ঘরে-বাইরে একাধিক সমস্যায় ধুঁকছে বোড়ালের মাদার টেরিজা মেমোরিয়াল টিবি হাসপাতাল। ষাটের দশকে তৈরি দেড়শো শয্যার এই হাসপাতালকে নিয়ে রোগী, কর্মী এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের শেষ নেই। কলকাতা পুরসভা পরিচালিত এই যক্ষ্মা হাসপাতালটি গড়িয়া, সোনারপুর, বারুইপুর এবং দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ‘বোড়াল টি বি হাসপাতাল’ নামে পরিচিত।
হাসপাল সূত্রে জানা গিয়েছে এখানে মোট তিনটি ওয়ার্ড রয়েছে। দু’টি পুরুষদের এবং একটি মহিলাদের জন্য। গড়ে এখানে ১১৫ থেকে ১২০ জন যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা হয়। কিন্তু যে সব যক্ষ্মা রোগী এখানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি হতে আসেন তাঁদের জরুরি চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। এই সব রোগীকে যাদবপুরের যক্ষ্মা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
|
যক্ষ্মার চিকিৎসা এবং রোগীদের জন্য বিশুব্ধ জল খুব জরুরি। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরের অধিকাংশ সময় ওয়ার্ডের ট্যাপকলগুলো খারাপ থাকে। রোগীদের শয্যায় রেলিংয়ের বদলে অনেক সময় বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় বলে রোগীর পরিজনেরা অভিযোগ করেন। এই হাসপাতালের বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাতেও গলদ রয়েছে বলে সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন।
হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখা গেল, একটি নলকূপ খারাপ হয়ে পড়ে আছে। জায়গায় জায়গায় আগাছা গজিয়ে উঠেছে। তার মধ্যে রয়েছে পার্থেনিয়ামের মতো বিষাক্ত গাছ। এই সব সমস্যার ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের সুপার দেবাশিস চৌধুরী শুধু বলেন, “আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া একটি কথাও বলতে পারব না।” |
রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, রাত হলে এই হাসপাতাল চত্বর ধোঁয়ায় ভরে যায়। ফলে রোগীদের খুব কষ্ট হয়। এলাকার মানুষের বক্তব্য, শুধু হাসপাতাল চত্বরই নয়, সংলগ্ন এলাকাও ধোঁয়ায় ভরে যায়। এলাকার শিবপ্রসাদ রায়ের অভিযোগ, “এখানে ভাঁড় তৈরির কারখানা রয়েছে। রাত ৮টার পরে কারখানার চিমনি থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে। সেই ধোঁয়ায় টিবি হাসপাতাল-সহ এলাকার বিভিন্ন বাড়ি ঢেকে যায়।” টালিগঞ্জের বিধায়ক তৃণমূলের অরূপ বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘এই হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য আবেদন জানিয়ে আমি কলকাতার মেয়রকে চিঠি দিয়েছি। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই এই হাসপাতালের উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হবে।”
হাসপাতাল সংলগ্ন পুকুরটি নিয়েও বাসিন্দারা সরব হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য: পুকুরটির দীর্ঘ দিন কোনও সংস্কার হয়নি। জঙ্গলে ভরে গিয়েছে চার দিক। বিভিন্ন রকমের পোকামাকড়ের উপদ্রবে বসবাস করা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুকুরটি এখন আবর্জনা ফেলার জায়গা হয়েছে। দুর্গন্ধে এক এক সময় ঘরের জানলা-দরজা বন্ধ করে থাকতে হয়। |
কলকাতা পুরসভার ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, “এখানকার বাসিন্দারা আমাকে দু’টি সমস্যার কথাই জানিয়েছেন। ভাঁড় কারখানা ওখানে দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছে। তাই এই সমস্যা আলোচনার মাধ্যমেই মেটাতে হবে। পুকুরটি এখনও ব্যক্তি মালিকানার আওতায় রয়েছে। পুরসভার পরিবেশ দফতরের কাছে পুকুরটির সমস্যার সমাধান নিয়ে আবেদন জানাব।” পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যতম মেয়র পারিষদ পার্থপ্রতিম হাজারি বলেন, “বোড়ালের যক্ষ্মা হাসপাতালটি ২৬ বিঘা জায়গা জুড়ে রয়েছে। এই জায়গাকে কাজে লাগিয়ে পুরসভা এখানে আরও একটি উন্নতমানের হাসপাতাল তৈরির কথা বিবেচনা করছে।” |