কারিগরি শিক্ষায় ‘দৃষ্টান্ত’ হতে কোমর বাঁধছে রাজ্য
রাজ্যে মেধার উৎকর্ষ বাড়াতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ মাঝারি বা নিম্ন মেধাসম্পন্ন ছেলেমেয়ে ও হতদরিদ্র পরিবারের পড়ুয়াদেরও ভবিষ্যৎ গড়তে তাঁদের সামনে এ বার বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করে দিতে চাইছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে বড় শিল্পের অভাব থাকায় নতুন সরকার কর্মসংস্থানের স্বার্থেই কারিগরি শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক জোর দিতে চায়। বস্তুত কারিগরি শিক্ষাদানে পশ্চিমবঙ্গ যাতে গোটা দেশের সামনে ‘মডেল’ হয়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী কপিল সিব্বলকে চিঠি লিখেছিলেন মমতা। ‘নীতিগত ভাবে’ রাজি হওয়ার পরে সিব্বল বিষয়টি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন।
এবং উদ্যোগটিতে কেন্দ্রীয় সহায়তাদানে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন প্রণববাবুও। কেন্দ্রীয় সমীক্ষা বলছে, আগামী দশ বছরে গোটা দেশে ৫০ কোটি কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তির চাহিদা তৈরি হবে। ওই চাহিদা পূরণে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের অগ্রণী করে তুলতে রাজ্যের আইটিআই এবং পলিটেকনিক শিক্ষা পরিকাঠামো ঢেলে সাজার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। মমতার নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে সিব্বলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন যিনি, রাজ্যের সেই কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “নিম্ন ও মধ্য মেধার ছাত্র-ছাত্রীদের হাতের কাজ শিখিয়ে রোজগারের রাস্তা দেখানোই আমাদের উদ্দেশ্য।”
তার তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গিয়েছে জোরকদমে। কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকা পেতে রাজ্য কোমর বেঁঁধে নেমেছে। রাজ্য সরকারের আহ্বানে গত জুন মাসে বিশ্বব্যাঙ্কের এক প্রতিনিধিদল পশ্চিমবঙ্গ ঘুরেও গিয়েছে। কারিগরি শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছে বণিক সংগঠক ‘ফিকি।’ উপরন্তু সিব্বলের উদ্যোগে ইতিমধ্যে একাধিক প্রকল্পের ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র।
প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মোট ১৫টি পলিটেকনিক কলেজ খোলা হবে। এর ১১টি হবে শ্রম মন্ত্রকের সাহায্যে। সংখ্যালঘু ও আদিবাসী মন্ত্রকের সহায়তায় একটি করে কলেজ তৈরি হবে। বাকি দু’টো কলেজ রাজ্য গড়ে তুলবে পিছিয়ে পড়া এলাকায়। শিল্পের চাহিদার প্রেক্ষিতে নতুন কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রে পাঠ্যসূচি আধুনিকীকরণ ও নতুন পাঠ্যক্রম গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। চা বা রেশমের মতো স্থানীয় শিল্প সংক্রান্ত পাঠ্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রবিরঞ্জনবাবু। চলচ্চিত্র, টিভি বা সংবাদমাধ্যমের চাহিদা মেটাতে সরকার সব ক’টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভিডিওগ্রাফি ও ফোটোগ্রাফি কোর্সও চালু করার পক্ষপাতী।
পাশাপাশি মাওবাদী-অধ্যুষিত অঞ্চলের ছেলেমেয়েকে মূল স্রোতে ধরে রাখতে কারিগরি শিক্ষাকে অন্যতম হাতিয়ার করতে চাইছে রাজ্য। যে কারণে রবিরঞ্জনবাবু বাঁকুড়া-পুরুলিয়া-পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে আইটিআই এবং পলিটেকনিক কলেজ খোলার আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যে লালগড়ে একটি আইটিআইয়ের জন্য জমি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আয়ের পথ দেখাতে অনুন্নত অঞ্চলের যুবকদের নিরাপত্তা-প্রশিক্ষণ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রবিরঞ্জনবাবুর দফতর।
সেটা কী রকম?
পেশার দরজা
• দেড় বছরে ১৫টি পলিটেকনিক
• জঙ্গলমহলে একাধিক আইটিআই
• স্থানীয় শিল্প সংক্রান্ত পাঠ্যক্রম
• ভিডিওগ্রাফি-ফোটোগ্রাফির তালিম
• নিরাপত্তারক্ষীর প্রশিক্ষণে কেন্দ্র
• মহিলাদের সেলাই ও কম্পিউটার শিক্ষা
সরকারি-সূত্রের বক্তব্য: বিভিন্ন শিল্পসংস্থা থেকে শুরু করে ছোট-বড় নানা প্রতিষ্ঠানে এখন নিরাপত্তাকর্মীর যথেষ্ট চাহিদা। রাজ্যের ছেলেরা যাতে এর ফসল তুলতে পারেন, সে জন্য বর্ধমান, বাঁকুড়া ও বালুরঘাটে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণকেন্দ্র খোলা হচ্ছে। প্রতি বছর পাশ করা ১২ হাজার পড়ুয়ার চাকরিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে দু’টি সংস্থার সঙ্গে মউও সই হয়েছে বলে রাজ্য সরকারি সূত্রের দাবি।
অন্য দিকে আলাদা করে শুধু মেয়েদের, বিশেষত সংখ্যালঘু মহিলাদের কারিগরি প্রশিক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সেলাই ও কম্পিউটারের তালিম দিতে কালিম্পংয়ে কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। এ ছাড়া ছেলে-মেয়ে সবার জন্য থাকবে কারিগরি প্রশিক্ষণ সম্পর্কে একটি অনলাইন কাউন্সেলিং কেন্দ্র। সব মিলিয়ে, কারিগরি শিক্ষায় সারা দেশকে ‘দিশা’ দেখাতে প্রস্তুত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.