বিতর্ক...
স্কুলে পরীক্ষা উঠে গেলে ক্ষতি নেই
পক্ষে
স্কুলছুটরা তা হলে ফিরে আসবে
শিক্ষক হিসেবে আমি প্রত্যক্ষ করেছি, শিক্ষার্থীদের ভীতি কাটাতে, চাপ কমাতে যে ‘ইউনিট টেস্ট’ চালু রয়েছে, তা বহু ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের ওপর প্রবল মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে যার সর্বশেষ ফলাফল হচ্ছে স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধি। তাই আরও বেশি পরিমাণ শিক্ষার্থীকে (দেশের জনসংখ্যা ১২১ কোটির বেশি) শিক্ষার আঙিনায় ধরে রাখার জন্য স্কুলের নিয়মমাফিক পরীক্ষা উঠে গেলে বিশেষ কোনও ক্ষতি হবে না। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী, যাদের প্রথাগত শিক্ষায় আগ্রহ নেই, তাদের বৃত্তিমুখী শাখাতে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে, যাতে তারা ভবিষ্যৎ-জীবনে স্বাবলম্বী হয়ে দেশের সেবা করতে পারে। এতে শিক্ষার মান কমবে না, বরং উন্নত মানব সম্পদ সৃষ্টির পথে আমরা কয়েক ধাপ অগ্রসর হব। কারণ, ভারতকে উচ্চ মেধার সাহায্যে কখনওই উন্নত দেশে উন্নীত করা যাবে না দরকার নিম্ন ও মধ্য মেধার সম্মিলিত অবদান।
স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করে পরীক্ষার দিকে নজর রেখে, নম্বরের তাগিদে। দৈনন্দিন পড়ার চেয়ে পরীক্ষা-ভিত্তিক সাজেশন করে পড়া শুরু হয় টিউশনিতে। ফলে, ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের চেয়ে টিউশনিতে টানও বেশি। স্কুল পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষা শেষের সঙ্গে সঙ্গে সেই পাঠও শেষ। তার পর আর তা মনে রাখার দায়-দায়িত্ব থাকে না। অর্থাৎ, পড়াশোনা যতটা না আনন্দদায়ক এবং প্রয়োজনীয়, তার চেয়ে বেশি পরীক্ষায় নম্বর পাওয়ার কষ্টকর প্রচেষ্টা। অথচ ভূতের গল্প, কল্পবিজ্ঞানের গল্প, ছড়া, ম্যাজিক, খেলাধুলা-সহ বিভিন্ন ধরনের বই অনেকের পড়তে ভাল লাগে। কিন্তু তা অপ্রয়োজনীয় বলে ধরে নেওয়া হয়, কারণ এতে পরীক্ষায় নম্বর নেই। তাই ছাত্রছাত্রীদের মেধা ও উৎকর্ষ বাড়াতে এবং টিউশনির রমরমা বাজার কমাতে স্কুলে পরীক্ষা নামের বস্তুটি উঠে যাওয়াই শ্রেয়। পড়াশোনার মূল্যায়ন করতে উপস্থিতি, পড়া প্রস্তুতি, পরিচ্ছন্নতা, আচরণ, অভিজ্ঞতা সহ সব কিছুকে ভিত্তি করে গ্রেডেশন চালু থাকাই যথেষ্ট। তাতে পড়ার সঙ্গে চরিত্র গঠনের ভিতও তৈরি হতে পারে।
পরীক্ষা উঠে গেলে স্কুলছুট ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে উৎসাহিত হবে। গ্রামাঞ্চলে ‘ফেল’ করলেই শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজে লাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কমবে। এক দরিদ্র ঘরের শিক্ষার্থী স্কুলে এসে যদি কুসঙ্গ এড়িয়ে শুধু ভদ্র আচরণ ও শৃঙ্খলার পাঠটুকুও নেয়, তা সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনকই হবে। মানবিকতা আমরা হারাতে পারি, নিজেদের স্বার্থবুদ্ধি তো হারাইনি। নিজেদের ভালর জন্যও যে এই সব শিশুর স্কুলের আওতায় আসা দরকার, সেটা কি আমরা বুঝব না?
পরীক্ষা নেই, কিন্তু নিয়মিত ক্লাস তো আছে। এই অবস্থায় ক্লাস করতে করতে নিম্ন মেধার শিক্ষার্থীরা সমাজে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো নাম সই, হিসেব, সামান্য ইংরেজি যদি শিখে নেয়, তা হলেও অনেক বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

বিপক্ষে
আর, অষ্টম শ্রেণির পর কী হবে?
শিক্ষার মান উন্নয়নে স্কুলে পরীক্ষা অপরিহার্য। পরীক্ষা উঠে গেলে ছাত্রদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ কমে যাবে। ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বর্তমানে যেটুকু আছে, সেটুকুও থাকবে না। পরীক্ষার জন্যই ছাত্রদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা গড়ে ওঠে ফলাফল কে কত ভাল করতে পারে। পরবর্তী কালে সহজেই উচ্চশিক্ষার ভর্তি-পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হতে পারে।
সরকারি স্কুলে পরীক্ষা উঠে গেলেও বেসরকারি স্কুলে থাকবে। তাদের ব্যবসা রমরমিয়ে চলবে। ছাত্রদের মধ্যে দু’টি শ্রেণি তৈরি হবে:
১) আমরা (বেসরকারি স্কুলের ছাত্র),
২) ওরা (সরকারি স্কুলের ছাত্র)।
‘আমরা’ থেকে তৈরি হবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, প্রযুক্তিবিদ, রাজনীতিবিদ প্রভৃতি। আর ‘ওরা’ থেকে তৈরি হবে...?
বছরভর একক অভীক্ষা এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পরীক্ষাভীতি আর কাজ করে না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ছাত্রছাত্রীরা বরং নিজেরাই নিজেদের অগ্রগতি জানতে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী থাকে। কাজেই যে উদ্দেশ্য নিয়ে পরীক্ষা স্কুল থেকে উঠিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তার আদৌ প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে ‘পরীক্ষা’ ও ‘নম্বর’ শব্দ দু’টি অনুঘটকের কাজ করে। পরীক্ষা উঠে গেলে তারা পড়ার উদ্দেশ্য, প্রয়োজন ও আগ্রহ সম্পূর্ণ রূপে হারিয়ে ফেলবে। সর্বোচ্চ স্তরে ভর্তি ও চাকরির ক্ষেত্রে নম্বরই যেহেতু এখনও প্রাধান্য পায়, তাই বিদ্যালয় স্তরে পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। পরীক্ষা উঠে গেলে অভিভাবকরাও বেসরকারি স্কুলগুলিতে আরও বেশি করে ছুটবেন। কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটি বাড়ানোর দিকেই আমাদের নজর দেওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ ও পাশ-ফেলের প্রবর্তনা একান্ত ভাবে প্রয়োজন। তা হলে অন্তত অন্তঃসারশূন্য পঙ্গু প্রজন্ম তৈরি হবে না।

অক্টোবর মাসের বিতর্ক
আপনার চিঠি পক্ষে না বিপক্ষে, তা স্পষ্ট উল্লেখ করুন।
চিঠি পাঠান ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই ঠিকানায়
অক্টোবরের বিতর্ক,সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.