পথ দুর্ঘটনায় এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুর পরে বাস জ্বালিয়ে দিল ক্ষিপ্ত জনতা। পুলিশ গেলে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বর্ধমান শহরের মেহেদিবাগান। জি টি রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও র্যাফ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বাসে আগুন ধরানোর ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ। স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী শ্যামকুমার গুপ্ত (৫৫) সাইকেলে চেপে শহরেরই কল্যাণী মার্কেটে ওষুধ আনতে যাচ্ছিলেন। মেহেদিবাগানের কাছে জি টি রোডের বাঁকে বর্ধমান-বরাকর রুটের একটি বাস পিছনের দরজা খুলে লোক নামাতে নামাতে আসছিল। খোলা দরজার ধাক্কায় সাইকেল সমেত পড়ে যান শ্যামবাবু। বাসের পিছনের চাকা তাঁর উপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
|
খবর গিয়ে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ক্ষুব্ধ জনতা বাস ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরে পুলিশের সামনেই টায়ার এনে, পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ এগোতে গেলে উল্টে জনতাই তাদের ঘিরে ফেলে। পরে জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) অম্লানকুসুম ঘোষ বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তত ক্ষণে জি টি রোড কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। আটকে পড়েছে দমকলের ইঞ্জিনও। পুলিশকে লক্ষ করে উড়ে আসতে থাকে ইট।
এর পরেই পুলিশ ও র্যাফ লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে প্রায় ছাই হয়ে যাওয়া বাসটির আগুন নেভায়। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই বর্ধমান থানার আইসি ভবদের চক্রবর্তী বলেন, “কিছু লোক বাসটিতে আগুন ধরানোর সময়ে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ ওখানে ছিল না। তাই আটকানো যায়নি। থানা থেকে আসতে গিয়ে আমিও আটকে পড়েছিলাম।” দুপুর ২টোর পরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।
|
এলাকার ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই জায়গায় বারবার ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। স্থানীয় বাসিন্দা শিবু সিংহ বলেন, “এখানে একটি বিপজ্জনক বাঁক থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ দিন ধরে মেহেদিবাগান মোড়ে একটি সিগনাল পোস্টের দাবি জানাচ্ছি আমরা। কিন্তু দুর্ঘটনার পরে কয়েক দিন পুলিশ থাকে, তার পরে যে কে সেই!” আর এক এলাকাবাসী রবি গুপ্তের অভিযোগ, “যান নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থাই নেই। সংকীর্ণ রাস্তায় বাস দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে। তাতে বিপত্তি আরও বাড়ে। অফিসযাত্রী থেকে ছাত্রছাত্রী, সবাইকে তার মধ্যে দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।”
পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই জায়গায় যান নিয়ন্ত্রণের কী করে উন্নতি করা যায়, তা নিয়ে আমরা বৈঠক করব। বাসের চালক ও কর্মীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা পলাতক।” ১৮ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরে আট জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। |