দুষ্টের দমন। সেই সঙ্গে শিষ্টের পালনও।
এই শাস্ত্রবাক্য মেনেই কোষাগারের হাল ফেরাতে নেমেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁর এক হাতে রয়েছে সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য বরাভয়। অন্য হাতে অসৎদের জন্য শাস্তির খাঁড়া।
কোষাগারের হাল ফেরাতে অতিরিক্ত ৬,৩৯০ কোটি টাকা আয়ের কথা বাজেটে বলেছেন অমিতবাবু। তাঁর দাবি, আমজনতার ঘাড়ে করের বোঝা না-বাড়িয়ে পুরো কর-ব্যবস্থায় ‘বুনিয়াদি পরিবর্তনের’ মাধ্যমে ওই বাড়তি টাকা ঘরে তুলবেনই। আপাতত সেই ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন তিনি।
এবং দাবি প্রতিষ্ঠার রূপরেখাও ছকে ফেলেছেন অর্থমন্ত্রী। সৎ ভাবে, সঠিক সময়ে কর দিলে পুরস্কার জুটবে হাতে-হাতে। ছাড় মিলবে অ্যাসেসমেন্টে। অন্য দিকে কর ফাঁকি দিলে কড়া সাজা। চলতি বছরেই রাজ্যে চালু হচ্ছে এই ব্যবস্থা। আর এই মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে তৈরি হচ্ছে কর-আদায় বৃদ্ধির দ্বিমুখী প্রক্রিয়া। এক দিকে কর-আইন আরও সরল করে আদায়বৃদ্ধির তোড়জোড়। অন্য দিকে কর-আইনে ফাঁক-ফোকর বুজিয়ে আয় বাড়ানো। এই জোড়া দাওয়াই প্রয়োগের জন্য বর্তমান যুক্তমূল্য কর আইনে (ওয়েস্ট বেঙ্গল ভ্যাট অ্যাক্ট ২০০৩) একাধিক সংশোধন-সংযোজনও ঘটিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। |
কী ধরনের সংশোধন-সংযোজন?
অমিতবাবু বিষয়টি বুঝিয়েছেন কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে। অর্থ দফতরের অফিসারদের মতে, করের পরিমাণ নিয়ে শুনানিতেই অনেক সময়ে বেআইনি লেনদেনের সুযোগ থাকত। বিষয়টি কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা এখন বিবেচনা করছে অর্থ দফতর। অমিতবাবু জানান, যে সব সংস্থা কর বাবদ সরকারকে বছরে তিন কোটি টাকা বা তার বেশি দিয়ে থাকে, দু’-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণত তাদের আর মাল আনার সময়ে ‘ওয়ে বিল’ লাগবে না। ভ্যাটের জন্য আবেদনের পরে তার হিসাব না হওয়া পর্যন্ত, বা ‘সার্টিফিকেট ডিউস’-এর ক্ষেত্রেও পদ্ধতি সরল করা হয়েছে। ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বকেয়ার ক্ষেত্রে ডিমান্ডের ২৫% এবং তার সঙ্গে ৫% হারে সুদ দিয়েই বকেয়া নিষ্পত্তির সুযোগ পাবেন ডিলাররা।
একই ভাবে কর-আইনের বিভিন্ন ছিদ্র বুজিয়ে আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে তাতে সংশোধন-সংযোজন করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থ দফতরের খবর: রেজিস্ট্রশনে কর ফাঁকি দেওয়ার নানা পথ রয়েছে। ভুয়ো ‘ট্যাক্স ইনভয়েস’-এর মাধ্যমে বহু ডিলার সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ। সে পথ বন্ধ করতে এ বার আইন কঠোর হচ্ছে। যেমন, এই অপরাধের জন্য কোনও জরিমানার সংস্থান এত দিন ছিল না। এ বার ১২৫%-২৫০% পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।
রিটার্ন ফাইলে দুর্নীতি রুখতেও কড়া হচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। অমিতবাবু এ দিন জানান, সংশোধিত আইনে রাজ্যের প্রাপ্য করের ক্ষেত্রে রিটার্ন বার বার বদলানো যাবে না। রিটার্ন বদল করা যাবে শুধু এক বার। ভুয়ো ট্যাক্স-ক্রেডিট দাখিল করলে জরিমানার অঙ্ক ২৫% থেকে ১৫০% পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ অডিটও হবে। তাতে গোলমাল ধরা পড়লে অ্যাসেসমেন্ট-পরবর্তী রিফান্ডও আটকে দেওয়া হতে পারে। হিসেবের খাতাপত্র পেশ না-করলে জরিমানা লাগবে। ক্যাশমেমো না-দিয়ে ব্যবসা করার প্রবণতা রুখতে এই খাতে জরিমানা ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে বলে অর্থ দফতর সূত্রের খবর।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “কর আদায় পদ্ধতি সহজ করার ফলে অতিরিক্ত আয় হবে। এ ছাড়া তামাকজাত দ্রব্যে অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে কর কম নেওয়া হত। তা ছিল মাত্র ১৩.৫%। বর্তমান সরকার তা বাড়িয়ে করল ২০%।”
আয় বাড়াতে অনলাইন লটারিতেও কর বসানোর কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এ দিন তিনি বলেন, “আগের সরকার লটারির উপরে কোনও কর নিত না। বর্তমান সরকার লটারিতে কর বসিয়ে এক সপ্তাহে ২০ কোটি টাকা আয় করেছে।” |