রাজ্যে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে আরও দুই ধাপ এগোল অসম সরকার। আজ মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, আদিবাসী ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (আনলা) সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে শান্তি আলোচনা শুরু করতে চেয়েছে। একই সঙ্গে আগামিকাল কার্বি জঙ্গি সংগঠন কেএনএলএনএফ-এর সঙ্গে প্রথম শান্তি আলোচনায় বসতে চলেছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। গগৈ জানান বৃহস্পতিবারআনলার তরফে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, তারা সংঘর্ষের রাস্তা ছেড়ে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়। সেই জন্য তাদের তরফে, অনির্দিষ্টকালের জন্য সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি, আগামিকাল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রথমবার শান্তি বৈঠকে বসতে চলেছে কেএনএলএনএফ।
গগৈয়ের আশা, এইভাবে, বাকি উপাজাতি জঙ্গি সংগঠনগুলিকেও অতি দ্রুত মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা যাবে। রাজ্যে মাওবাদীদের বাড়বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে নিয়ে গগৈ জানান, রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপের উপরে কড়া নজর রাখছে সরকার। গগৈ এও জানিয়ে দেন, বড়ো জঙ্গি সংগঠন এনডিএফবি ও ইউপিডিএফ-এর সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়াও সঠিক পথে এগোচ্ছে। তবে, পৃথক বড়োল্যান্ড রাজ্য গঠনের দাবি কিছুতেই মানা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
এ দিকে, কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য আজ দিল্লি রওনা হল আলফার তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। আলফা সহ সেনাধ্যক্ষ রাজু বরুয়া, বিদেশ সচিব শশধর চৌধুরি ও অর্থ সচিব চিত্রবন হাজরিকা আগামিকাল, স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি হওয়ার পরে, আলফার প্রায় ৫০০ জঙ্গি সদস্যকে অস্ত্র জমা দিয়ে সরকার স্বীকৃত শিবিরে গিয়ে থাকতে হবে। ইতিমধ্যেই, তিনসুকিয়া ও নলবাড়ির শিবিরগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ২০০ জঙ্গি। তবে, অস্ত্র জমা রাখা হয়নি। চুক্তি সই করার পরে, আলফা নেতাদেরও অস্ত্র রাখতে বা নিজস্ব সশস্ত্র দেহরক্ষী রাখতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে, সরকারি দেহরক্ষী পাবেন রাজখোয়ারা। তবে, আগামিকালের বৈঠকে, দাবি সনদ বিষয়ে কোনও আলোচনা হবে না।
জমি বিতর্ক নিয়ে। জমি বিতর্ক প্রসঙ্গে বিরোধীদের একহাত নিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আসন্ন বাংলাদেশ সফরের আগে গগৈয়ের বিরুদ্ধে বিরোধীরা যে হইচই জুড়েছে সেই ব্যাপারটাকেই পুরোপুরি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ’বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। ২৭ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ জানিয়েছিলেন, অসম ও বাংলাদেশের মধ্যে বিতর্কিত যে সব এলাকা নিয়ে বিবাদ চলছে, সেই সব জমির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ইচ্ছানুযায়ী দেওয়া-নেওয়া নীতি নেওয়া হতে পারে। বিতর্কিত অংশ বাংলাদেশের হাতে দিয়ে জমি বিবাদ মিটিয়ে ফেললে সীমান্তে বেড়া বসাবার কাজ দ্রুত শেষ হবে। গগৈয়ের এই অভিমতের পরই রাজ্যে আন্দোলনে নেমে পড়ে বিরোধীরা। বলা হয় অসমের জমি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার ‘চক্রান্ত’ চলছে। আসু, অগপ, বিজেপি, শিব সেনা, বজরং দলসকলেই রাজ্য জুড়ে আন্দোলন শুরু করে। বিজেপি আগামিকাল রাজ্যে, ‘প্রতারণা দিবস’পালনের ডাক দিয়েছে॥
এ বিষয়েই গগৈ আজ বলেন, “বিতর্কিত জমি আদান-প্রদানের পরে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতই বেশি লাভবান হতে চলেছে। বাংলাদেশের এই জমি নিয়ে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি ১৯৭৪ সালেই হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর এ বারের সফরে, বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হবে। বিরোধীরা প্রকৃত সত্য জেনেও রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আন্দোলন চালাচ্ছেন।” অসম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত নিয়ে বিতর্ক থাকায় সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সফরসঙ্গী করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেইজন্য মনমোহন সিংহকে ধন্যবাদ দেন গগৈ। তিনি বলেন, “এখন যারা জমি বিনিময় নিয়ে হইচই করছেন, তাঁরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি রূপায়ণের কোনও চেষ্টাই করেননি।” |