‘পিছিয়ে পড়া’ জঙ্গলমহল থেকে দারিদ্র ও অপুষ্টি দূর করার যতই সংকল্প ঘোষণা করুক সরকার, তৃণমূলস্তরের প্রশাসনিক আধিকারিকদের সদিচ্ছা থাকলে তো!
শুক্রবার ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে আয়োজিত ‘পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সভা’য় শ্রোতারা দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে রইলেন, এলেন না ‘বক্তা’ সরকারি আধিকারিকরাই। সভাটিই বাতিল হয়ে গেল!
ভারত সরকারের পঞ্চায়েতিরাজ মন্ত্রকের নির্দেশে পশ্চিম মেদিনীপুরের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর ঝাড়গ্রামের বিডিওকে অঞ্চল-ভিত্তিক এ ধরনের সচেতনতা সভা করার নির্দেশ দেয়। গত ২৪ অগস্ট ঝাড়গ্রামের বিডিও সুদীপনারায়ণ ওঝা লিখিত ভাবে ওই সভা করার জন্য মানিকপাড়ার পঞ্চায়েত প্রধানকে নির্দেশ দেন। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে শুক্রবার মানিকপাড়া অডিটোরিয়ামে ‘পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সভা’র আয়োজন করা হয়। সভায় ঝাড়গ্রামের সিডিপিও, ব্লক মেডিক্যাল অফিসার ও অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (মানিকপাড়া চক্র)-কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বক্তা হিসাবে। কিন্তু তিন জনের কেউই আসেননি। এমনকী ওই আধিকারিকেরা তাঁদের কোনও প্রতিনিধিও পাঠাননি। ওই সভায় শ্রোতা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেসের প্রতিনিধি-সহ কয়েক জন এসেছিলেন। কিন্তু বক্তারা না আসায় সভাটিই বাতিল করা হয়। মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান নিয়তি রানা নিজেও অনুপস্থিত ছিলেন। নিয়তিদেবীর অবশ্য দাবি, “আমি পঞ্চায়েত অফিসেই ছিলাম। বক্তারা না আসায় সভাস্থলে যাইনি। তবে পঞ্চায়েতের সচিব ও কর্মীরা সভাস্থলে ছিলেন।” মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের ক্ষমতাসীন ও বিরোধীপক্ষের কোনও সদস্যই সভায় যাননি। কেবলমাত্র এক জন নির্দল সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সেই সদস্য ছত্রধর মাহাতোর বক্তব্য, “এ দিন সভার জন্য মাইক্রোফোন-সহ আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা করেছিল পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। এ ভাবে সরকারি অর্থের অপচায় অর্থহীন।” সভায় উপস্থিত স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তাপস মাহাতো বলেন, “ঝাড়গ্রামের মতো অনগ্রসর এলাকায় পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা ভীষণই জরুরি। সেই কারণেই বক্তাদের কথা শুনতে গিয়েছিলাম। সকাল ১১টায় সভা ডাকা হয়েছিল। দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও বক্তারা না আসায় হতাশ হয়ে ফিরে আসি।” শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত স্থানীয় সিপিএম নেতা তপন মিতরও বলেন, “এমন গুরুত্বপূর্ণ সভায় সরকারি আধিকারিকেরা এলেন না, এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
ঝাড়গ্রামের বিডিও সুদীপনারায়ণ ওঝা বলেন, “সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী এ ধরনের সভায় পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে বক্তব্য রাখার কথা সিডিপিও এবং বিএমওএইচেরই। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককেও সভায় থাকতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী-সহায়িকা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও সভায় যোগ দেওয়ার কথা।”
কিন্তু বক্তারা উপস্থিত থাকলেন না কেন? ঝাড়গ্রাম ব্লকের সিডিপিও (শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিক) শ্রীকান্ত সাউয়ের যুক্তি, “বৃহস্পতিবার মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের তরফে আমন্ত্রণপত্রটি পাই। আমাকে যে বক্তা হিসেবে ডাকা হয়েছে সে বিষয়ে আমন্ত্রণপত্রে কোনও উল্লেখ ছিল না।” ঝাড়গ্রামের ব্লক মেডিক্যাল অফিসার ভূপতিনাথ মাঝি বলেন, “আমি ওই সভার ব্যাপারে কোনও চিঠিই পাইনি। এ দিন উদ্যোক্তাদের ফোন পেয়েই সভার ব্যাপারে জানতে পারি। তখন আমার গাড়িটি অফিসের কাজে অন্যত্র গিয়েছিল।” আর মানিকপাড়া চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভজিৎ মুখোপাধ্যায় ব্যস্ততার জন্য সভায় থাকতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। |