসটিতে আগুন লেগে যায়। সেই আগুনে নাবালিকা মেয়ে ও মা-সহ চার জন ঝলসে পুড়ে মারা যায়। আহত আরও ৩৩ জন। প্রসঙ্গত বলি, ৫ বছর আগে রাস্তায় নেমে আমরা পথ-দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে শুরু করি। দেখি, পুলিশ প্রশাসন বা ঠান্ডা ঘরে বসে থাকা আমলাদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব চিত্রের এতটুকু মিল নেই। শুধু বেপরোয়া ড্রাইভিং বা রেষারেষিই নয়, পথ-নৈরাজ্যের পিছনে রয়েছে অনেক কারণ। প্রথমে আমরা ক্যামেরা নিয়ে হাজির হই কলকাতা পুলিশ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ১০টি মোড়ে। দেখা যায়, পথচারীদের রাস্তা পার হওয়ার জন্য সিগন্যাল সবুজ থাকে কোথাও মাত্র ১ সেকেন্ড বা বড়জোর ৪ সেকেন্ড। দেখি, জেব্রা ক্রসিংয়ের উপরেই গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশের চোখের সামনে। নিয়ম ভেঙে পথচারী রাস্তা পার হতে বাধ্য হয় গাড়ি-ঘোড়ার মধ্য দিয়েই।
গোটা বিশ্বে যেখানে জেব্রা ক্রসিংয়ে পা-ফেলা মাত্রই দূর থেকে আসা গাড়ি তার গতি কমিয়ে দাঁড়িয়ে যায়-- এখানে কোনও গাড়ি-চালকই এই নিয়মটার তোয়াক্কা করেন না। জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হওয়ার চাইতে ‘অন্য ভাবে’ পার হওয়াটাই নিরাপদ বলে মনে করেন পথচারীরা। অথচ প্রতি বছর পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহে ঘটা করে ব্যবহার করা হয় সেই ক্লিশে হয়ে যাওয়া স্লোগান জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হন। গাড়িতে বসে অনেক সময়ই মনে হয়, পথচারীরা নিয়ম ভেঙে সিগন্যাল খোলা অবস্থায় দৌড়ে রাস্তা পার হন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু কেন তাঁরা এ ভাবে রাস্তা পার হতে বাধ্য হন তা আমরা ক্যামেরা-বন্দি করে রেখেছি। গাড়ি যখন সিগন্যালে দাঁড়িয়ে যায়, তখন পথচারীরা রাস্তা পার হন তাঁর স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি থেকে। কিন্তু দেখা যায়, সেই সময়ে পথচারীদের জন্য সিগন্যাল সবুজের বদলে লালই রয়ে গেছে। এমনকী, পথচারীর সিগন্যাল সবুজ হওয়া সত্ত্বেও ডান দিক থেকে আসা গাড়ি ক্রমাগত চলতে থাকে। কারণ, সেই লেন থেকে আসা গাড়ির সিগন্যাল তখন সবুজ।
আগে দেখতাম, কোনও মোড়ে পুলিশ থাকলে তাঁরাই হাত দেখিয়ে গাড়ি থামিয়ে পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পার করে দিতেন। এখন এ দৃশ্য বিরল। এই সবই আমরা দীর্ঘ দিন ধরে বামফ্রন্ট সরকারকে জানিয়ে এসেছি। আমাদের সমীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকা পাশাপাশি সমীক্ষা করে একই মত পোষণ করে। ‘নো ওয়ান কেয়ারস ফর পেডেস্ট্রিয়ানস’ (১৩-৫-২০০৮)। আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই, রেষারেষি বা বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ করতে বাসে স্পিড গভর্নর বসানোর প্রস্তাবটি কেন মহাকরণের ঠান্ডা ঘরে পড়ে রয়েছে। মহারাষ্ট্রে অ্যাকসিডেন্ট প্রিভেনশন কমিটি বসানো হলে এখানে কেন তা হবে না, তা-ও জানতে চেয়েছি।
বামফ্রন্ট সরকার আমাদের সঙ্গে সামান্য সময়ের জন্য আলোচনায় বসার ফুরসতটুকু জোগাড় করে উঠতে পারেনি। আমরা কিন্তু পথ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের ১০ দফা সমাধানসূত্র নিয়ে এখনও তৈরি। নতুন সরকার কি একবার বসে দেখবে আমাদের সঙ্গে?
লন্ডন ও কলকাতা
দু’বছর আগে ক’দিনের সফরে লন্ডনের পরিচ্ছন্নতা, সময়ানুবর্তিতা, পরিষেবা এবং মানুষদের সৌজন্যবোধ, ধৈর্য, শান্তিপ্রিয়তা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। এ বার দু’ মাসের জন্য লন্ডন ঘুরে এলাম। আগের অনুভূতি বদলে গেছে বলব না। তবে কিছু নতুন অভিজ্ঞতাও হয়েছে। হাইওয়াইকম্ব শহরতলিতে ওয়াই নদীর ধারে গড়ের মাঠের মতো বিশাল এক পার্কে রোজ হাঁটতে যেতাম। আমার সঙ্গে যাঁদের দেখা হত তাঁদের মধ্যে যাঁরা একটু বয়স্ক পুরুষ বা মহিলা, তাঁরা প্রত্যেকে একটু হেসে ‘গুড মর্নিং’ বলতেন। কিন্তু অল্প বয়সের ছেলেমেয়েরা প্রায় কেউ-ই এটা করত না। মেয়েকে বলেছিলাম, ‘দেখিস আর বছর কুড়ি পরে যখন এখনকার বয়স্করা থাকবেন না, লন্ডনের শান্তি শৃঙ্খলার চেহারা পাল্টে যাবে’। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকের কলকাতার মানুষদের যেমন দেখে গিয়েছিলাম, শতাব্দীর শেষে ফিরে ঠিক এ রকম অবক্ষয় লক্ষ করেছি। আর, লন্ডনে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়েছে। পাকিস্তান আতঙ্কবাদের আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠার ফলে সমস্ত এশিয়াবাসীদের ‘পাকি’ বলে সন্দেহ করা একটা নতুন সামাজিক সমস্যা। সে তুলনায় সাদা-কালো সমস্যা কিন্তু সচেতন এবং কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। যে-দিন দাঙ্গা বাধে সে-দিন লন্ডন ছেড়েছিলাম। হিথরোতে কিছু বুঝতে পারিনি। দমদমে প্রিপেড ট্যাক্সির জন্য তিন ঘণ্টা দাঁড়াতে হল। বৃষ্টির জন্য গাড়ি কম। যাও বা এল সে বেহালা গেল না জলের ভয়ে। সে দিন বাড়ি পৌঁছনো হল না।
বিদ্যালয়ে সংস্কৃত আবশ্যিক হোক
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচিত হচ্ছে। গত সরকারের আমলে স্কুল পর্যায়ে সংস্কৃত শিক্ষা প্রায় তুলেই দেওয়া হয়েছে। পুরুতগিরি করা ছাড়া সংস্কৃত শেখার কোনও উপযোগিতা নেই এমন হাস্যকর যুক্তিও শোনা গেছে আগের সরকারের কর্ণধারদের মুখে। প্রকৃতপক্ষে কিন্তু সংস্কৃত ভাষা শেখার প্রয়োজন আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। কারণ,
১) সংস্কৃত ব্যাকরণের জ্ঞান না-থাকলে বাংলা ব্যাকরণও ঠিক মতো শেখা যায় না। ইদানীং পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভুল বাংলা লেখা বিশেষত বানান ভুল খুব বেড়ে গিয়েছে।
২) সংস্কৃত জানা থাকলে উপনিষদ, শ্রীমদ্ভাগবদগীতা, রামায়ণ, মহাভারত ও বিভিন্ন সংস্কৃত নাটক ও কাব্য অনুবাদের অনুধাবন ও রসাস্বাদন অনেক সহজ হয়।
৩) যাঁরা ভারতীয় দর্শন, ইতিহাস, বাংলা সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চতর পর্যায়ে পড়াশোনা করেন, গবেষণা করেন, তাঁদের সংস্কৃত জানা থাকলে অনেক সুবিধা হয়।
৪) সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে উচ্চতর পর্যায়ে পড়া, গবেষণা ও পড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। বিশেষত সর্বভারতীয় স্তরে।
ভুবনায়নের যুগে প্রতিটি দেশের মানুষকেই তার দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্বন্ধে সচেতন হতে হয়। সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও আত্মবিশ্বাস ও শক্তি দেবে এবং আজ যে সার্বিক শ্রদ্ধাহীনতা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে গ্রাস করেছে তার থেকেও মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। তাই দশম শ্রেণি অবধি সংস্কৃতকে আবশ্যিক বিষয় করা হোক।
শৌচাগার বেসরকারি হোক
প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের শৌচাগারগুলি অত্যন্ত নোংরা। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা সাধারণত রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের দোষী করে থাকেন। এই অজুহাত দিয়ে ওই নারকীয় অবস্থার ব্যাখ্যা চলে না। আমাদের প্রস্তাব, সরকারি হাসপাতালের শৌচাগার পরিষ্কার রাখা ও পানীয় জল সরবরাহের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়া হোক।
নিরাপদ?
কলকাতা’র প্রথম পাতায় প্রকাশিত “রাজনীতির ‘শোভন-গ্রাস’, ঢাকাই পড়েছে হেরিটেজ” (১৪-৭)-এর সঙ্গে যে ছবি ছাপা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ধর্মতলায় একটি হোর্ডিং খোলার কাজ করছেন কয়েক জন শ্রমিক। কারও মাথায় হেলমেট নেই। আশঙ্কা হয়, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে লোহার ফ্রেমে নিজেদের বেঁধে রাখার ব্যবস্থাও সম্ভবত ছিল না। অন্তত ছবিটি দেখলে বোঝা যায়, ছিল না। এই অবস্থায় থেকে কাজ করতে গিয়ে কোনও ভাবে নীচে পড়লে হয় মৃত্যু অবধারিত। হেরিটেজ এলাকার মুখ যাঁরা পরিষ্কার করছেন, তাঁদের নিরাপত্তা বিষয়ে এ হেন উদাসীনতা কাম্য নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.