জলাশয়ে বুনো হাতির আনাগোনা ঠেকাতে বেংডুবিতে সেনা অস্ত্রাগারের আশপাশের সামরিক বাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে তিন দফা পরিকল্পনা নিল বন দফতর। রবিবার শিলিগুড়ির অদূরে বেংডুবিতে বন দফতরের বাংলোয় সামরিক বাহিনীর আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। যে জঙ্গলে সামরিক বাহিনীর অস্ত্রাগার ও ত্রিশটির বেশি জলাশয় রয়েছে সেই এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। বনমন্ত্রী বলেন, “সামরিক বাহিনী জলাশয়ে বুনো হাতি পড়ে যাওয়ার ঘটনা রোধ করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী দুটি পরিকল্পনা নিয়েছে। বন দফতরের এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের সঙ্গেও সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ বাড়ানো হবে যাতে এই ধরনের ঘটনা ঘটলেই বনকর্মীরা দ্রুত সেখানে পৌঁছতে পারেন।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয় তার মধ্যে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনাটি হল, অস্ত্রাগার লাগোয়া জলাশয়ের পাড় আরও উঁচু করে দেওয়া হবে। চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে যাতে বুনো হাতির পাল কোনও ভাবেই জলাশয়ের পাড়ের খুব কাছে চলে যেতে না-পারে। ওই অস্ত্রাগারের চারপাশের দেওয়াল বার বার ভেঙে দিচ্ছে হাতির পাল। সেটা ঠেকাতে প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা খরচ করে ‘এলিফ্যান্ট ট্রেঞ্চিং প্রুফ’ নামে বিশেষ ধরনের দেওয়াল তৈরির করা হবে। ১৩.৫ কিলোমিটার লম্বা দেওয়াল ডিঙিয়ে হাতি ঢুকতে গেলে দেওয়ালের একাংশ বেঁকে গিয়ে সামনে ৪৫ ডিগ্রি কৌণিক ঢাল তৈরি করবে যা পেরিয়ে হাতি ওই এলাকায় যেতে পারবে না। অস্ত্রাগারের চারপাশে প্রায় তৈরি করতে সামরিক বাহিনীকে বিশেষ বরাদ্দ মঞ্জুর করাতে হবে। সেই পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে এদিনের বৈঠকে সামরিক বাহিনীর কর্তারা বনমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল রবীন্দ্র কৃষ্ণমূর্তি বলেন, “জল থাকলে বুনো হাতির পাল সেখানে যাবেই। সুতরাং স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে গেলে এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাই দরকার।” গত দু’মাসে ওই এলাকায় বার বুনো হাতি জল খেতে গিয়ে জলাশয়ে পড়ে গিয়েছে। সামরিক বাহিনীর জওয়ান এবং বনকর্মীরা মিলে সেগুলিকে উদ্ধার করে জঙ্গলে ফেরাতে সমর্থ হলেও গত বছর একটি স্ত্রী হাতির মৃত্যু হয়। গত শুক্রবার এক স্ত্রী হাতি ও শাবক পড়ে গেলে ঘটনাস্থলে যান রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল অতনু রাহা। তিনি জঙ্গলে বন দফতরের পক্ষ থেকে জলাশয় তৈরি করা হবে বলেও জানান। এদিন হিতেনবাবু বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পে জলাশয় তৈরির জন্য জেলাশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। জেলাশাসক বরাদ্দ দিলেই কাজ শুরু হবে।” বনমন্ত্রী নকশালবাড়িতে কলাবাড়ির জঙ্গলেও যান। ফসলের লোভে প্রতি বছর জুন মাসে বুনো হাতির পাল কলাবাড়ির জঙ্গল থেকে মেচি নদী পেরিয়ে নেপালে ঢুকে পড়ে। বাসিন্দারা ফসল বাঁচাতে বুনো হাতির পালের উপরে হামলা করে। হপাল লক্ষ করে গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটে। গত কয়েক বছরে কেয়েকটি বুনো হাতির মৃত্যু হয়েছে। নেপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে পালিয়ে আসার পরে তরাইয়ের জঙ্গলে মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। বনমন্ত্রী বলেন, “দফতরের সচিব কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে বন ও পরিবেশমন্ত্রকে চিঠি দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানানো হবে যাতে ভারত ভুটান নদী কমিশনের মতো পৃথক কমিটি গড়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।” |