রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে দু’বছর পর আবার নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে।
সফরের প্রথম লক্ষ্য অবশ্যই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতকে স্থায়ী সদস্য করার দাবিকে জোরালো ভাবে তুলে ধরা। তবে ঘরোয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিবেশী কূটনীতির বাধ্যবাধকতায় এত দিন করে উঠতে পারেননি, এমন বেশ কিছু কাজ তিনি এই সফরে সেরে আসতে চান বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর। সে কারণে আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তির রূপায়ণ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য নিরসনের মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ই থাকছে তাঁর কর্মসূচিতে। তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে মনমোহনের একটি দ্বিপাক্ষিক পার্শ্ববৈঠকের ব্যবস্থা করতে চায় দিল্লি। যদিও এর প্রক্রিয়া শুরু করার ক্ষেত্রে কিছুটা দেরিই করে ফেলেছে সাউথ ব্লক। অণ্ণা হজারের আন্দোলন নিয়ে গত কিছু দিন সরকার এতই ব্যতিব্যস্ত ছিল যে প্রধানমন্ত্রী আদৌ আমেরিকা সফরে যেতে পারবেন কি না, তারই কোনও নিশ্চয়তা ছিল না। ফলে ইতিমধ্যেই ওবামার সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠক স্থির হয়ে গিয়েছে। তবে বিদেশ মন্ত্রকের ধারণা, শেষ মুহূর্তে হলেও মনমোহন-ওবামা বৈঠকের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। মার্কিন প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে সমান উৎসাহী বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হয়েছে ভারত। আগামী বছর নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পদে নতুন সদস্যের অর্ন্তভুক্তি এবং পরিষদের সার্বিক সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের জন্য ভারত দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক স্তরে দরবার চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের ভারত সফরের সময়েও দিল্লি তার দাবি জোরালো ভাবে তুলে ধরেছে। সাউথ ব্লকের বক্তব্য, লক্ষ্য পূরণের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে নয়াদিল্লি। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর নিজে উপস্থিত থাকাটা বিশেষ প্রয়োজন। এর আগে গত দু’বারই তাঁর দূত হিসেবে সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ। কিন্তু এই মুহূর্তে ১২০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে তার গুরুত্ব বাড়বে বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক।
এর পাশাপাশি আমেরিকার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে দিল্লি। গত এক বছর ধরে পাকিস্তান-সহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মনমোহন সরকারের সামনে। প্রতিবেশী কূটনীতি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। এই সময়ের মধ্যে ভারত-মার্কিন মতপার্থক্য ক্রমশ বেড়েছে পরমাণু চুল্লি সরবরাহকারীদের দায়বদ্ধতার প্রশ্নটিকে ঘিরে। আমেরিকার বক্তব্য, ভারত যে আকারে পরমাণু দায়বদ্ধতা বিল পাশ করিয়েছে তাতে মার্কিন সংস্থাগুলির পক্ষে এ দেশে বিনিয়োগ করা কার্যত অসম্ভব। এর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও দু’দেশের মধ্যে অল্পবিস্তর জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, পরমাণু চুক্তির পর আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কে দিল্লির তরফে কিছুটা শিথিলতা তৈরি হয়েছে। মার্কিন শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেই ধারণায় বদল আনাও হবে মনোমোহনের অন্যতম লক্ষ্য। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে এটাই তার প্রথম আমেরিকা সফর। |