আদ্রায় রেল ও এনটিপিসি’র যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত জনশুনানি ঘিরে উৎসাহ দেখা গেল। মঙ্গলবার আদ্রা রেলওয়ে গালর্স হাইস্কুলের প্রেক্ষাগৃহে এই শুনানি হয়। শুনানি শেষে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) জয়ন্তকুমার আইকত বলেন, “দু’বছরে ছ’টি প্রকল্পের জন্য শুনানিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু, এই প্রকল্প ঘিরে যা সাড়া পেলাম, তাতে বাসিন্দাদের প্রকল্প নির্মাণে অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব দেখা গিয়েছে।”
আদ্রার উপকণ্ঠে গগনাবাইদ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মনপুরাতে ১৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ছে এনটিপিসি ও রেল। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০০০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে রেল বাজেটে এই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা বিভাগের আনাড়াতে প্রকল্প নির্মাণে মৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় দুটি সংস্থার মধ্যে। |
জমির প্রয়োজন প্রায় ১০০০ একর। রেলের নিজস্ব জমিই রয়েছে ১০৬২ একর। প্রকল্প নির্মাণের জন্য স্থানীয় মনপুরা জঙ্গলে গাছ কাটা নিয়ে সিপিএমের একাংশ বিতর্ক তুলেছিল। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা এনটিপিসি’র আধিকারিক অনুত্তম চৌধুরী বলেন, “মনপুরার সব গাছ কাটার দরকার হবেনা। সেখানে ফাঁকা জায়গাও রয়েছে। যে সংখ্যক গাছ কাটা হবে, সেই সংখ্যক গাছ রেলের পড়ে থাকা জমিতে তত সংখ্যক গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে।”
স্থানীয় তৃণমূল নেতা সন্তোষ চট্টোপাধ্যায়, হাজারি বাউরিরা বলেন, “এলাকার বাসিন্দারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রকল্প নির্মাণের জন্য বাড়তি জমির প্রয়োজন হলে তাঁরা তা দেবেন।” এনটিপিসি’র কর্তারা বলেন, “এই প্রকল্প নিয়ে মানুষের খুব উৎসাহ দেখলাম। আশাকরি পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র পেতে দেরি হবেনা।”
মনপুরার জঙ্গলের পাশেই রয়েছে সাহেববাঁধ। স্থানীয় বাসিন্দা সত্যজিত চট্টোপাধ্যায়ের গলায় সেই জলাশয়ের পরিবেশ নিয়ে অন্য সুর। শুনানিতে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “সাহেববাঁধে গত বছরেও কয়েক হাজার পরিযায়ী পাশি এসেছিল। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে এই পাশিদের আসা বন্ধ হবেনা তো?” এনটিপিসি’র তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, অত্যাধুনীক পদ্ধতিতে কম কয়লা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। ফলে, ছাই কম বের হবে, গ্যাস নির্গমণও কম হবে। শুনানিতে রেল বোর্ডের ডিরেক্টর (ইলেকট্রিক্যাল) সুনীল কুমার, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মুখ্য বাস্তুকার তাপস গুপ্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে, স্কুল ছুটি দিয়ে জনশুনানির আয়োজন করায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, রেলের আরও তিনটি প্রেক্ষাগৃহ থাকতে স্কুলেই কেন শুনানি করা হল? আদ্রার ডিআরএম অমিতকুমার হালদার বলেন, “রেলের তরফে এই নির্দিষ্ট দিনেই আদ্রা শহরেই ভাল প্রেক্ষাগৃহে এই শুনানির আয়োজন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই স্কুলের প্রেক্ষাগৃহে শুনানির আয়োজন করা হয়।” তিনি জানান, অন্যকোনও ছুটির দিনে স্কুলে পড়ার ব্যবস্থা করে এ দিনের পড়ুয়াদের ক্ষতি পূরণ করা হবে। |