রাজ্যে আবার জমি নিয়ে রক্তপাত। প্রাণহানি।
একটি জমির দখলদারি নিয়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন শাসক দল তৃণমূলের দু’জন। গুরুতর আহত হয়েছেন দু’জন। তাঁরাও তৃণমূলের সমর্থক। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বারুইপুর থানা এলাকার বৃন্দাখালি গ্রামের জয়াতলায়। পুলিশ জানায়, নিহতদের নাম সাধন নস্কর (৩৫) ও সন্ন্যাসী নস্কর (২২)। গোপাল হালদার ও দেবপ্রসাদ মির্ধা নামে অন্য দুই তৃণমূল-সমর্থক আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাঙ্গামায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে ছ’জনকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জয়াতলায় র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ পিকেট বসেছে পাশের হিমঞ্চি গ্রামেও।
সংঘর্ষ কেন?
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই এলাকায় আট বিঘে জমির মালিকানা নিয়ে কয়েক বছর ধরে মামলা চলছে। সিপিএমের-সমর্থকেরা ওই জমি জবরদখল করে দীর্ঘদিন ধরে চাষ করছিল বলে তৃণমূলের অভিযোগ। রবিবার সকালে তৃণমূল-সমর্থকেরা লোকজন নিয়ে ওই জমিতে ট্রাক্টর চালিয়ে ধান চাষের মাটি তৈরির কাজ শুরু করতে গিয়েছিলেন। হাঙ্গামার পরে তৃণমূল এবং সিপিএম নেতাদের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, হামলাকারীরা সিপিএমের। সিপিএম নেতারা অবশ্য বলেছেন, বাইরে থেকে আসা তৃণমূলকর্মীরাই ‘চিনতে না-পেরে’ এলাকার তৃণমূলকর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছে। |
প্রায় এক মাস ধরেই ওই এলাকায় জমি দখল নিয়ে সিপিএম এবং তৃণমূলের সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে সাধন ও সন্ন্যাসী দলবল নিয়ে জমি চাষ করতে গিয়েছিলেন। আচমকা তাঁদের লক্ষ করে যথেচ্ছ বোমা ও গুলি ছোড়ে হামলাকারীরা। সাধন ও সন্ন্যাসী গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের সঙ্গীরা পাল্টা আক্রমণ চালায়। দু’দলে কিছু ক্ষণ বোমা ও গুলির লড়াই চলে বলে পুলিশ জানায়। পরে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় বলে বাসিন্দারা জানান। স্থানীয় মানুষই গুরুতর আহত অবস্থায় সাধন ও সন্ন্যাসীকে জয়তলা হাটে নিয়ে যান। সংঘর্ষের সময় সাধন ও সন্ন্যাসীর জমির পাশের জমিতেই ছিলেন তৃণমূল-সমর্থক গোপাল ও দেবপ্রসাদ। দুষ্কৃতীদের গুলি তাঁদের পিঠে-বুকে লাগে। দু’জনেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতদের মধ্যে সাধন একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের খবর। এ দিন তাঁর প্যান্টের পকেটে পাঁচটি কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, জমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরেই ওই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গোলমালে জড়িতদের ধরার চেষ্টা চলছে।
এ দিন ঘটনাস্থলে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। সংঘর্ষের জন্য সিপিএম-কে দায়ী করে তিনি বলেন, “একটা দল রাজনৈতিক ভাবে পর্যুদস্ত হয়েছে। মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তার পরেও বেআইনি অস্ত্র নিয়ে খুন ও সন্ত্রাসের রাজনীতি করছে।” বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানান মুকুলবাবু।
সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী অবশ্য মুকুলবাবুর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “তৃণমূলই বহিরাগতদের নিয়ে ওই এলাকায় সিপিএম-সমর্থকদের উপরে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। বৃন্দাখালির পঞ্চায়েত প্রধান-সহ আমাদের সব সমর্থকই গ্রামছাড়া। তৃণমূলেরই বহিরাগতেরা দলের কর্মীদের চিনতে না-পেরে এ দিন গুলি চালিয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে সিপিএমের কোনও যোগ নেই।” |