আজ থেকে নতুন ভবনে শুরু হল ত্রিপুরা বিধানসভার বাদল অধিবেশন। পূর্ণ রাজ্য হওয়ার পর গত চার দশক ধরে ৬০ সদস্য বিশিষ্ট বিধানসভার এত দিনের ঠিকানা ছিল শহরের উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদ। সেখান থেকে রাজ্য বিধানসভা ক্যাপিটাল কমপ্লেক্সে (নতুন ভবনে) স্থানান্তরের পর এটাই হচ্ছে প্রথম অধিবেশন। এ বারের অধিবেশন দু’দিনের। ১০ ও ১১ জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে এ দিন এক সময় কংগ্রেস সদস্যরা সরকারের মনোভাবে উষ্মা প্রকাশ করেন।
এই অধিবেশন নিয়ে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা রতনলাল নাথ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, বিধানসভাকে এড়িয়ে বিরোধী দলকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা বাড়ছে রাজ্য সরকারের। ক্রমশ অধিবেশনের দিন কমে যাচ্ছে। সরকারে এই মনোভাবকে রতনবাবু ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ বলে বর্ণনা করেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক দাবি করেন, বিধানসভার কর্মসূচি দিনক্ষণ ঠিক হয় বিজনেস অ্যাডভাইসারি বোর্ডে। সেখানে তো বিরোধী দলের সদস্যরাও আছেন। তা ছাড়া, সরকারি কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা না করে ঠিক করা হয় না।
কংগ্রেসের আশঙ্কা, পূর্ত, স্বাস্থ্য, গ্রামোন্নয়ন, নগরোন্নয়ন, উপজাতি কল্যাণ, বন, নিয়োগ, পরিসংখ্যান, পঞ্চায়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু দফতর প্রসঙ্গে কোনও প্রশ্নই তোলা যাবে না। মাত্র আর ১৬-১৭ মাস বাকি রাজ্য বিধানসভার পরবর্তী নির্বাচন। তাই বহু বিষয়েই বিধানসভায় আলোচনা হওয়া জরুরি।
নিয়মমাফিক অধিবেশন আরম্ভ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সরকার ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়ে যায়। আজকের অধিবেশনে সমস্ত প্রশ্নগুলি ছিল উচ্চশিক্ষা, স্কুলশিক্ষা, সামাজিক কল্যাণ, তথ্য ও সংস্কৃতি, পর্যটন, ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ, সংখ্যালঘু, তপশিল জাতি ও উপজাতি কল্যাণ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দফতর কেন্দ্রিক। প্রথম দিকে অধিকাংশ প্রশ্ন আসছিল শাসকদলের বিধায়কদের থেকে। এ প্রসঙ্গে বিরোধী দল কংগ্রেসের তরফে বিধানসভার অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে, বিরোধী সদস্যরাও প্রশ্ন করতে থাকেন সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীদের। উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী অনিল সরকার, স্কুল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী প্রত্যেকেই আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিলেন।
সাড়ে বারোটা পর্যন্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল শান্তিতেই। তারপর টিএমসি-তে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ১০ ও ১১ জুলাইয়ে আগরতলায় সাংবাদিক সহ বিরোধী দলের সমর্থক ও সদস্যদের উপর পুলিসি ‘আক্রমণ’ প্রসঙ্গ টেনে এনে বিরোধী কংগ্রেস সদস্যরা সভায় ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ প্রসঙ্গে আলোচনার দাবি করলে স্পিকার অনুমতি দেননি। স্পিকার জানান, টিএমসি নিয়ে ‘রেফারেন্স’ প্রশ্ন আলোচনাকালেই এ প্রসঙ্গে কথা বলা যাবে। অধ্যক্ষের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ওয়েলে নেমে এসে বিরোধী দলের সদস্যরা সে দিনের ঘটনার বিভিন্ন ছবি সভায় দেখানোর চেষ্টা করলে সভায় হইহট্টগোল শুরু হয়ে যায়। স্পিকার সভার কাজ প্রথমে ১৫ মিনিট, পরে এক ঘণ্টা জন্য মুলতবি করে দেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে দুটো নাগাদ সভা শুরু হলে আবার একই বিষয়ে বিরোধীপক্ষ সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। কিন্তু এরই মধ্যে শাসক দলের সদস্যরা বিধানসভার পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানোর জন্য তিনটি প্রস্তাব সভায় পেশ করেন এবং সংখ্যগরিষ্ঠতার জোরে ধ্বনি ভোটে সেগুলি গৃহীত হয়। এ দিকে, বিরোধী দলের দাবি না মেনে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫ মিনিট সভার কাজ চলার পরই অধ্যক্ষ আজকের মতো সভার কাজ মুলতবি ঘোষণা করেন। বিধানসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দিনের বাদল অধিবেশনে রাজ্য সরকারের তরফে কোনও জরুরি বিষয়ে আলোচনা বা বিল পেশ করা হচ্ছে না। |