...গন্ধ এসেছে নেতাদের পুজোয় ‘নাম’-মাহাত্ম্যই
ওঠাপড়ার চাবিকাঠি
হরের অনেক পুজোরই একটা চালু নাম থাকে এবং তা হয় সেই পুজোর সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক নেতাদের নামেই।
অতীত বলছে, কখনও এই নেতাদের নামের সঙ্গে জুড়ে জনপ্রিয় হয়েছে পুজো, আবার কখনও বা নামী পুজোর সঙ্গে জুড়ে মান বেড়েছে ‘কর্তা’র। উল্টো দিকে, সেই নেতার পড়তির দিনে জৌলুস হারিয়েছে পুজো, এমন দৃশ্যও অমিল নয়।
দক্ষিণ কলকাতার পুরনো পুজোগুলির অন্যতম একডালিয়া এভারগ্রিন। সাধারণের কাছে সেটির ডাকনাম সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পুজো। গলির ছোট পুজো থেকে নামী পুজো হয়ে ওঠায় এই নেতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু লোকে বলে, কয়েক বছর আগে সুব্রতবাবুর খারাপ সময়ে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়ে একডালিয়া। তবে, তা মানতে নারাজ বালিগঞ্জের বিধায়ক। বললেন, ‘‘৭১-এর পরে কখনও একডালিয়া জৌলুস হারায়নি। আজও নয়।”
গত দশকে যে কয়েকটি পুজো প্রথম সারিতে উঠে প্রতিযোগিতায় এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম সুরুচি সঙ্ঘ। এই পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত টালিগঞ্জের বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস। পর পর কয়েক বছরে নানা ধরনের থিম উপহার দিয়েছে সুরুচি। অরূপবাবুর উত্থানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সুরুচির জৌলুস। অরূপবাবু জানালেন, এ বার তাঁদের চমক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের থিম-সঙ্গীত। পাশাপাশি তাঁর দাবি, গত দশ বছরে তাঁদের মণ্ডপেই সব চেয়ে বেশি জনতার ঢল নেমেছে।
এ বার সুরুচি সঙ্ঘের পুজোর থিম-সঙ্গীত করেছেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
রবিবার তার আনুষ্ঠানিক প্রকাশে শিল্পীর সঙ্গে (ডান দিক থেকে) টালিগঞ্জের
বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস, দেব, সোহম, শ্রাবন্তী ও শুভশ্রী। ছবি: দেবাশিস রায়
পুজোর টক্করে রয়েছে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘও। খোদ শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো বলে কথা! বিরোধী দলনেতা থেকে শিল্পমন্ত্রী, পার্থবাবুর উন্নতির সঙ্গে পুজোর জৌলুসও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।
গত পাঁচ বছরে ক্রমাগতই নাম বাড়ছে ত্রিধারা সম্মিলনীর। যার অন্য নাম, কলকাতা পুরসভার দাপুটে নেতা দেবাশিস কুমারের পুজো। দেবাশিসবাবু জানালেন, এ বার পুজো প্রাঙ্গণে রাজস্থানি হস্তশিল্প ও খাবারের স্টলের পাশাপাশি থাকবে রাজস্থানি সঙ্গীত ও নাচ।
দক্ষিণ কলকাতার পুজো মানচিত্রে নতুন তারকা চেতলা অগ্রণী। বেশ কয়েক বছর ধরেই ফিরহাদ হাকিম (ববি) এই পুজোর কর্তা। এ বার তিনি পুরমন্ত্রী। ফলে কিছুটা হলেও বাড়তি জৌলুস থাকছেই। গত বারে সল্টলেকের এফডি ব্লকের শিল্পী রণো বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এসেছে ফিরহাদের পুজো। থিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। তবে ফিরহাদ বলছেন, ‘‘আমি নই, পুজো বেড়ে ওঠার পিছনে কৃতিত্ব স্থানীয় মানুষেরই।”
রাজনীতির আগেই পুজো করে পরিচিতি তৈরি করেছিলেন কোন নেতা? ক্যুইজে প্রশ্নটা করলে পলকেই জবাব মিলবে, সুজিত বসু। আর তাঁর পুজো? লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিং। অবশ্য শ্রীভূমি যখন সুজিতবাবুকে পরিচিতি দিয়েছিল, তখন তিনি ছিলেন অন্য রাজনৈতিক শিবিরে। কিন্তু পরে যখন দল বদলালেন, তখনও শ্রীভূমি ছাড়েননি তিনি। দুর্জনেরা বলেন, বাম শিবির ছাড়ার পরে কয়েক বছর কপাল খারাপ গিয়েছিল শ্রীভূমির। কিন্তু সুজিতবাবুর দাবি, মোটেও তা নয়। প্রতি বারই পুজোর পাশাপাশি পংক্তিভোজ আর সমাজসেবার অনুষ্ঠান চলেছে। একই ব্যবস্থা রয়েছে এ বারও।
উত্তরের ভিড় অনেকটাই নিজেদের মণ্ডপে টানে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ঘোষের পুজো বলেই যা লোকের কাছে পরিচিত। রাজনীতির আঙিনায় প্রদীপবাবুর সেই দাপট ইদানীং পড়তির দিকে। তার সঙ্গে কি সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোও হারাচ্ছে তার পুরনো জৌলুস? মানতে নারাজ প্রদীপবাবু। বললেন, “লোকের ভিড়ে এখনও এক নম্বর আমরা।” উত্তরের পুজোগুলির মধ্যে রয়েছে হাতিবাগান ও নবীন পল্লি। এই দু’টি পুজোর সঙ্গেই রয়েছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ।
অবশ্য কলকাতার এমন অনেক নামী পুজো আছে, যাঁদের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে কোনও রাজনৈতিক নেতা না থাকলেও পুজোকমিটির কর্তারা রাজনৈতিক নেতাদের ঘনিষ্ঠ। কলেজ স্কোয়ারের পুজোকমিটির প্রায় সবাই সোমেন মিত্রর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। মহম্মদ আলি পার্কের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে দীনেশ বাজাজের নাম।
এর পাশাপাশি, বাম দলের নেতারা অবশ্য কোনও দিনই পুজোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকেন না। কিন্তু বেলেঘাটা থেকে জোড়াসাঁকো, অনেক পুজোর পিছনেই প্রচ্ছন্ন ভূমিকায় দেখা যেত তাঁদের। এ বার বামফ্রন্ট শাসক থেকে বিরোধী ভূমিকায় যাওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রে বাজেটে কাটছাঁট হয়েছে সেই পুজোগুলির।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.