নামেই গ্রামীণ হাসপাতাল, মেলে না পরিষেবা
র্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী নেই। এক্স-রে যন্ত্র বিকল জুলাই মাস থেকে। অভাব রয়েছে জীবনদায়ী ওষুধের। চালু হয়নি অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। এই অবস্থাতেই চলছে হাওড়ার আমতা গ্রামীণ হাসপাতাল।
আমতা-১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করা হয় ২০০৬ সালে। ওই বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঘটা করে উদ্বোধন করা হয়। ১০ শয্যার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিণত হয় ৩০ শয্যার গ্রামীণ হাসপাতালে। দোতলা ভবনও তৈরি হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পরিকাঠামোর মান রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতোই। ফলে, পরিষেবার মানের উন্নতি হয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এই হাসপাতালে ৫ জন এমবিবিএস চিকিৎসকের প্রয়োজন। কিন্তু রয়েছেন সুপার-সহ মাত্র তিন জন। নার্সের প্রয়োজন ১৫ জন। রয়েছেন মাত্র ১১ জন। ১৮ জন স্বাস্থ্যকর্মীর জায়গায় রয়েছেন মাত্র ৮ জন। সাফাইকর্মী প্রয়োজন ৭ জন। রয়েছেন মাত্র ৪ জন। নেই শিশু-বিশেষজ্ঞ।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলছেন বিধায়ক নির্মল মাজি।-নিজস্ব চিত্র।
শুধু পরিকাঠামোগত সমস্যাই নয়, যে সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন তাঁরাও সকলে প্রতিদিন হাসপাতালে আসেন না। ফলে, হাসপাতালে ঠিকমতো পরিষেবা দেওয়া যায় না বলে অভিযোগ। সম্প্রতি পরিদর্শনে এসে হাসপাতালের বেহাল দশা দেখেন বিধানসভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সহ-সভাপতি তথা উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি। হাসপাতালটি পড়ে তাঁরই নির্বাচনী এলাকার মধ্যে। পরিদর্শনকালে তিনি সুপারের দেখা পেলেও বাকি দুই চিকিৎসকের দেখা পাননি। তাঁরা কোথায়, সুপারও তার সদুত্তর দিতে পারেননি।
নির্মলবাবু দেখেন, হাসপাতালের যেখানে-সেখানে পড়ে রয়েছে বর্জ্য। চার সাফাইকর্মীর মধ্যে তিন জনই সে দিন অনুপস্থিত ছিলেন। অপরিচ্ছন্ন জায়গায় আলমারিতে ডাঁই করে রাখা ছিল স্যালাইনের বোতল। নির্মলবাবু সেখান থেকে একটি স্যালাইনের বোতল তুলে নেন। নির্মলবাবু বলেন, “যে পরিবেশে স্যালাইনের বোতল রাখা হয়েছিল তা অস্বাস্থ্যকর। এটা একদমই ঠিক নয়।”
হাসপাতালে ৩০টি শয্যা থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২০টি। ফলে, রোগীর সংখ্যা বেশি হলে রাখতে হয় হাসপাতালের মেঝেতে। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন কর্মসূচিতে প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতালে ওটি থাকার কথা। সেখানে প্রসূতিদের ‘সিজার’ পদ্ধতিতে প্রসব হওয়ার কথা। এই হাসপাতালেও ওটি রয়েছে। কিন্তু চালু হয়নি ‘সিজার’। রোগীদের বাইরে থেকে মোটা টাকা খরচ করে এক্স-রে করাতে হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এক্স-রে যন্ত্র মেরামত করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এই হাসপাতালে আমতা-১ ব্লক ছাড়াও রোগী আসেন উদয়নারায়ণপুর, জয়পুর এবং হুগলির খানাকুলের কিছু এলাকা থেকে। পরিষেবা না-পাওয়ায় রোগী আসার সংখ্যা দিন দিন কমছে। অভিযোগ, এই সুযোগে আমতা শহরে একের পর এক গড়ে উঠছে নার্সিংহোম। রোগীরা বহু টাকা গচ্ছা দিয়ে সেখানে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হচ্ছেন। অব্যবস্থা প্রসঙ্গে হাসপাতালের সুপার সৌরভ সরকার বলেন, “প্রয়োজনীয় চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী না-থাকার ফলে আমরা সমস্যায় পড়েছি। এ নিয়ে আমি বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি। এই পরিকাঠামো নিয়ে উন্নত পরিষেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। অ্যানাস্থেটিস্ট এবং শিশু বিশেষজ্ঞ এলেই ওটি চালু করার ব্যবস্থা হবে। শীঘ্রই এক্স-রে যন্ত্র মেরামত করা হবে।” নির্মলবাবু বলেন, “এই হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব যাতে পূরণ করা হয় তার জন্য আমি স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলব। নৈরাজ্য দূর করতে সুপারকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.