|
|
|
|
সবই তাঁর লীলা,নারায়ণ (২) |
ব্রহ্মার মানসপুত্র, কিন্তু বিষ্ণুর ক্যাম্পে। বৈকুণ্ঠের ইনসাইডার, ভারী কুচুটে নারদ নারদ।
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়
|
নারদ বললেই আমাদের মনটা কেমন তেতো হয়ে যায়, তাই না? লম্বা চুল মাথার ওপর চুড়ো করে বাঁধা, হাতে বীণা, গলায় গুনগুন, ঢেঁকি থেকে নেমে ‘নারায়ণ’ ‘নারায়ণ’ বলে এসে দাঁড়ালেন, আর অমনি সবাই তটস্থ হয়ে উঠল না জানি কোন গোপন খবরটি শুনে ফেলবেন এবং তার পর এর কথা তার কানে লাগিয়ে একটা মহা গোলমাল পাকিয়ে তুলবেন। কিন্তু দোষটা আসলে তাঁর নয়, দেবলোকের নানান মহলে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয়, নানান খবর জোগাড় করতে হয়, ওটাই তাঁর কাজ। আর জটিলা কুটিলা প্রবৃত্তিতে দেবদেবীরা তো মানুষকে বলে বলে দশ গোল দিতে পারেন, তাই নারদের আর উপায় কী?
তবে নারদকে নিরপেক্ষ বলা কঠিন। তিনি বিষ্ণুর লোক, বৈকুণ্ঠের ‘ইনসাইডার’। হবেন না-ই বা কেন? আদিতে ব্রহ্মার মানসপুত্র, কিন্তু ব্রহ্মা যখন বললেন অন্যান্য সন্তানদের সঙ্গে সৃষ্টিকার্যে হাত লাগাতে, নারদ ঘাড় গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকলেন, কারণ ও সব কাজ করতে গেলে তাঁর ঈশ্বরচিন্তায় বাধা পড়বে। এত বড় অবাধ্যতা? পিতার অভিশাপে গন্ধর্ব হয়ে জন্মালেন মানসপুত্র। তাতেও শান্তি নেই। ব্রহ্মার সভায় নৃত্যরত রম্ভাকে দেখে এক দিন এমন বেসামাল হয়ে পড়লেন যে আবার অভিশাপ। এ বার একেবারে মর্ত্যভূমিতে। নরজন্মে নারদ বিষ্ণুরসাধনা শুরু করলেন। বিষ্ণু খুশি হয়ে দেখা দিলেন। মানসপুত্রের একটা হিল্লে হল।
বলা বাহুল্য, পুরাণে ব্যাপারটা এত সহজে সমাধা হয়নি, নানা রকম জটিল কাহিনির জাল বুনতে পুরাণকারদের জুড়ি নেই। কিন্তু আমাদের পাটোয়ারি বুদ্ধিতে আসল গল্পটা বুঝে নিতে কোনও অসুবিধে হয় না একেবারে বাংলা সিনেমার কমল মিত্র মার্কা বাবার দাপটে অনেক ভোগান্তি ভুগে ছেলে শেষ পর্যন্ত ক্যাম্প পালটে বৈষ্ণব হলেন, এই আর কী। লক্ষ করার ব্যাপার, বিষ্ণু তাঁকে বর দিয়েছিলেন, তিনি ‘দেবর্ষি’ বলে পূজিত হবেন। এমন একটি বর কি আসলে ব্রহ্মার প্রতি প্রযুক্ত একটি ছোট্ট প্যাঁচ? সৃষ্টিকর্তাকে এই সিগন্যাল দেওয়া যে তুমি নিজের ছেলেকে মোটে চিনতেই পারোনি, দেবর্ষিকে লম্পট বলে অভিশাপ দিয়েছ। ছি!
তো, এমন আশ্রয় এবং আশীর্বাদ যাঁর কাছে মিলল, নারদ তাঁর আপনজন হয়ে যাবেন, সে আর বিচিত্র কী? আর, কূটবুদ্ধিতে নারায়ণের সুনাম বা দুর্নাম যা-ই বলি, চিরকালই প্রবল। সুতরাং প্রভুর আজ্ঞায় দেবর্ষিও যদি ক্রমশ একটু বেশি কূটকচালিতে জড়িয়ে পড়েন, তাঁকে পুরো দোষ দেওয়া যায় কি? যাক, এই পুরাণ সেই পুরাণের এটা সেটা তুলে নিয়ে নেহাতই একটা পল্লবগ্রাহী জগাখিচুড়ি হল, আশা করি দেবর্ষি এবং তাঁর প্রভু অপরাধ নেবেন না। নারায়ণ নারায়ণ |
ছবি এঁকেছেন সুমন চৌধুরী |
|
|
|
|
|