গঙ্গা এসে গিয়েছে একেবারে দোরগোড়ায়। তাই বিপদের আশঙ্কায় মঙ্গলবার থেকে অরঙ্গাবাদ বালিকা বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি দিয়ে দিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। সুতি ২ ব্লকের বিডিও সুকুমার বৈদ্য বলেন, “সোমবার রাত থেকে ভাঙন শুরু হওয়ার পরে স্কুল দু’টি কার্যত ঝুলে রয়েছে গঙ্গার উপরে। তিন তলা ভবন যে কোনও সময় গঙ্গা গর্ভে ভেঙে পড়তে পারে। তাই ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, সেচ বিভাগের গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ শাখার কর্মীরা এসে সকাল থেকেই স্কুলের সামনে বালি ও পাথর ফেলছেন। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সংশয় কাটেনি। সেচ দফতরের রঘুনাথগঞ্জ ২ সাব ডিভিশনের গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগের সহকারী বাস্তুকার জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ দেখভাল করেছেন। তিনি বলেন, “এলাকাটি বরাবরই ভাঙন প্রবণ। ভাঙন রোধের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্ষার জন্য জল বেড়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বর্ষার পরেই কাজ শুরু হওয়ার কথা।” এই অবস্থাতে সোমবার রাত থেকে আচমকা ভয়ানক শব্দে ভাঙন শুরু হয়ে যায়। গঙ্গার জল ধাক্কা দিচ্ছে পাড়ের মাটিতে। সোমবার বিকেলেও স্কুলগুলি থেকে নদী ছিল ৫ মিটার দূরত্বে। |
কিন্তু এখন স্কুলের সঙ্গে গঙ্গার ব্যবধান মাত্র কয়েক হাতের। জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, “জলের অন্তর্মুখী ধাক্কায় পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা বলা মুশকিল।” তিনি বলেন, “আপাতত জরুরি ভিত্তিতে পাথরের গুঁড়ো বস্তা করে একসঙ্গে তারের খাঁচায় পুরে নদীতে ফেলা হচ্ছে। তাতে কিছুদিনের জন্য ভাঙন রোখা যাবে। কিন্তু বিপদের আশঙ্কা কাটবে না। তাই স্কুল ভবনটি নিয়ে সংশয় তো রয়েইছে।”
অরঙ্গাবাদ বালিকা বিদ্যালয়ের ৩৫৬৮ জন ছাত্রী। তিন তলা ভবনে ৩২টি ঘর রয়েছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শুভ্রা সিংহ বলেন, “স্কুল এসে ভাঙনের পরিস্থিতি দেখে ছাত্রীদের ক্লাস করানোর ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব হয়নি।” সব ঘটনাই পরিচালন সমিতিকে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় তার উপরেই নির্ভর করছে স্কুল কবে খুলবে। আপাতত ছাত্রীদের স্কুলে আসতে বারণ করা হয়েছে।” পাশেই প্রাথমিক স্কুলটিরও তিনতলা ভবন। ছাত্রছাত্রী পাঁচশোরও বেশি। শিক্ষক নিজামুদ্দিন শেখ বলেন, “এখন ভরা গঙ্গা। স্কুলের সামনেটা পাথরে বাঁধানো হয়েছে। কিন্তু তার তলা দিয়ে ধাক্কা লাগছে পাড়ে। মাটি সরে যাচ্ছে। ভাঙনের অবস্থা দেখে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।” বিডিও সুকুমারবাবুর কথায়, “পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। গঙ্গায় এখন জল ভর্তি। এই অবস্থায় ভাঙন রোধের কাজ কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি আমরাও।” |