|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
অসহায় কারিগর |
টানাপোড়েন |
স্বপন দাস |
কয়েক বছর আগেও এ সময়ে গ্রাম শব্দে মুখর হয়ে থাকত। কারিগরেরা কয়েক ঘণ্টা মাত্র ঘুমনোর সময় পেতেন। তাঁদের তৈরি তাঁতের শাড়ির খ্যাতিও ছিল। প্রায় সাতশোটি পরিবার এর উপরে নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন বেশির ভাগ তাঁতই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ, শাড়ি তৈরি করে যে আয় হয় তাতে সংসার চলে না। ছবিটি বিষ্ণুপুরের আমতলার কাছে কন্যানগর গভর্নমেন্ট কলোনির তাঁতশিল্পীদের।
১৯৫৬ সালে পূর্ববঙ্গের প্রায় ছ’শো জন উদ্বাস্তু তাঁতশিল্পীকে নিয়ে এসে এই গ্রামের সূচনা করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। সুতো-সহ নানা উপকরণ দিতেন মহাজনরা। কারিগরেরা শাড়ি পিছু মজুরি পেতেন। এখন গ্রামের সাতশোটি তাঁতি পরিবারের মধ্যে গুটিকয় পরিবার তাঁত চালায়। সে সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমছে। অনেকেই বেছে নিয়েছেন বিকল্প আয়ের পথ। কেউ দিনমজুরি করছেন, কেউ রিকশা চালাচ্ছেন, কেউ বা আমতলার বাজারে সব্জির দোকান দিয়েছেন।
কারিগরদের অভিযোগ, লাভ দূরে থাক, তাঁতে শাড়ি তৈরি করতে যা খরচ পড়ে বাজারে তাও মেলে না। সুতোর দাম লেছি পিছু ৮ টাকা বাড়লেও গত তিন বছরে শাড়ির দাম বাড়েনি। তা ছাড়া এখানকার বেশির ভাগ তাঁতি ‘জ্যাকার্ড’ পদ্ধতিতে শাড়ি বুনতে পারেন না। কারণ তাঁরা প্রশিক্ষণ পাননি। তা ছাড়া এই পদ্ধতি খরচ সাপেক্ষও। উৎপাদন পদ্ধতির কোনও আধুনিকীকরণ হয়নি। রয়েছে পুঁজির অভাবও।
|
|
কারিগরেরা জানান, এখন একটি শাড়ি পিছু এক জন কারিগর পান ৭০ টাকা। মাসে ২৫টির বেশি শাড়ি বোনা যায় না। সে ক্ষেত্রে মাসিক আয় ১৭৫০ টাকার মতো। এতে সংসার চলে না। কারিগর ফটিক রায় বলেন, “আমার সব তাঁত বন্ধ করে দিয়ে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করি। পুঁজি কম। এই বাজারে তাঁত টিকিয়ে রাখা কঠিন।” আর এক কারিগর গণেশ বসাক বলেন, “আমার ৬টি তাঁতের মধ্যে মাত্র একটি চলছে। সুতোর দাম বেড়েছে। কিন্তু শাড়ির দাম একই আছে।”রাষ্ট্রপতির পুরস্কারপ্রাপ্ত কারিগর কৃষ্ণেন্দু বসাক বললেন, “আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ পাইনি। পুঁজি নেই। কেউ আমাদের খোঁজ রাখে না।” কারিগরদের অভিযোগ, এই গ্রামের তৈরি বুটি ও মাঠা শাড়ির এক সময়ে খুব বিক্রি ছিল। এখন চাহিদা খুব কমে গিয়েছে। ফলে কারিগরেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারিগর এবং গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মধুসূদন বসাক বলেন, “এই ব্যবসায় লাভ হয় না। তবে আমরা সম্প্রতি একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করেছি। সরকারি সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছি।” |
|
বিষ্ণুপুর (পশ্চিম) গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান চন্দন পাল বলেন, “আমরা পঞ্চায়েতের তরফে সম্প্রতি এই গ্রামে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পঞ্চায়েত থেকে ঋণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।” রাজ্যের ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প ও বস্ত্রমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “হস্ত ও যন্ত্রচালিত তাঁত নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি। বিগত ৩৪ বছরে কিছুই হয়নি। আমাদের রাজ্যে হস্তচালিত তাঁতের নানা সুযোগ রয়েছে। এঁদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সুযোগসুবিধা দেওয়া দরকার। পর্যালোচনার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল। |
|
|
|
|
|