মেসিময় যুবভারতী
পুলিশের ভয়ে মেসি বললেন, বাঁচাও
তাঁকে রক্ষা করা যাঁদের দায়িত্ব ছিল সেই পুলিশ বাহিনীর ভয়েই শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন না ফুটবলের রাজপুত্র! ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহাসিক ঘটনার দিনে নীরবই থেকে গেলেন লিওনেল মেসি। মাঠ ছাড়ার সময় নখের আঁচড়ে ছড়ে যাওয়া বাঁ-হাত দেখিয়ে মেসি তাঁর সঙ্গে থাকা দোভাষী দিব্যজ্যোতি মুখোপাধ্যায়কে বলেন, “নো মে বেখাস। সালভানে।” বাংলায় তর্জমা করলে যার অর্থ, “আমাকে ছেড়ে যেও না। বাঁচাও।” এতটাই ভয় পেয়ে যান যে, মিক্সড জোনে এসেও কথা বলতে চাননি।
ফ্রেন্ডলি ম্যাচেও বিপক্ষের মার খেতে হল।
নব্বই হাজারের স্টেডিয়াম থেকে বেরনোর সময় সারা ম্যাচে তাঁর পায়ের জাদুতে আপ্লুত দর্শকদের অভিবাদন জানালেন আর্জেন্তিনা স্ট্রাইকার। হাত তুলে। বার্সেলোনার হয়ে গোল করে দলকে জেতানোর পর যে কায়দায় হাত তোলেন সমর্থকদের উদ্দেশ্যে। সে দৃশ্যই দেখল যুবভারতী। কিন্তু ড্রেসিংরুমে ফিরেই তিনি নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর আতঙ্কের কথা জানিয়ে দেন টিম ম্যানেজমেন্টকে। যে ভাবে সব রকম নিরাপত্তা দেওয়া শিকেয় তুলে রেখে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ছবি তোলার জন্য দলে দলে পুলিশ মেসিকে মাঠ থেকে বের করার সময় ধাক্কাধাক্কি করলেন, তাতে আর্জেন্তিনা অধিনায়ক বড় রকমের আঘাত পেতেই পারতেন। তাঁকে কোনও রকমে টানেল দিয়ে বের করে নিয়ে যান দলের সঙ্গে আসা বিশাল চেহারার ফিফা স্বীকৃত এজেন্ট রডরিগে। আর্জেন্তিনীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে যুবভারতীর দর্শকদের সম্পর্কে প্রশংসা করলেও কলকাতা ঘুরে যাওয়া দিয়েগো মারাদোনার মতোই তাঁর উত্তরসূরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি পুলিশের আচরণ নিয়ে। আসলে বিশ্বের যেখানেই যান সেখানেই তো তাঁকে ঘিরে থাকে শুক্রবারের মতোই উদ্দীপনা আর আবেগ। তাতে নিজেকে সেঁকে নেওয়া তাঁর অভ্যাসের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু পুলিশের এই আদেখলাপনা দেখা তো মেসির ধাতে নেই!
পুলিশও যখন যন্ত্রণার কারণ।
অথচ এ দিন সকাল থেকেই দারুণ মুডে ছিলেন মেসি। যে হোটেলে আর্জেন্তিনা উঠেছে, সেই হায়াত রিজেন্সিতেই উঠেছেন মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি থেকে আসা বহু মানুষ। শুধু তাঁকে একবার দেখার জন্য। সেই সব পরিবারের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাতে নীল-সাদা পতাকা, তাঁর নামে জয়গানের প্ল্যাকার্ড, গায়ে পরে থাকা তাঁর দশ নম্বর জার্সি দেখে, সম্ভবত অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র। তাই বলরুমে নেটবল, সেপাকটাকরো খেলে ফেরার পথে হঠাৎ-ই নিজে থেকে সেই সব ফুটবল পাগল কচিকাঁচাদের কাছে চলে এলেন মেসি। বাড়িয়ে দেওয়া খাতায় সই করতে। তখন তাঁকে দেখাচ্ছিল শিশুর মতো। কিন্তু টিম বাসে উঠে যুবভারতীতে ঢোকার সময় আবার তিনিই একেবারে অন্য মানুষপেশাদার ফুটবলার। গম্ভীর, চিন্তিত। নতুন কোচ আলেহান্দ্রো সাবেইয়ার কোচিংয়ে প্রথম ম্যাচ বলেই হয়তো প্রমাণ করার তাগিদটা বেশি ছিল। তা ছাড়া হয়তো মাথায় ছিল কলকাতায় তাঁকে নিয়ে আবেগের বিস্ফোরণে কথাও।
‘ভেনেজুয়েলার মেসি’ রিঙ্কনের সঙ্গে।
যুবভারতী এ দিন সব অর্থেই ছিল মেসি-ময়। আর্জেন্তিনা দলে বহু তারকা ফুটবলার থাকলেও মেসির নামওয়ালা জার্সি পরে এসেছিলেন বহু দর্শক। যাঁদের বেশির ভাগই তরুণ বা তরুণী। মেসির পোস্টারও ছিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে। স্বপ্নের নায়কের ভাল একটা পাস, ভাল শট বা কর্নার দেখে সমুদ্র গর্জন হয়েছে বারবার। সেটা এতটাই যে, মনে হচ্ছিল সারা মাঠে একজনই খেলছেনমেসি। বাকি ২১ জন নিতান্তই অপাংক্তেয়। মেসি বনাম ভেনেজুয়েলা লড়াইতে ওতামেন্দি গোল করে যতটা না হাততালি পেলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি উচ্ছ্বাস দর্শকরা দেখালেন মেসির ড্রিবলিং, ফ্রি কিক বা কর্নারের সময়। আবার তাঁর শট পিছনের পোস্টে আছড়ে পড়লে বা ভেনেজুয়েলা গোলকিপার রাফায়েল রোমো আটকে দিলে আফশোস আর হতাশায় ডুবে গিয়েছে পুরো স্টেডিয়াম। এটা ঘটনা যে, সাধারণত সমাজের যে অংশ কলকাতা ফুটবল মাঠে আসেন না, তাঁদের অনেকেই এসেছিলেন মেসির টানে। চুনী গোস্বামী থেকে ভাইচুং ভুটিয়া, শান থেকে বাবুল সুপ্রিয়রা তো ছিলেনই, ছিলেন বহু কর্পোরেট কর্তাও। প্রচুর মহিলাও। হাসলে ডান গালে টোল পড়ে মেসির। তখন তাঁকে মনে হয় শিশুর মতো। জাদু দেখানোর পর তাঁর উচ্ছ্বাস দেখে সেই মুখটা ফিরে আসছিল বারবার। প্রচণ্ড গরম ছিল এ দিন। সঙ্গে আর্দ্রতাও। এতটাই যে, সুযোগ পেলেই বোতল থেকে জল ঢেলেছেন মাথায়। চুল আর মুখ ভিজিয়ে ফিরে গিয়েছেন মাঠে। একবার কৃত্রিম টার্ফে দৌড়ে দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে হাঁটু ধরে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। সাবেইয়া তাকে ইশারা করেন, বসবেন কী না জানতে চেয়ে। মেসি বাইরে আসেননি। খেলেছেন পুরো সময়। তাঁর কর্নার থেকে হওয়া গোলে জিতেছে আর্জেন্তিনাফুটবল বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতা থেকে অধিনায়ক মেসির বিজয় বার্তা।
কিন্তু সেই কলকাতায় কি মেসি আর কখনও আসতে চাইবেন? এক আর্জেন্তিনীয় সাংবাদিককে ম্যাচের পরই কিন্তু বলে দিয়েছেন, “কলকাতার লোকগুলো সুন্দর। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা ভয়ঙ্কর। কোথাও এভাবে পুলিশ ছবি তোলার জন্য গায়ে এসে পড়ে দেখিনি।”

ছবি: উৎপল সরকার



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.