|
|
|
|
ঝাড়গ্রাম অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক |
অফিসে বাহিনীর ক্যাম্প, দু’টি চক্রের কাজে সঙ্কট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
অফিসঘরের দখল নিয়ে চলছে যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প। ফলে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের ঝাড়গ্রাম পূর্ব চক্র ও ঝাড়গ্রাম পশ্চিম চক্র-র দু’টি কার্যালয় উঠে এসেছে ঝাড়গ্রাম ব্লক অফিসের দোতলায় মাত্র তিনশো বর্গ ফুটের একটি ঘরে। গত দু’বছর ধরে অস্থায়ী এই অফিস থেকে কোনও মতে চলছে ওই দুই দফতরের কাজকর্ম।
এই দুই দফতরের মাধ্যমে ঝাড়গ্রাম ব্লকের অধীন ১৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও পেনশন, সর্বশিক্ষার অন্তর্গত সরকারি অনুদান প্রদান-সহ যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালিত হয়। এ ছাড়া ওই দু’টি দফতরের অধীন ৩৭টি উচ্চ বিদ্যালয়ের (জুনিয়র হাইস্কুল, হাইস্কুল, হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল) পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন ও সর্বশিক্ষা খাতে বরাদ্দ যাবতীয় অনুদান প্রদান ও কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করা হয়। এ ছাড়া ওই দু’টি চক্রের সব স্কুলের মিড-ডে মিলের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও রয়েছে এই দুই দফতর। উপযুক্ত ভবন না থাকায় দফতরের কাজকর্ম পরিচালনা করতে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। থমকে গিয়েছে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও। সমস্যার কথা জানিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলে দফায় দফায় আবেদন জানিয়েছেন ঝাড়গ্রাম পূর্ব চক্র ও ঝাড়গ্রাম পশ্চিম চক্র-র দুই অবর পরিদর্শক। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পরে গত জুনে ঝাড়গ্রাম ব্লক অফিস পরিদর্শনে এসেছিলেন বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। কী ভাবে ব্লক অফিসের অপরিসর ঘরে দু’টি দফতর চলছে তা নিজের চোখেই দেখে গিয়েছিলেন তিনি। দফতরের কর্মীরাও সুকুমারবাবুকে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। তাতেও অবশ্য সুরাহা হয়নি।
ঝাড়গ্রাম শহরের রাজ কলেজ কলোনি এলাকায় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের এক তলার তিনটি ঘরে এসআই (ঝাড়গ্রাম পূর্ব চক্র)-র অফিসটি ছিল। আর ঘোড়াধরায় এসআই (ঝাড়গ্রাম পশ্চিম চক্র)-র দোতলা অফিস। প্রাথমিক স্তরে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠন-পাঠনের দাবিতে ২০০৯ সালের মে মাসে জঙ্গলমহলের বেশ কয়েকটি অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে তালা ঝুলিয়ে দেয় সাঁওতালি সামাজিক যুব সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি মাডোয়া জুয়ান গাঁওতা’। ওই সময় ঝাড়গ্রামের ওই দু’টি দফতরের ভবনেও তালা লাগানো হয়। ওই সময় থেকেই দফতর দু’টি অস্থায়ী ভাবে ঝাড়গ্রাম ব্লক অফিসের দোতলার একটি ঘরে উঠে আসে। পরে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবনে যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প হয়ে যাওয়ায় ওই ভবনের তিনটি ঘরে থাকা এসআই (ঝাড়গ্রাম পূর্ব চক্র)-র অফিসটি আর খোলা সম্ভব হয়নি। জুয়ান গাঁওতার লাগানো তালা খুলে এসআই (ঝাড়গ্রাম পশ্চিম চক্র)-র অফিস ঘরটিও যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে ওই দু’টি চক্রের স্কুলগুলির কাজকর্ম দেখভাল করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন দু’টি দফতরের কর্মীরা। জায়গার অভাবে ব্লক অফিসের দোতলার ঘরটিতে দু’টি দফতরের কম্পিউটার, ফ্যাক্স, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের আলমারি রাখা সম্ভব না হওয়ায় সেগুলি ব্যবহার করাই যাচ্ছে না। এখন ব্লক অফিসের দোতলার অপরিসর ঘরে দু’টি দফতরের ২৮ জন কর্মী, দু’জন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং ঝাড়গ্রাম ব্লকের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক বসছেন। লোকজনের ভিড়ে প্রতি দিনই দমবন্ধ অবস্থা। কর্মীদের আবেদন, তাদের দু’টি অফিস ফেরত দেওয়া হোক। না হলে অস্থায়ী ভাবে বিকল্প প্রশস্ত জায়গায় অফিস ঘরের ব্যবস্থা করা হোক। এ দিকে, যৌথ বাহিনীর দখলে থাকা অফিস ভবন দু’টির বিদ্যুতের বিলের বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে।
পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক নবেন্দুবিকাশ গিরি এবং পশ্চিম চক্রের শুভাশিস মিত্র একযোগে বলেন, “সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি স্বপন মুর্মুও স্বীকার করেছেন, ভবন-সমস্যার জন্য ঝাড়গ্রামের দু’টি চক্রের কাজকর্মে অসুবিধা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক স্বদেশরঞ্জন প্রামাণিকের অবশ্য আশ্বাস, “ওই দু’টি দফতরের ভবন-সমস্যার সমাধানের জন্য প্রশাসনিক স্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|