চিতাবাঘের আতঙ্ক ঘুম কেড়ে নিয়েছে কাছাড় জেলার ধলাই-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজনের। পক্ষকাল ধরে ধলাই, ধোয়ারবন্ধ ও দরগাকোনায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন অঞ্চলে ঘোরাফেরা করছে একটি চিতাবাঘ। বন দফতর জানাচ্ছে, জীবটি মানুষখেকা নয়, তাকে অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এই আশ্বাসবাক্যে বিশেষ ভরসা পাচ্ছেন না এলাকার অধিবাসীরা। বিশেষ করে ভাগা, দার্বি ও বড়জালেঙ্গায় সন্ধ্যা হলেই যে যার ঘরে ঢুকে পড়ছেন। এমনকী, উঠোন পেরিয়ে এ-ঘর ও-ঘরও নয়। কারণ কয়েক জায়গাতেই চিতাবাঘ গৃহস্থের গোয়ালঘর থেকে টেনে নিয়ে গিয়েছে গরু।
চিতাবাঘটিকে ধরতে গুয়াহাটি থেকে আনা হয়েছে বিশেষ ফাঁদ। সামনে ছাগলের টোপ রেখে বড়জালেঙ্গায় দিন কয়েক আগে পাতাও হয় সেই ফাঁদ। গভীর রাতে একটা আওয়াজ পেয়ে এলাকাবাসী ধরে নেন, ফাঁদে পড়েছে চিতাবাঘ। কিন্তু পরে ভোরবেলায় দেখা যায়, ফাঁদে পড়েছে একটি বোকা শিয়াল। সকালে শিয়ালটিকে ছেড়ে দেন বনকর্মীরা। এখনও ফাঁদটি পাতা রয়েছে বড়জালেঙ্গায়। কিন্তু রবিবার রাতে দেখা যায়, চিতাবাঘটি ঘোরাফেরা করছে দার্বি চা বাগান অঞ্চলে। পরে খবর মেলে, জীবটি বাগানের ৮ নম্বর সেকশনে রাধেশ্যাম প্রজাপতির গোয়ালঘরে ঢুকে একটি গরুকে মেরে খেয়েছে। বনকর্মীদের আশা, ঘুরেফিরে বড়জালেঙ্গাতেই আসবে চিতাবাঘটি। আর তখনই ধরা পড়বে পেতে রাখা ফাঁদে।
কিন্তু আচমকা লোকালয়ে চিতাবাঘের হানা কেন? ফরেস্ট প্রোটেকশন স্কোয়াডের রেঞ্জার নবেন্দু দে বলেন, “জঙ্গলে ছোট জন্তু-জানোয়ারের সংখ্যা আগের থেকে এখন অনেক কমে গিয়েছে। এ কারণেই খাদ্যের সন্ধানে শ্বাপদরা ঢুকে পড়ছে লোকালয় সংলগ্ন এলাকায়। এই অঞ্চলে এমন ঘটনা একেবারে নতুন কিছু নয়। বছরে দু’এক বার চিতাবাঘ আসার কথা আগেও শোনা গিয়েছে। তবে এ বার চিতাবাঘ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নাগাড়ে ক’দিন থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক এতটা প্রবল।” নবেন্দুবাবু অবশ্য দাবি করেন, অত ভয়ের কিছু নেই। কারণ, চিতাবাঘটি নরখাদক নয়। বরং মানুষকেই সে ভয় পায়। তবে এলাকাবাসীর বক্তব্য, আত্মরক্ষার জন্য চিতাবাঘটি সামনে এসে পড়া মানুষকেও যে রেয়াত করবে তার নিশ্চয়তা কোথায়? আর তাই তো সন্ধ্যার আঁধার ঘনালেই মানুষজন সব কাজ সেরে ঢুকে পড়ছেন ঘরে। সেধে কে আর বাঘের কামড় খেতে চায়! |