খেলা কেবল নেশা নয়, পেশাও বটে
খাওয়া, ঘুম ও পড়াশুনোর মতোই ছোট থেকে খেলাও আমাদের জীবনে বেঁচে থাকার অন্যতম রসদ। কয়েক বছর আগে খেলাটা ছিল নিছকই মনোরঞ্জন। কিন্তু এখন যে কোনও খেলাতেই পেশাদারী মনোভাব চলে এসেছে। এবং তার সঙ্গে যুক্ত থাকা বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলি এখন হয়ে উঠেছে কাজের ক্ষেত্র। ইনডোর বা আউটডোর গেম যা-ই হোক না কেন, বিপুল অর্থ লেনদেন হচ্ছে খেলার সঙ্গে।
বিভিন্ন খেলাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ইভেন্ট এখন খুবই পরিচিত। দেখা যাচ্ছে এখন পাড়ার ক্রিকেট-ফুটবলেও লগ্নি করতে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা। তাই পাড়ার ক্রিকেট ম্যাচেও এসেছে জাঁকজমক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বর্তমানে প্রচুর খেলাধুলো হচ্ছে। তাই সারা বছরই খেলা-র জন্য নানা ধরনের ইভেন্ট হচ্ছে এখানে ওখানে। এই ইভেন্ট পরিচালনা করার জন্য তাই স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট পাশ করা পেশাদার লোকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কলকাতায় জর্জ গ্রুপ অব কলেজেস-এ স্নাতক স্তরে ৩ বছরের পূর্ণসময়ের স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট পড়ানো হয়। ডব্লিউ বি ইউ টি-র স্বীকৃতি রয়েছে এই কোর্সটিতে। মোট আসন ৩০টি। ৬টি সেমেস্টারে কোর্সটি ভাগ করা হয়েছে। প্রতি সেমেস্টারের খরচ আনুমানিক ২৫০০০ টাকা। উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল স্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পর এই কোর্সের জন্য আবেদন করা যায়। কোর্সে স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট, ফান্ডিং অন স্পোর্টস, স্পোর্টস ম্যানেজেরিয়াল অ্যাকাউন্টিং, স্পোর্টস কোচিং মেথডোলজি, স্পোর্টস ল’, স্ট্যাটিসটিক্স প্রভৃতি বিষয়ে সম্যক ধারণা দেওয়া হয়। সমগ্র পূর্ব ভারতে স্নাতক স্তরে আর কোনও কোর্স এখনও চালু হয়নি। বিশদ জানতে যোগাযোগ- ১৩৯ ডি, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, কলকাতা- ৭০০০২৯, দূরভাষ: ০৩৩-২২১৭-৬১৪২, ওয়েবসাইট: www.georgecollege.org.
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট-এর একটি স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সের ব্যবস্থা আছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট-এ। এটি এক বছরের কোর্স। শিক্ষাগত যোগ্যতা: যে কোনও বিষয়ে স্নাতক বা সাম্মানিক স্নাতক। আনুমানিক খরচ: ১,১০,০০০ টাকা। এর মধ্যে ৭,০০০ টাকা ফেরতযোগ্য। প্রার্থী যদি খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকে তা হলে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ডিপ্লোমা ডিগ্রিটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে থাকে। সাধারণত মে মাসের গোড়ার দিকে এন্ট্র্যান্স পরীক্ষা হয়। এন্ট্র্যান্স পাশ করার পর গ্রুপ ডিসকাসন ও ইন্টারভিউ হয়। মূলত ইংরেজিতে বর্তমান বিষয়, জেনারেল নলেজ ও নলেজ অব স্পোর্টসের ওপর ৫০+২৫+২৫ মোট ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়। কোর্সটিতে মোট ১৮টি বিষয়ে পড়ানো হয় ৯টি ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত এবং বাকি খেলা সংক্রান্ত। এর মধ্যে স্পোর্টস ল’, স্পোর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, স্পোর্টস মার্কেটিং, স্পোর্টস ইভেন্ট অ্যান্ড পি আর, স্পোর্টস সায়েন্স প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া হয়। পাশ করার পর বিভিন্ন রাজ্যের ক্রীড়া সংগঠন, কর্পোরেট সংস্থায় চাকরি পাওয়া যেতে পারে। বিশদ জানতে যোগাযোগ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ম্যানেজমেন্ট হাউস, কলেজ স্কোয়ার ওয়েস্ট, কলকাতা- ৭০০০৭৩, দূরভাষ: (০৩৩)২২৪১৩৭৫৬, ৫৭৯২, ৮৬৯৪, ৮৬৯৫; ওয়েবসাইট: www.iiswbm.edu.
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট ছাড়াও সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে কোচ, ফিজিয়োথেরাপিস্ট, ফিটনেস ট্রেনার, ভিডিয়ো অ্যানালিস্ট, স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং স্পোর্টস সাইকলজিস্ট প্রভৃতি পেশাদারদের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে ক্রিকেট ভারতের সবচেয়ে অর্থকরী খেলা। তবে শুধু ক্রিকেট নয়, সব খেলাতেই পেশাদার কোচের প্রয়োজন হয়। ক্রিকেট কোচের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দু’টি কোর্সের ব্যবস্থা আছে। একটি বেসরকারি ব্যবস্থার সাহায্যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড থেকে কোর্স করা যায়। অপরটি ভারতে ন্যাশনাল ক্রিকেট আকাদেমি বেঙ্গালুরু থেকে করা যায়। এই আকাদেমিতে এ, বি, সি তিনটি লেবেলে কোচিং কোর্স করানো হয়। সাধারণ ভাবে প্রার্থীকে রাজ্য স্তরের সংগঠন বাছাই করে পাঠায় এখানে কোচের প্রশিক্ষণের জন্য। নির্দিষ্ট খেলা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। এ-র পর বি এবং সি লেবেল করে নিজেকে আরও পেশাদার তৈরি করা যায় এ কথা বলেছেন সৌরভ ক্রিকেট আকাদেমি-র কোচ দেবোপম সরকার। বর্তমানে যে-কোনও ক্লাব সংগঠনে কোচিং করতে গেলেও কোচিং-এর কোর্স করাটা জরুরি। তা ছাড়া, রাজ্য ক্রীড়া সংস্থাগুলিকে ট্রেনিং দিতে বা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের খেলা পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত কোচের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা আছে।
ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল খেলাটা যাই হোক, ফিজিয়ো এখন সব খেলারই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। কলকাতায় বনহুগলিতে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর দ্য অর্থোপেডিকালি হ্যান্ডিক্যাপড-এ ব্যাচেলর ইন ফিজিওথেরাপি (বিপিটি) স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হয়। এর পর বিভিন্ন সময়ে ন্যাশনাল আকাদেমি থেকে নানা সার্টিফিকেট কোর্স করে নিজের পেশাদারিত্বের মান বাড়ানো যায়। পিয়োর সায়েন্স নিয়ে স্নাতক বা উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকলে বিপিটি করা যায়। এন্ট্রান্স পরীক্ষা হয় ভর্তির জন্য। জয়েন্টে নীচের দিকে র্যাঙ্ক থাকলেও বিপিটি-র দিকে যাওয়া যায়। এই কোর্স করার পর বিভিন্ন রাজ্য টিমের সঙ্গে অথবা ক্লাবে কিংবা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজের সুযোগ আছে। বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন-এর ফিজিয়ো শুভেন সরকারের মতে ‘জব স্যাটিসফেকশন’ এ কাজের বিশেষত্ব।
স্পোর্টস সাপোর্ট টিম-এর অন্যতম জরুরি অংশ হল ভিডিয়ো অ্যানালিস্ট। বোঝাই যাচ্ছে, কম্পিউটার নিয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা যেমন জরুরি, তেমনি খেলাটাও বুঝতে হবে। আজকাল প্রায় সব খেলাতেই ভিডিয়ো অ্যানালিস্ট লাগে; তবে ক্রিকেটেই এরা সবচেয়ে ব্যয়সাপেক্ষ। বিসিসিআই নাগপুরের অ্যাকাডেমিতে একটি কোর্স চালায় এই বিষয়ে। ট্রেনিং আপগ্রেডেশন-ও হয় এখানে। বিভিন্ন রাজ্য দলে তো বটেই, ক্লাবগুলোতেও এই পেশাদারদের চাহিদা আছে। জাতীয় স্তরের ম্যাচগুলিতে ম্যাচ পিছু ৫০০০ টাকা পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক ম্যাচে আরও বেশি। ভিডিয়ো অ্যানালিস্ট প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মতে এই পেশায় কাজের সুযোগ অনেক।
সাপোর্ট টিমে ফিটনেস ট্রেনার-এর ভূমিকাও অনস্বীকার্য। বিভিন্ন খেলার ট্রেনিং বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া হয়। তবে, ন্যাশনাল ক্রিকেট আকাদেমি-তে ক্রিকেটের ফিটনেস ট্রেনারদের গ্রুম করা হয়। এ ছাড়া, মুম্বইয়ের জি এস আই থেকেও অনলাইনে কোর্স করা যায় এ বিষয়ে। এই কোর্স করার পর আনুমানিক ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা মাসিক পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। ফিটনেস ট্রেনার সঞ্জীব দাসের মতে, কলকাতায় কাজের সুযোগ তুলনায় কম, বরং মুম্বই, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোরে কাজের সুযোগ অনেক বেশি। খেলোয়াড়দের ফিটনেসের দিকে নজর রাখার সঙ্গে সঙ্গে কোচ, ফিজিও সকলের সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয় ফিটনেস ট্রেনারদের। বর্তমানে এক জন খেলোয়াড়ের নিয়মিত ফিটনেসের পরিমাণ স্থিতিশীল রাখা একান্ত জরুরি।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ পেশাটি হল স্পোর্টস মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ। স্পোর্টস মেডিসিন বিষয়টি একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। প্রাথমিক ভাবে ডাক্তারি পাশ করার পর পেশা হিসেবে এই বিষয়টি বেছে নেওয়া যায়। যেমন, এক জন খেলোয়াড়কে আঘাত লাগলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে এক জন স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, যাতে তার কোনও ক্ষতি না হয়, তেমনি শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করবে। আজকাল অল্প বয়স থেকেই খেলোয়াড়রা দেশে-বিদেশে নানা ট্রেনিং নিতে শুরু করে। এদের যত্ন নেন এক জন স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। শুধুমাত্র তাঁর শারীরিক সক্ষমতাই নয়, মানসিক সক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করেন ডাক্তার সুনীল ঠাকুরের মতো এক জন স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। খেলোয়াড় যাতে তাঁর ওজন ধরে রাখতে পারেন, ডোপিং না করেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
আজ থেকে বছর কুড়ি আগে খেলা মানে ছিল মেরেকেটে একটা খেলার কোটায় চাকরি। এখন কিন্তু খেলার জগৎ অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। তার নিজস্ব পেশাদারিত্বের সঙ্গে এসেছে জীবিকানির্বাহ ও কেরিয়ারের হরেক সুযোগ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.