তোমাকে শরীরের সঙ্গে কথা বলতে হবে
আমি ফিজিক্স অনার্সের ছাত্র। মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছি। তখন আমি ছিলাম আমার গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু এখন কলেজে পড়ার কারণে আমাকে শহরে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। আর এটাই আমার প্রধান সমস্যা। যখন বাড়িতে ছিলাম তখন শুধুই পড়াশোনা করতাম, অন্য কিছু করতাম না। কিন্তু এখন পড়াশোনার থেকে অন্য বাজে কাজই বেশি করি। সারা দিন মোবাইলে, ইন্টারনেটে ফেসবুক, অরকুটে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করা, বাজে বাজে ওয়েবসাইট দেখা ইত্যাদি। পড়াশোনা না করে সারা দিন ধরে নোংরা সিনেমা ডাউনলোড করে দেখতে থাকি। এখানকার সব ছেলেরাই তাই করে। যাদের গার্লফ্রেন্ড আছে, তারা সারা দিনই ফোনে কথা বলে। আসলে এখানে গাইড করার মতো কেউ নেই। তাই ভাল হওয়ার চেষ্টা করেও হতে পারছি না। নিজেকে শত বুঝিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। পড়াশোনা হচ্ছে না। রোজ ভাবি আর করব না, কিন্তু আবার করে ফেলি। বাবা মা আমাকে খুব ভালবাসে, বিশ্বাস করে। তাঁদের আমি ঠকাচ্ছি। আমি কী করব?
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
তোমাকে বলছি
তুমি আসলে এক সঙ্গে কয়েকটি সমস্যার মধ্যে পড়েছ। মাথার মধ্যে সেই সমস্যাগুলো জড়িয়ে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের সবার হয়। তাই প্রথম কাজটাই হল, সমস্যাগুলো আলাদা আলাদা করে লেবেল লাগিয়ে একটা একটা করে সমাধানের চেষ্টা করা। আবার সব সমস্যাগুলোর সঙ্গে সব সমস্যাগুলোর কিন্তু যোগ আছে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। তুমি যখন পড়াশোনায় ভাল, তখন গুছিয়ে একটা জিনিস বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয়ই আছে। তুমি যে ক’টা সমস্যার কথা বলছ, তার কয়েকটা বোঝা বা আলোচনা করা সহজ, আর অন্তত একটা আলোচনা করা কঠিন। আমরা একে একে সবগুলোর কথায় আসার চেষ্টা করব। যখনই এইগুলো নিয়ে ভাববে, সময় নিয়ে ভাবার চেষ্টা করবে। অল্প সময়ে এটাকে চাপা দিয়ে ওটাকে ঠিক করার চেষ্টা করলে মাথা আরও গুলিয়ে যায়।
তুমি একটা চেনা পরিবেশ ছেড়ে একটা নতুন পরিবেশে এসেছ। কয়েকটা বদল তুমি চিনতে পারছ, কয়েকটা পারছ না। এটা হয়। আমরা সব কিছু পরিষ্কার ভাবে টের পাই না। বাবা মা তোমাকে ভালবাসেন। তার মধ্যে একটা নির্ভরতা লুকিয়ে থাকে। বাবা মায়ের এই আদর, তাঁদের গাইডেন্স তুমি এখন খুব মিস করছ। এতে তোমার একাকিত্ব বাড়ছে। তুমি একাকিত্বটাকে এক নম্বর সমস্যা বলে দাগিয়ে রাখতে পারো।
তোমার মত বয়সে শরীরে মনে প্রেমের জন্য একটা চাহিদা তৈরি হয়। কিন্তু সবার প্রেমের সুযোগ সমান নাও হতে পারে। তার নানান কারণ থাকতে পারে। এমন নয় যে তুমি কারও চেয়ে কম বলে তোমার প্রেম হচ্ছে না। কিন্তু যেহেতু প্রেম করাটা আজকাল একটা যোগ্যতা আর ওয়ান-আপ-ম্যানশিপের ব্যাপার হয়ে উঠেছে, তাই প্রেম না করলে আশেপাশের নজরে ছোট হয়ে যাচ্ছি, এই ভয়টা থাকে। এই চাপটাকে পিয়ার প্রেশার বলে। তোমার ক্ষেত্রেও সম্ভবত এই পিয়ার প্রেশারটা মোকাবিলা করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। এর উপশমের একটা উপায় হল এক ধরনের সেন্স অব হিউমার দিয়ে প্রেমটাকে প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখতে না শেখা। সেটা যদি না পারা যায়, তা হলে অন্য প্রতিযোগিতাগুলোতে খেলে দেখতে পারো। ধরো, ক্লাসে যদি অনেক নম্বর পাও, তা হলে সারা দিন প্রেমিকাকে ফোন করা ছেলেটিও পিছিয়ে যেতে পারে, তাই না?
এর পর শেষ সমস্যায় আসি। যৌনতার সমস্যা। তোমার শরীর এখন যৌনতা চায়। কিন্তু সেটা সে পাচ্ছে না। তাই সে তোমাকে জ্বালাচ্ছে। প্রথম কথাই হল, এর মধ্যে নোংরামির কিছু নেই। সমাজ নানা কারণে যৌনতাকে আটকে রাখতে, দমন করতে শেখায়। এই নিয়ে লম্বা তর্ক চলতেই পারে, কিন্তু তাতে তোমার কোনও লাভ নেই। তোমাকে একটা বাস্তবের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। ধরে নেওয়া ভাল যে, আগামী কয়েক বছর সরাসরি যৌন অভিজ্ঞতা তুমি পাবে না। কিন্তু তোমার শরীর সেটা বুঝবে না। কাজেই সে তোমাকে জ্বালাবে। এই সমস্যা যে কেবল তোমাকে জ্বালাচ্ছে তা কিন্তু নয়। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্স, ইংলিশ, বাংলা, ডাক্তারি, ম্যানেজমেন্ট পড়ছে এমন কোটি কোটি ছেলে-মেয়ে এই মুহূর্তে এই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর সহজ সমাধান আমি তোমাকে দিতে পারব না। আমি শুধু এটাই বলতে পারি, যে মাথা ঠাণ্ডা রেখে, সব না গুলিয়ে ফেলে বেঁচে থাকার মূল কথাই হল নিজের মতো করে ম্যানেজেব্ল উপায় বের করা। বহু বহু ছেলেমেয়ে প্রেমে ব্যর্থ হয়। তাদের কোটিতে এক জনও আত্মহত্যাও করে না। পরীক্ষায় ফেলও করে না। দুঃখটাকে ম্যানেজ করে।
তোমাকে তোমার শরীরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বলতে হবে যে তোর এক ধরনের সমস্যার জন্যে আমার তো বাকি শরীর, মন, জীবন তোকে দান করে দিতে পারব না। আমি তোকে এইটুকু সুযোগ সুবিধে দিচ্ছি, এইটুকু দাবি আমি মানব। তার বিনিময়ে বাকি সময়টা আমাকে পড়তে দিবি, আড্ডা মারতে দিবি, বাবা মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দিবি। তুই যদি শান্ত হতে পারিস , তবে এক জন সঙ্গিনী জোগাড়ের সম্ভাবনা বাড়বে। সমাজে আমার স্বস্তি বাড়বে। ভালো রেজাল্টে আত্মবিশ্বাস, রোজগার বাড়বে, তখন তোর ফূর্তি দেখবে কে। এখন আমাকে আমার মত থাকতে দে। নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিতে দে। তোকে আমি ঠকাবো না। কিন্তু এখন সব গুবলেট করে দিস না। তা হলে তুইও কিছু পাবি না, আমিও না।
বাবা-মাকে বলছি
বয়ঃসন্ধিতে যৌনতা নিয়ে নানান রকম কৌতূহল, অস্বস্তি, বাসনা সব ছেলেমেয়ের ওপরে সমানভাবে প্রভাব ফেলে না। বা ফেললেও সেটা তারা প্রকাশ করে না। আপনার ছেলেমেয়েকে যদি করে, তবে সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। অপরাধ, অপরাধ বলে শাসন করলে উল্টো ফল হয়। এবং যৌনতা নিয়ে বিকৃত ধারণা তৈরি হয়। যদি খোলাখুলি কথা বলার ইচ্ছে বা সাহস না থাকে, তবে অন্তত দেখেও দেখছি না ভাব করে ছেড়ে দিন। সাধারণত বাচ্চারা বন্ধুবান্ধব, নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে আস্তে আস্তে ব্যাপারটা সামলে নেয়। বেশি বকাবকি করলে ওদের যৌন জীবন সম্পর্কে ধারণাতেই গন্ডগোল হয়ে যেতে পারে। নিজেকে নোংরা ভেবে মানসিক কষ্ট, এমনকী অসুখও বাধিয়ে ফেলতে পারে। বাকি সব ক্ষেত্রেও উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে। সেটা নিশ্চয়ই আপনারা চাইবেন না।
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।

ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।

অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.