নবদ্বীপের ভবতারিণী মন্দিরের অলঙ্কার চুরির কোনও কিনারা এখনও হয়নি। কিন্তু ওই মন্দিরে চুরির প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ। নবদ্বীপের সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন নাগরিক কমিটি। তাঁরা স্থানীয় ও রাজ্য প্রশাসনকে এই ব্যাপারে চিঠিও দিয়েছেন।
শহরের সাধারণ মানুষের বক্তব্য, রাত বাড়লে পোড়া মা তলার মতোই শহরের কিছু কিছু এলাকার উপর থেকে প্রশাসনের নজরদারি কমে যায়। তারপরে কোথাও কোথাও শুরু হয়ে যায় মদের আসর। কোথাও কোথাও সমাজবিরোধীদের উপস্থিতি থাকে বেশি। নবদ্বীপ নাগরিক কমিটির সম্পাদক ও হাইকোর্টের আইনজীবী দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাত বাড়লে শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আসামাজিক কাজকর্ম হচ্ছে। পোড়া মা তলা, বাজার রোড, বউবাজার এলাকায় যৌনকর্মীদেরও দেখা যায়। অথচ প্রশাসন চোখ বুজে রয়েছে।” তিনি বলেন, “নবদ্বীপের মঠ-মন্দিরে এর আগেও চুরি হয়েছে। কিন্তু খাস পোড়া মা তলাতেই বিখ্যাত একটি মন্দিরে চুরির পরে বোঝা যাচ্ছে, অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত লোকজন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।”
শহরের মানুষের বক্তব্য, নবদ্বীপে সমাজবিরোধীদের সক্রিয় থাকার কারণ, এই শহরে অপরাধমূলক কাজ করে পার পাওয়া সহজ। প্রথতম, এই শহরে প্রতি দিনই বহু পর্যটক আসেন। তাই নতুন মুখ দেখতে অভ্যস্ত শহরের মানুষ। অন্য শহরের মতো নতুন মুখ দেখলে নবদ্বীপের মানুষ সতর্ক বা অবাক কোনওটাই হন না। তাই পর্যটকের বেশে অনায়াসে ঢুকে পড়া যায় শহরের অন্দরমহলে। বেশিরভাগ মঠ-মন্দিরের দরজাই অবারিত সকলের জন্য। তাই কোথায় কী রয়েছে, তার খোঁজ খবর নেওয়াও সহজ। যে কেউ নতুন এসে কাউকে কোনও জবাবদিহি না করে অনেকদিন ধরে শহরে থেকেও যেতে পারেন। তাঁর ঠিক পরিচয় কী তা কেউ খোঁজ নিয়ে দেখতে যাবে না। তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্যই বা কী, সে কথাও কেউ জানতে চাইবে না।
তা ছাড়া পাশেই রয়েছে একটি আলাদা জেলা বর্ধমান। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, নবদ্বীপ পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার পাশাপাশি বড় ব্যবসায়ী কেন্দ্র হওয়ায়, বহু লোকের আনাগোনা রয়েছে। দিলীপবাবুর কথায়, “বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, সোনাপট্টি, বড় বাজার সবই রাতে কার্যত অরক্ষিত পড়ে থাকে। অথচ এই সব এলাকায় কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়।”
শহরের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘‘গোটা শহরের সামগ্রিক নিরাপত্তা আরও সুরক্ষিত করতে আমরা উদ্যোগী হয়েছি।” তাঁর কথায়, “নবদ্বীপ মন্দিরনগরী। শহরের নিরাপত্তা বাড়াতে আমরা চাই বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশন, শহরের শ্মশানঘাট, নবদ্বীপ ধাম স্টেশন, বিভিন্ন ঘাট এলাকা ও মন্দির এবং বাজার এলাকায় রাতে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হোক। পুলিশ যদি রাতে ওই সব জায়গায় টহল দেয় তা হলেই অনেকটা কাজ দেয়।” সনাতন সন্ত সমাজের সভাপতি অদ্বৈতদাসের কথায়, “রাতে পুলিশি টহলদারি বাড়ানোর কথা আমরা বারবার করে বলেছি। কিন্তু কোনও ঘটনা ঘটলে তারপর প্রথম প্রথম একটু নজরদারি বাড়ে। তারপরে পরিস্থিতি আবার যে কে সেই।”
নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “ভবতারিণী মন্দিরে চুরির ঘটনায় পেশাদার দুষ্কৃতীরাই জড়িয়ে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে গোটা ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। সেই মতো সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |