আজ, সোমবার শিক্ষক দিবস। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাজ্যের ১০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান জানাবে রাজ্য সরকার। বিকেলে কলকাতার রবীন্দ্রসদনে হবে শিক্ষা দফতরের এই অনুষ্ঠান। সম্মান প্রাপকদের মধ্যে থাকবেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ৩ জন। রয়েছেন ঝাড়গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পরিব্রাজিকা আত্মহৃদয়া, কেশপুরের এমএসডিইউ দোগাছিয়া হাইমাদ্রাসার অধীক্ষক (সুপারিন্টেন্ডেন্ট) শেখ আলি আজম এবং পিংলার সাহারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্মলকুমার দাস।
আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রামে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে আত্মহৃদয়ার। তাঁর প্রকৃত নাম সুদর্শিনী রাঘবাচার্য। তবে ছাত্রীমহলে ‘গৌরীদি’ নামেই তিনি বেশি পরিচিত। মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট করেছেন। দক্ষিণ ভারতীয় হলেও বাংলা ও ইংরেজি দু’টি ভাষাতেই সমান সাবলীল। শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৯ সালে ঝাড়গ্রামের কন্যাগুরুকুলে ব্রহ্মচারিণী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠে যোগ দেন সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে। ১৯৯৭ থেকে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবসর নেওয়ার আগেই মিলল এই সম্মান। |
|
|
|
পরিব্রাজিকা আত্মহৃদয়া |
শেখ আলি আজম |
নির্মলকুমার দাস |
|
ছোট থেকেই শিক্ষক হওয়ার, দুঃস্থ-মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন পিংলার কুসুমদা অঞ্চলের বীজুপুরের বাসিন্দা নির্মলকুমার দাস। শিক্ষকতা শুরু ’৭৩ সালে। সাহারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক পদে যোগ দেন ’৭৭ সালে। তারপর থেকে এই স্কুলই তাঁর ঘর-সংসার। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান ১৯৯১-এ। বছর কুড়ি আগেও এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা বাড়ি ছিল না। গ্রামের সকলের সহযোগিতায় নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় পাকা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। নির্মলবাবুর ডাকে সাড়া দিয়ে এক সময়ে এই স্কুলে এসেছেন প্রয়াত সিপিআই সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায়। স্কুলের উন্নয়নে গীতাদেবী তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে অর্থসাহায্যও করেছিলেন। এখন স্কুল ও চারপাশের পরিবেশ পাল্টেছে। স্কুলের সামনে বাগান হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯টি ক্লাসরুম। ছাত্রছাত্রী ১৮১ জন। রাজ্য সরকার তাঁকে সংবর্ধিত করবে জেনে আপ্লুত সাহারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁর কথায়, “আমি কৃতজ্ঞ। স্কুলের উন্নয়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। গ্রামবাসীরা পাশে না থাকলে এ কাজ সম্ভব হত না।”
শিক্ষকতার পাশাপাশি নানা জায়গায় ধর্মসভা করেন শেখ আলি আজম। তুলে ধরেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা। শিক্ষকতা শুরু ১৯৭৫ সালে, বনপুরা আইএনইউ সিনিয়র হাই মাদ্রাসার সহ-শিক্ষক হিসেবে। বছর পাঁচেক আগে এমএসডিইউ দোগাছিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ডেন্ট পদে যোগ দেন। বাড়ি কেশপুরের আমড়াকুচি অঞ্চলের জামিরা গ্রামে। সেই সূত্রে কলকাতা, দিল্লি, রৌরকেল্লা গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “হিন্দু-মুসলিম আমরা সকলেই ভাই-ভাই। সবার আগে মানুষকে ভালবাসতে হবে। সকলকে একই ভাবে দেখতে হবে।” আলি আজমকে সকলে ‘কাছের মানুষ’ হিসেবেই চেনেন। কেউ অসুবিধায় পড়েছেন শুনলে তাঁর পাশে দাঁড়ান। যথাসম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করেন। তাঁর মতে, “ইসলাম বলেছে, সবার আগে মাতৃভূমিকে ভালবাসতে হবে। আমি ছাত্রছাত্রীদেরও এ কথা বলি।” সোমবার সকালেই কলকাতা রওনা দেবেন। শিক্ষারত্ন সম্মান প্রাপ্তি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “এমন সম্মান পাচ্ছি শুনে আমি অভিভূত। সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। যতদিন বেঁচে থাকব, সমাজের জন্য কাজ করব।” |