পুস্তক পরিচয় ২...
‘শিল্প দাঁড়ায় শিল্পভাষার গৌরবে’
‘আত্মমগ্ন, উজ্জ্বল চোখের মানুষটি ঘুরে বেড়াচ্ছেন শান্তিনিকেতনে। কিন্তু কোথায় যেন একটা তাড়ায় আছেন। যেন কোনও ‘মিশন’ আছে তাঁর।’ এ রকমই একটা ছবি এঁকেছেন কে জি সুব্রহ্মণ্যন, কথার ছবি। আর সেই ছবির পরে, যেন একটি ‘অধিকন্তু’র মতো লিখেছেন, ‘অ্যান্ড হিজ ওয়র্ক টু হ্যাজ আ মিশনারি ফোকাস।’
‘মিশনারি ফোকাস’ (ঠিক বাংলা করা গেল না কথাটার), এই কথাটাই সোমনাথ হোরের শিল্প-জীবনের সারাৎসার, মনে হল একটি বই পড়তে পড়তে। সে বইয়ের নাম রিডিংস: সোমনাথ হোর (সম্পাদক নানক গঙ্গোপাধ্যায়, ললিত কলা অ্যাকাডেমি, ৭৫০.০০)। সে বই দেখার, পড়ারও। মূলত পুরনো লেখার এই সংকলনে ন’টি লেখা, ৩৮টি ছবি। প্রথম লেখা ‘উন্ডস’। ১৯৯৫-এ সিমা গ্যালারিতে এই নামে যে প্রদর্শনীটি হয়েছিল সেখানে এই আত্মজীবনীপ্রতিম লেখাটি লিখেছিলেন সোমনাথ। তার পরে আছে গোপালকৃষ্ণ গাঁধী, যোগেন চৌধুরী, প্রণবরঞ্জন রায়, আর শিব কুমার, মৃণাল ঘোষ, শুভেন্দু দাশগুপ্তের লেখা। সোমনাথের জীবন ও শিল্পকে নানা জন পড়েছেন নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে, আর সেই পাঠ-অভিজ্ঞতারই নির্যাস ফুটে উঠেছে তাঁদের লেখায়। শিল্পীর রাজনৈতিক জীবন, তেভাগার প্রসঙ্গ, কার্টুন পর্ব এবং শান্তিনিকেতন পর্বের নানা বাঁক তুলে ধরেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ জন ও সমালোচকেরা। শিল্পের জন্য শিল্প না জীবনের জন্য শিল্প সেই পুরনো বিতর্ক তোলা থাক, কিন্তু নানা জনের পাঠে সোমনাথ হোরের শিল্পের সমসাময়িক পরিপ্রেক্ষিতটি ধরা পড়েছে নিপুণ ভাবে। খণ্ড খণ্ড ছবির মধ্য দিয়ে এক সামগ্রিক সোমনাথ ধরা থাকবেন এখানে। যোগ্য সঙ্গত করেছে লিনোকাট, ড্রয়িং, পেন্টিং, ভাস্কর্যের সুমুদ্রিত ৩৮টি প্লেট। পরিশিষ্টে জীবনতথ্য অংশটি সুবিন্যস্ত। একটি প্রশ্ন, সূচিপত্রে ‘অ্যাকনলেজমেন্টস’ এবং ‘এডিটর্স ইন্ট্রোডাকশন’-এর পাশে দু দু’বার সম্পাদকের নাম মুদ্রিত কেন? সম্পাদকেরই তো কাজ এগুলি, তবে এত বার নাম কেন? সোমনাথ হোর-এর চমৎকার একাধিক ছবি, সঙ্গে তাঁর শিল্পকর্মেরও। স্কেচ বা ব্রোঞ্জের কাজ: ছাগল, খেঁকি কুকুর, পশু, খঞ্জনি বাদক, উকুন বাছা, খেলা, ক্ষুধা ইত্যাদি। তাঁকে আর তাঁর কাজকর্ম নিয়ে নৈহাটির বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র-র বঙ্গদর্শন-এ এ বারের বিষয়: সোমনাথ হোর/ স্মরণ-সমীক্ষণ। সম্পাদক সত্যজিৎ চৌধুরী লিখেছেন: ‘ক্ষত-লাঞ্ছিত মনুষ্যত্বের কাতরতা কোন্ প্রথম যৌবনে তাঁর মর্মে বিঁধেছিল। এত বড়ো একটা সৃষ্টিময় জীবনে সেই বিষয়টিকে ব্যবহার করে এলেন। অথচ, আশ্চর্য, কখনোই তাঁর কাজ আমাদের ক্লান্ত করেনি... এইখানে প্রকরণের, আঙ্গিকের অন্তহীন উদ্ভাবনী ক্ষমতার জোর মানতে হয়। শুধু বিষয় মাহাত্ম্যে শিল্প দাঁড়ায় না, দাঁড়ায় শিল্পভাষার গৌরবে সোমনাথ হোরের কাজে এই মূল সত্য প্রমাণ হল।’ এই শিল্পীকে নিয়ে এ-সংখ্যায় লিখেছেন কে জি সুব্রহ্মণ্যন গোপালকৃষ্ণ গাঁধী প্রণবরঞ্জন রায় রামন শিবকুমার শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছে সোমনাথ হোরের নিজের কিছু লেখাও, আত্মজীবনী, চিত্রভাবনা, ব্যক্তিগত স্মৃতি ইত্যাদি। ‘আত্মজীবনীর অন্যদিক’-এ লিখছেন: ‘প্রতিভা না থাকলে মৌল উপলব্ধি সম্ভব নয়। শুধু কৃৎ কৌশল কিংবা অতীতের ধারা বহন শিল্পকলায় সমৃদ্ধি আনে না।’ মুদ্রণ পারিপাট্য ও বিষয় গৌরবে সংখ্যাটিকে বিরল প্রকাশনা বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.