অগস্টের প্রথম ১৫ দিনের অতিবৃষ্টি এবং বন্যার জেরই এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এর মধ্যে আবার দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুখীন দক্ষিণবঙ্গ। দুর্যোগের এক মাসের মধ্যে পুজোর মুখে ফের দুর্যোগের আশঙ্কায় প্রমাদ গুনছে রাজ্য প্রশাসন। ভরা ভাদ্রে বৃষ্টি হতেই পারে। কিন্তু নিছক বৃষ্টি তো নয়, একটি নতুন ঘূর্ণাবর্তই চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে হাওয়া অফিসের।
রবিবার সকাল থেকেই কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার আকাশ ছিল মেঘলা। এখানে-ওখানে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিও হচ্ছিল মাঝেমধ্যে। বিকেলের পরেই বৃষ্টি বাড়তে থাকে। তার সঙ্গে যোগ দেয় ঝোড়ো হাওয়া। রাত যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হাওয়ার গতিও। শনিবার সারা দিন অত্যন্ত গুমোট ছিল। ভাদ্রের ‘পচা’ গরমে হাঁসফাঁস করতে হয়েছে মানুষকে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় আমূল বদলে গিয়েছে আবহাওয়া।
কেন এই পরিবর্তন?
রবিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া দফতরের উপগ্রহ-চিত্রে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূল ঘেঁষে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। আর তার জেরেই পরিমণ্ডলে ঢুকেছে প্রচুর জলীয় বাষ্প। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, রবিবার সকালে ঘূর্ণাবর্তটি
নেহাতই নিরীহ ছিল। কিন্তু পরবর্তী ১২ ঘণ্টায় সেটি নিজের শক্তি বহু গুণ বাড়িয়ে নিয়েছে। বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি দেখে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণাবর্তটির নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এবং সে-ক্ষেত্রে দুর্যোগ আরও বাড়বে।
|
মেঘে ঢাকা। রবিবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র |
ইতিমধ্যেই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছে আবহাওয়া দফতর।
ঘূর্ণাবর্তটি এখন যে-অবস্থায় রয়েছে, তাতে আবহাওয়ায় কী ধরনের পরিবর্তন হতে পারে?
আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ওই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে উপকূল এলাকায় তীব্র হাওয়া বইবে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা তেমন নেই। আজ, সোমবার সারা দিন ঝিরঝিরে বৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণাবর্তের শক্তি বাড়লে তীব্রতা বাড়বে হাওয়ার।
শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্তটি শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে পারে কি না, সেই ব্যাপারে অবশ্য এ দিন নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি আবহবিদেরা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “বঙ্গোপসাগরের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তটি ক্রমশই শক্তি বাড়াচ্ছে। তার ফলে সেটি নিম্নচাপে পরিণত হতে চলেছে।
তবে নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে কি না, এখনই তা বলা যাচ্ছে না।” তিনি জানান, তাঁরা দুর্যোগের ব্যাপারে উপকূল অঞ্চলের সব জেলাকে সতর্ক করে দিয়েছেন। ঘূর্ণাবর্তটির গতিপ্রকৃতির উপরে কড়া নজর রাখছে আবহাওয়া দফতর।
অগস্টের প্রথম দু’সপ্তাহের অতিবৃষ্টির ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি দক্ষিণবঙ্গ। সেই বর্ষণের দাপটে কোনও কোনও জেলা বন্যার কবলেও পড়েছে। অতিবর্ষণ ও বন্যায় ৬৫৪ কোটি টাকার কৃষিপণ্যের ক্ষতি হয়েছে বলে রাজ্যের কৃষি দফতরের রিপোর্ট। প্রাণহানিও ঘটেছে অনেক। ভেঙে গিয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর। এর মধ্যেই ঘূর্ণাবর্তের হুঙ্কারে আবহাওয়া দফতরের দেওয়া দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রশাসনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কারণ, অগস্টের দুর্যোগেরও মূলে ছিল ঘূর্ণাবর্ত।
তাই সিঁদুরে মেঘ না-হোক, দুর্যোগের ঘন-ঘটায় বিপদের গন্ধ। |