আজ ফের আসছেন জয়রাম
মমতার সব দাবিই মানা হল জমি বিলে
তুন জমি বিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যত সমস্ত দাবি মেনে নিল কেন্দ্রীয় সরকার।
বেশ কিছু মাইল অতিরিক্ত পথ হেঁটে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে কথা বলে এই বিলের খসড়া চূড়ান্ত করলেন। গত ৩০ জুলাই কলকাতা গিয়ে জয়রাম জমি বিল নিয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনা করেন। মমতা তাঁকে বেশ কিছু প্রস্তাব দেন। সেই প্রতিটি প্রস্তাবই জয়রাম শুধু যে মেনে নিয়েছেন তা-ই নয়, এক মাস কাটতে না কাটতেই আগামিকাল জয়রাম ফের কলকাতা যাচ্ছেন মমতার সঙ্গে আলোচনা করতে। বিকাল পাঁচটায় মমতার সঙ্গে দেখা করে তিনি বোঝাবেন, কী ভাবে জমি বিলে মমতার প্রতিটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে।
মমতার প্রথম দাবি ছিল, জমি অধিগ্রহণ বিল এবং ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন বিল পৃথক কেন হবে? এই দু’টি বিষয়কে একত্রিত করা হোক। কেন না, এরা একই মুদ্রার দু’টি পিঠ। দু’টি বিষয় আলাদা থাকলে অনেক সময় জমি অধিগ্রহণ গুরুত্ব পায় এবং পুনর্বাসন উপেক্ষিত হয়। তাই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কেন্দ্রীয় আইন করতে গেলে সেখানে উচ্ছেদ হওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনের দিকটিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এই প্রস্তাবটি মেনে নিয়েছেন জয়রাম রমেশ।
দ্বিতীয়ত, এত দিন ধরে বিতর্ক চলছিল, অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভূমিকা কী হবে? অধিগ্রহণের দায়িত্ব কতটা রাজ্যের হাতে থাকবে আর কতটা বেসরকারি সংস্থা নিজেই করে নেবে। অতীতে নিরুপম সেনরা যুক্তি দিয়েছিলেন, এই ক্ষমতার পুরোটাই রাজ্য সরকারের হাতে থাকতে হবে। কেন না, রাজ্যে ভূমি সংস্কার হওয়ার ফলে অনেক ছোট ছোট টুকরোয় জমি ভাগ হয়ে আছে। এই ছোট টুকরোগুলি একত্র করা সরকারের পক্ষে সহজ। মমতার বক্তব্য ছিল, অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকাই থাকা উচিত নয়। জমির মালিক এবং ব্যবসায়ীর মধ্যে সরাসরি বোঝাপড়া হওয়া উচিত। তাঁর অভিযোগ ছিল, বামফ্রন্ট সরকার জমির দালালি করছে কেন? কিন্তু এই বিতর্ক এখন আর শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়। সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় উপদেষ্টা পর্ষদের মধ্যেও এই নিয়ে বিতর্ক চলে। এই সমস্ত বিতর্কে জল ঢেলে জয়রাম রমেশ কার্যত মমতার দাবিই মেনে নিয়েছেন। বিলে বলে দেওয়া হচ্ছে, কোনও রাজ্যে জমি অধিগ্রহণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কতটা থাকবে, বা আদৌ থাকবে কি না (অর্থাৎ সরকারের ভূমিকা কী হবে), সেটা সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারই ঠিক করুক। এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে মমতাকে পশ্চিমবঙ্গে নিজের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করার সুযোগ দিলেন জয়রাম। তা ছাড়া, এর ফলে যে কোনও রাজ্যই নিজেদের জমির চরিত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এবং সেটা পারবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই। ঠিক হয়েছে, অধিগ্রহণ যদি গ্রামীণ এলাকায় হয় এবং তা যদি একশো একরের বেশি হয় তা হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নীতির আওতায় আসবে। শহরের ক্ষেত্রে ওই সীমা হল পঞ্চাশ একর।
তৃতীয়ত, মমতার দাবি ছিল জনস্বার্থের নাম করে রাষ্ট্রের একতরফা জমি অধিগ্রহণ বন্ধ করতে হবে। চলতি আইন অনুযায়ী সরকার জনস্বার্থে জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের সময়েও বাম সরকার সেই যুক্তিই দেখিয়েছিল। মমতার এই দাবিও মেনে নিয়ে কেন্দ্র জমি বিলে এক ঐতিহাসিক সংস্কার সাধন করতে চলেছে। সেখানে বলে দেওয়া হচ্ছে, জনর্স্বাথ বলতে সরকার কী বোঝাবে তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। যেমন, প্রতিরক্ষা বা জাতীয় নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ। রেলের লাইন পাততে, জাতীয় সড়ক বানাতে, বন্দর, বিদ্যুৎ ও জলসেচের জন্য বা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকল্পের জন্যও সরকার অধিগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সিঙ্গুরের মতো বেসরকারি সংস্থার গাড়ি তৈরির জন্য জনস্বার্থ বলে অধিগ্রহণ করতে যাবে না। এবং কোনও প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ৮০ শতাংশের সম্মতি নিয়েই প্রকল্পের কাজ করতে হবে। এখানেই শেষ নয়। জনস্বার্থের কারণ দেখিয়ে অধিগ্রহণ করতে গেলে ‘জরুরিভিত্তিক’ শব্দটি রাখতে হবে। বলা হচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য, এবং কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই তবে জনস্বার্থ কথাটি ব্যবহার করতে পারবে।
চতুর্থত, মমতার দাবি ছিল বহুফসলি জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে না। সিঙ্গুরে মূল অভিযোগ এটিই ছিল। এই বিলে খাদ্য নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে জয়রাম বলেছেন, বহুফসলি জমি সাধারণ ভাবে অধিগ্রহণ করা যাবে না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যদি করতেও তবে সে ক্ষেত্রে বহুফসলি জমির একটি জেলায় শতকরা পাঁচ ভাগের বেশি করা যাবে না। রেল লাইন, বিদ্যুতের লাইন বা খাল কাটার কাজ যা সরলরৈখিক তা কেন্দ্র করতে পারে। তবে তা করতে হবে অবশ্যই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে।
পঞ্চমত, এলোপাথাড়ি অধিগ্রহণ বন্ধ করতে মমতা বলেছিলেন, জমি অধিগ্রহণ যে কারণে করা হয়েছিল সেই জমিতে সেই কাজই করতে হবে। অন্য কিছু করা যাবে না। সরকারের অনুমতি ছাড়া জমির মালিকানা পরিবর্তন করা যাবে না। এবং দশ বছরের মধ্যে অধিগৃহীত জমিতে কাজ শুরু না হয় তা হলে সেই জমি রাজ্য সরকারের জমি ব্যাঙ্কে চলে যাবে। ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে অধিগৃহীত জমি যদি গ্রামীণ এলাকায় হয়, তা হলে বাজারদরের থেকে ছ’গুণ এবং শহর এলাকায় হলে দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
চূড়ান্ত খসড়া
• অধিগ্রহণে রাজ্য সরকারের ভূমিকা কতটা, বা
আদৌ থাকবে কি না, তা রাজ্যই ঠিক করবে
• জনস্বার্থের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট
• জনস্বার্থের কারণ দেখিয়ে অধিগ্রহণ
করলে ‘জরুরিভিত্তিক’ শব্দটি রাখতে হবে
• দশ বছরের মধ্যে অধিগৃহীত জমিতে কাজ শুরু না হলে
তা রাজ্য সরকারের জমি ব্যাঙ্কে
• পুনর্বাসনে গুরুত্ব দিতে জুড়ল অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিল
মমতার আর একটি দাবি ছিল অনেক সময় অনেক জমিতে শুধু যে কৃষকেরা থাকে তা নয় সেখানে ছোট চা বিক্রেতা বা ভূমিহীন শ্রমিকেরা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। মমতার ওই দাবি মেনে বিলে একটি আলাদা প্যাকেজ রাখা হচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে জীবিকা নির্বাহের জন্য বারো মাস প্রতি পরিবারকে তিন হাজার দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এক জন সদস্যকে চাকরি দেওয়া হবে ওই প্রকল্পে। অথবা প্রতি পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। অথবা প্রতি মাসে দু’হাজার টাকা করে কুড়ি বছর ধরে দেওয়া হবে। গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি হারালে তাদের ইন্দিরা আবাস যোজনায় তাদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে। একই ভাবে পুনর্বাসন ও পুনর্স্থাপনেরও প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। এবং যে সব পুনর্বাসন করা হবে সেখানে স্কুল ও খেলার মাঠ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সড়ক ও বিদ্যুত, পরিশ্রুত পানীয় জল, পঞ্চায়েত ঘর, উপাসনাস্থল, শ্মশান, পোস্ট অফিস বানিয়ে দেওয়া হবে।
আগামী সোমবার মমতার কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে এসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনে আগ্রহী জয়রাম রমেশ। তারপর বিলটি সংসদের স্থায়ী কমিটিতে যাবে। তার পর কেন্দ্রের ইচ্ছা শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পাশ করানোর।

 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.