|
|
|
|
কর্মীর অভাব, হুগলিতে ধুঁকছে যুবকল্যাণ দফতর |
পীযূষ নন্দী • আরামবাগ |
প্রতিটি ব্লকেই সরকারি যুব কল্যাণ দফতর খাতায়-কলমে আছে। কিন্তু হুগলি জেলায় তার কার্যকারিতা কমতে কমতে প্রায় বন্ধের মুখে। অধিকাংশ অফিস আধিকারিকহীন। দু’এক জন কর্মী সম্বল করে অফিসগুলি মাঝেমধ্যে খোলে। কিন্তু খুললে কখন খোলে, কখন বন্ধ হয়, তার কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। রয়েছে আর্থিক সঙ্কটও। ওই দফতরটি থেকে কী কী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, তার খোঁজ আমজনতা প্রায় রাখে না বললেই চলে। দফতরটি নিয়ে উৎসাহহীন হয়ে পড়েছেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। মহকুমা প্রশাসন, সর্বোপরি জেলা প্রশাসনও এই পরিস্থিতিতে বিরক্ত।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সৌম্য পুরকায়স্থ বলেন, “বিভাগীয় মন্ত্রীকে কর্মীর অভাবের কথা জানিয়েছি। দফতরের অনেক কাজ রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কর্মী না থাকায় তা রূপায়ণে সমস্যা রয়েছে।” যুব কল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক দিলীপকুমার দাস বলেন, “এত কম কর্মী নিয়ে কোনও দফতর থেকেই স্বাভাবিক পরিষেবা দেওয়া যায় না। এক-এক জন আধিকারিককে চার-পাঁচটি ব্লকের দায়িত্ব সামলাতে হয়। অনেকে আবার অসুস্থ। দফতরের স্থবিরতা কাটাতে অবিলম্বে কর্মী প্রয়োজন।” কর্মীর অভাবের কথা মেনে নিয়ে রাজ্যের যুবকল্যাণ মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “বিভিন্ন জেলায় যুব কল্যাণ দফতরের একই অবস্থা। আমরা দফতরটি সচল করার চেষ্টা করছি। তবে কিছুটা সময় লাগবে।”
রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে যুব কল্যাণ দফতরের সূচনা হয় ১৯৭৪ সালে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, শেষবার এই দফতরে কর্মী নিয়োগ হয় ১৯৮০-৮১ সালে। যাঁরা এখনও কাজ করেন, তাঁদের অধিকাংশই অবসরের মুখে। আধিকারিকদের চার পাঁচটি অফিস সামলাতে হয়। যেমন, শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া, খানাকুল-১ ও ২ ব্লক এবং শ্রীরামপুর পুরসভার যুব কল্যাণ দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন শেখর কোলে। পুড়শুড়া, আরামবাগ, গোঘাট-১ ও ২ ব্লক এবং আরামবাগ পুরসভা এলাকার যুব কল্যাণ দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন গোপালচন্দ্র দে। দু’জনেরই বক্তব্য, “সাঙ্ঘাতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে দফতরটি। আমরা ছোটাছুটি করে বিপর্যস্ত। কাজের কাজ বিশেষ হচ্ছে না। বিভিন্ন কর্মসূচির টাকাও ঠিকমতো মিলছে না।”
ব্লক যুব কল্যাণ দফতর থেকে বছর পাঁচেক আগে পর্যন্ত ফুটবল, ক্যারম, ভলিবল, ক্রিকেট প্রভৃতি খেলার সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এলাকার ক্লাবগুলিতে দেওয়া হত। অফিসে থাকত যুব সমাজের পাঠোপযোগী বিভিন্ন পুস্তিকা। ছাত্রছাত্রী এবং ক্লাবগুলিকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হত। খেলার মাঠ সংস্কারও হয়েছে এই দফতরের মাধ্যমে। এ ছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের আলোচনাসভা আয়োজন করা হত। এখন কর্মসূচি বলতে বছরে একটি ‘যুব উৎসব’ হয়। তা-ও পঞ্চায়েত সমিতিকে তার অনেকটাই দায়িত্ব নিতে হয়। ‘বাংলা স্বনির্ভর কর্মসংস্থান’ প্রকল্পটিও এখন বিডিওদের হাতে দেওয়া হয়েছে। শুধু পুর এলাকায় এই প্রকল্পটি দেখভাল করে যুব কল্যাণ দফতর। দফতরের অধিকাংশ অফিস চলে ভাড়াবাড়িতে। সেগুলির পরিকাঠামো বেহাল। বিল না মেটানোয় খানাকুল-১ ব্লকের ওই অফিসের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। গোঘাট-১ এর বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল বছর খানেক আগে ওই দফতরে তালা ঝুলিয়ে দেন।
জেলার ১৮টি ব্লকের মধ্যে গোঘাট-২ ছাড়া সর্বত্রই যুব কল্যাণ দফতরের অফিস রয়েছে। এ ছাড়া, ৯টি পুরসভার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম দেখভালের কথা তাদের। জেলার ২৭টি অফিসের জন্য আধিকারিকের সংখ্যা মাত্র ৯ জন। কর্মিসংখ্যাও হাতে-গোনা। প্রশাসনিক আধিকারিকদের অনেকে মনে করছেন, দফতরটিকে ব্লক অফিসের সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে ভাল হবে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘পঞ্চায়েত যুব ক্রীড়া ও খেল অভিযান’ (পাইকা) প্রকল্পটি চালু রাখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন দিলীপবাবু। ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় প্রকল্পটি রাজ্যের নানা জায়গায় চালু হলেও হুগলিতে হয় ২০০৯ সালে। সম্প্রতি জেলার চণ্ডীতলা, তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া এবং খানাকুল-১ ব্লককে ‘পাইকা’ সেন্টার ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ব্লকগুলিতে খেলাধূলোর উন্নয়নের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ শিবির করে খেলার আয়োজন এবং ক্লাবগুলিকে খেলার সরঞ্জাম দেওয়ার কথা। |
|
|
|
|
|