‘পেলের চেয়ে অনেক বেশি মনে রাখার মুহূর্ত উপহার দিল মেসি’
কেউ মুগ্ধ। কারও পুরো প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। শহরে পেলে আর মারাদোনা দেখার সঙ্গে মেসি-দর্শনের তুলনা টানাতেও নানান অভিব্যক্তি পাওয়া গেল এগারো প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলারের থেকে। মেসির নানান টাচের ড্রিবলিংয়ের মতোই।
মেসির জন্য ভুভুজেলার ছোঁয়া যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
আর্মান্দো কোলাসো: ভারতের জাতীয় দলের কোচ হিসেবে অনেক কিছু শিখলাম এই ম্যাচ থেকে। মেসিকে দেখে আমি মুগ্ধ।

চুনী গোস্বামী: কলকাতায় এলেও মারাদোনা খেলেনি। তাই ওকে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু পেলে আর মেসির মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। পেলে যখন এসেছিল ও খারাপ কন্ডিশনে ছিল। ঠিক ভাবে বল ধরতেও পারেনি। ইডেনের সেই ম্যাচে ওর একটা ফ্রি-কিক আর স্পট-কিক ছাড়া আমার কিছুই মনে পড়ছে না। সেখানে মেসি নিজের সেরা ফর্মে খেলে গেল। ওর মধ্যে সবচেয়ে ভাল লাগল গতি বাড়ানোর ক্ষমতা।

প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: পেলের কসমস ম্যাচে আমি মোহবাগানের কোচ ছিলাম। তাই অনুভূতিটা আলাদা। সেখানে আজ মাঠের বাইরে বসে দেখলাম খেলাটা। মেসিকে খুব ভাল লাগল। অদ্ভুত বল কন্ট্রোল ছেলেটার।

গৌতম সরকার: কলকাতায় মেসির খেলার চারটে জিনিস আমি জীবনে ভুলব না। চার রকমের চারটে মুভ। ওয়াল মুভ, শ্যাডো মুভ, থার্ডম্যান মুভ আর ক্রস ফিল্ড মুভ। ওহ! চারটেই অসাধারণ!

মানস ভট্টাচার্য: মেসি এসেছে কেরিয়ারের মধ্যগগনে। এটা পেলে বা মারাদোনার থেকে একদম আলাদা। কোনও তুলনাই হয় না। তবে ওকে বার্সেলোনার হয়ে এত শট বা ফ্রি-কিক নিতে হয় না, যতটা আর্জেন্তিনার হয়ে আজ ওকে নিতে হল। তবে আর্জেন্তিনার যা হাল দেখলাম ভাল কিছু নয়। সাবেইয়ার বোঝা উচিত শুধু মেসিকে দিয়ে বিশ্বকাপে উতরানো যাবে না।

বিদেশ বসু: পেলের ম্যাচটা আমরা খেলেছিলাম। তাই ওটার অনুভুতি আলাদা। ওটার সঙ্গে কোনও ম্যাচেরই তুলনা হয় না। তবে মেসিকে চোখের সামনে এই যে প্রচুর ভারতীয় দেখতে পেল, এটাই প্রাপ্তি।

শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়: বিশ্বের জনপ্রিয়তম ফুটবলার খেলল। আমাদের কাছে এটাই বড় ব্যাপার। কী বল কন্ট্রোল! এই মুহূর্তে ওর মতো বল প্লেয়ার আর নেই। চোখে ধাঁধা লেগে গেল। বার্সেলোনা ইনিয়েস্তা-জাভির পাশে যে রকম খেলে, সে রকমই খেলছিল। আর পেলে যখন এসেছিল তখন এত উন্মাদনা ছিল না। মারাদোনা তো খেলেইনি।

অতনু ভট্টাচার্য: পেলের সময় হইচই আরও বেশি ছিল। এখন টিভিতে সব দেখিয়ে দেয় বলেই মনে হয় মানুষের উৎসাহ একটু কম। তবে মেসির টাইমিং এবং বল টাচ এত ভাল যে, ওকে মার্কিং করা অসম্ভব।
শুক্রবারের যুবভারতী। মেসির ছবি তুলতে সমান উৎসাহ নিরাপত্তারক্ষীদেরও। ছবি: উৎপল সরকার
প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়: পেলে ফুটবলের রাজা। ব্রাজিলকে ভালবাসতাম। কিন্তু সে সময় একটা বিশ্বকাপও দেখা হয়নি। তাই পেলে আসার উৎসাহটা অন্য রকম ছিল। পকেটে ওই ম্যাচের পাঁচটা টিকিট মানে কলকাতার হিরো আমি। সেখানে একটা আঙুল ঘোরালেই মেসির সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে যায়। ইন্টারনেটের এমনই মহিমা। আর মারাদোনা? ওকে তো ধর্তব্যের মধ্যেই রাখছি না। কলকাতায় এসে শুধু হাত নেড়ে চলে গেল। ইচ্ছা, আশা কিছুই মেটেনি।

প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়: ইডেনে যে দিন পেলে খেলেছিল প্রচণ্ড কাদায় বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। ২-৩টে পাস আর একটা ফ্রি-কিক ছাড়া আর কিছু দেখিনি। মেসি কিন্তু পুরোপুরি মন ভরিয়ে দিল। কী স্পিড! সেই গতিতেই উইং দিয়ে ভিতরে ঢোকা। অফ দ্য বল স্পিডও অসম্ভব বেশি।

অলোক মুখোপাধ্যায়: মেসি বিশ্ব মাতিয়ে এখানে এসেছে। পেলে কিন্তু কেরিয়ারের একেবারে শেষে এসেছিল। পার্থক্য তো থাকবেই। তবে আমি অবাক পুরো মাঠ ভরতে না দেখে। ইডেনে অনেক বেশি দর্শক ছিল। মেসির মধ্যে সবচেয়ে ভাল লাগল মাঠে ওর ঠান্ডা মনোভাব দেখে। যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ওকে ক্যাবলা লাগে, কিন্তু পায়ে এক বার বল এলে যে কোনও ডিফেন্স চুরমার করে দিতে পারে।

দীপেন্দু বিশ্বাস: পেলে-মারাদোনার কলকাতায় আসার সঙ্গে মেসির এখানে আসার অনেক তফাত। পেলে ইডেনে খেললেও তিনি এসেছিলেন ফুটবল জীবনের একেবারে শেষ লগ্নে। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর। আর মারাদোনা তো এসে শুধু একা-একা বল জাগলিং দেখিয়েছিলেন। বরং ফোরলান এসেছিল বিশ্বকাপে সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হওয়ার পরেই। কিন্তু বিশ্বসেরা মেসি নিজের সেরা ফর্মে জাতীয় দলের হয়ে কলকাতায় খেলল এবং কী অসাধারণ-ই না খেলল! আর মেসির সেই অবিশ্বাস্য ফুটবল স্কিল আমি নিজের চোখে দেখলাম মাঠে বসে!

জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়: যতটা প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে গিয়েছিলাম, খেলা দেখে ততটা মন ভরেনি। মেসি ছাড়া আর্জেন্তিনার আর কোনও ফুটবলারকে ভাল লাগল না। টিভি-তে বার্সেলোনা বা আর্জেন্তিনার ম্যাচ যে গতিতে হতে দেখি, সল্ট লেক স্টেডিয়ামে সেই গতিতে কিন্তু খেলা হতে দেখলাম না।

সুভাষ ভৌমিক: সবচেয়ে অবাক লাগল এই ম্যাচ দেখতেও তেমন বেশি দর্শক এল না যুবভারতীতে! এর চেয়ে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে বেশি লোক হয় স্টেডিয়ামে। এত বেশি টিকিটের দাম যে, সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সে জন্যই মেসির খেলা দেখতেও মাঠ ভরল না।

নেহা ধুপিয়া: মেসিকে দেখতে মুম্বই থেকে এত দূর ছুটে এসেছিলাম। মেসিকে দেখে মন ভরে গেছে। তবে খুব ইচ্ছে ছিল মেসিকে একটা চুমু দেওয়ার। ওর কাছে যেতে না পারায় সেই ইচ্ছেটা অবশ্য পূরণ হল না। সেই জন্য আনন্দের পাশাপাশি একটা দুঃখও রয়ে গেল আমার।

প্রফুল্ল পটেল: সত্যিকারের বড় মাপের আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ ভারতের মাটিতে আয়োজন করার ব্যাপারে কলকাতা শিলান্যাস করল আজ। এর পর এ রকম ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ম্যাচ আরও হবে ভারতে। গোটা দেশের নানা শহরে। আর নতুন করে সাজা যুবভারতী দেখেও আমি মুগ্ধ। এর পর রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামকেও অত্যাধুনিক করা হবে। এবং সেখানে শুধু ফুটবল ম্যাচই হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.