পানশালা-কাণ্ড
কংগ্রেসে দুই গোষ্ঠীর কোন্দল প্রকাশ্যে
নাচগান বন্ধের দাবিতে পানশালায় হামলা, ভাঙচুর চালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের (সমতল) গোষ্ঠী কোন্দল এ বার প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। একদিকে জেলা কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার পানশালায় চটুল নাচ-গান বন্ধের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উল্টোদিকে, পানশালায় আপত্তিকর কাজকর্ম রুখতে আইন নিজের হাতে নেওয়ার বিরোধিতায় সরব হয়েছেন জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুজয় ঘটক ও তাঁর অনুগামীরা। শঙ্করবাবুরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, শিলিগুড়িতে কোনও পানশালায় নাচের নামে অশ্লীলতা রুখতে লাগাতার আন্দোলন হবে। পক্ষান্তরে, সুজয়বাবুরা মনে করছেন, পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভাকে কাজে না-লাগিয়ে দলীয় ভাবে বিক্ষোভ-ভাঙচুরের রাস্তায় হাঁটা কংগ্রেসের ঐতিহ্যের পরিপন্থী।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার পানশালায় চটুল নাচগান বন্ধের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বুধ ও বৃহস্পতিবার শঙ্করবাবু শিলিগুড়ির মেয়রকে সঙ্গে নিয়ে দুটি পানশালার সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। ওই সময়ে পানশালা ভাঙচুর হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। শনিবার ২ জন কংগ্রেস সমর্থককে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। পাশাপাশি, জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্করবাবু বলেন, “কংগ্রেসের কেউ কোনও ভাঙচুরে যুক্ত নয়। তবে আইন আইনের পথে চলবে। আমরা আন্দোলন, প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।” এই ঘটনার পরে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুজয়বাবু প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াটা কংগ্রেসের ঐতিহ্যের পরিপন্থী। সুজয়বাবু বলেন, “পানশালায় বেআইনি কাজকর্মের অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কিন্তু, অতীতে মুম্বইয়ে শিবসেনারা যে ভাবে ডান্স-বার বন্ধের জন্য হামলা-ভাঙচুর করেছে, সেই পথে হাঁটলে কংগ্রেসের ঐতিহ্যকে অসম্মান করা হয়। আশা করি, মেয়র ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা করবেন।” তাঁর পরামর্শ, সমস্ত পানশালায় নাচগান বন্ধ করতে চাইলে বিধায়ক বিধানসভায় প্রস্তাব আনার কথা ভাবতে পারেন।” কংগ্রেস নেতা সুজয়বাবু ও তাঁর অনুগামী শুধু নন, পানশালায় ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন আইএনটিউসি নেতা অলোক চক্রবর্তীও। পানশালার কর্মীদের ইনটাক অনুমোদিত সংগঠনের নেতা হিসেবে অলোকবাবুও বলেছেন, “কোথাও বেআইনি কাজ হলে আইন মেনে পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভা ব্যবস্থা নিতেই পারে। তা বলে দলের পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে ভাঙচুর করাটা মেনে নেওয়া যায় না।” সম্প্রতি শহরের একটি ডান্স-বারে কয়েকজন পুলিশ কর্তা মারপিটে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ সামনে আসার পরেই শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় আলোড়ন পড়ে। তা নিয়ে তদন্ত চললেও এখনও অভিযুক্ত অফিসাররা চিহ্নিত হননি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তার উপরে পানশালায় আঈপত্তিকর কাজকর্মে অভিযোগ ক্রমশ বাড়তে থাকায় কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আন্দোলনে নামেন। কিন্তু পানশালায় ভাঙচুরের ঘটনার পরে কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। তার পরেই দলের নবীন-প্রবীণ সদস্য-সদস্যাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেন দলের জেলা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত না-নিয়ে ওই ধরনের আন্দোলন হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেক সদস্য-সদস্যাই। কারণ, ভাঙচুরের ঘটনার জেরে দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করায় বণিক সংগঠনগুলি আন্দোলনে নেমেছে। ধৃতদের মধ্যে গঙ্গাধর নাকিপুরিয়া শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান। অপরজন প্রদীপ বনশাল মিষ্টির একটি চেন স্টোরের কর্ণধার। তাঁর চায়ের ব্যবসা রয়েছে। তাঁদের জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হলে মুখ্য বিচার বিভাগীয় দেবব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁদের জামিনের আবেদন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। দু’জনকে ধরা হয়েছে।” শিলিগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা ওমপ্রকাশ অগ্রবাল বলেন, “অনৈতিক ভাবে ওই দু’জনকে রাতে ধরা হয়েছে। প্রতিবাদে বন্ধ করা হয়েছে।” উল্টো দিকে, নর্থ বেঙ্গল মিউজিক্যাল বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও পানশালা বন্ধ রেখে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে। সংগঠনের পক্ষে বিজয় শর্মা বলেন, “আইন মেনে ব্যবসা করছি। তা করতে না-দিলে আন্দোলনে বাধ্য হব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.