অণ্ণা হজারের দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের পরে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর তুলনায় নিজেদের অনেক বেশি ‘পরিচ্ছন্ন’ হিসেবে তুলে ধরতে সক্রিয় হলেন বাম নেতারা
শুক্রবার দিল্লিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘সংসদ অভিযান’ করে চার বাম দল। পরে সংসদ মার্গের জনসভায় প্রকাশ কারাট, এ বি বর্ধন, দেবব্রত বিশ্বাস, সীতারাম ইয়েচুরিদের দেখিয়ে বলা হল, এই বাম নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ নেই। মঞ্চে ইয়েচুরি ও ডি রাজাকে দেখিয়ে সিপিআই নেতা এ বি বর্ধনের মন্তব্য, “সাংসদ হয়েও এঁরা কিছুই করতে পারেননি!” সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, ৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থেকেও বামফ্রন্ট সরকারের কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হয়নি, সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। কেন্দ্রে বা রাজ্যে, এই রেকর্ড কংগ্রেস বা বিজেপির মতো কোনও দলের নেই। |
এই ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি’-তে ভর করেই বাম নেতারা জানিয়ে দিলেন, মাওবাদীদের মতো সমাজের বাইরে থেকে বা অণ্ণা হজারের মতো সংসদের বাইরে থেকে দুর্নীতি-বিরোধী লড়াইয়ে হাঁটার প্রয়োজনীয়তা তাঁদের নেই। সংসদীয় রীতিনীতি মেনেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন তাঁরা। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পথে নামার জন্য অণ্ণার আন্দোলন পর্যন্ত কেন তাঁদের অপেক্ষা করতে হল, সে প্রশ্নও উঠেছে। কারাটের জবাব, “অণ্ণার আন্দোলনের অনেক আগে থেকে একমাত্র বামেরাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।” ইয়েচুরির কথায়, “গত চার দশকে যে ন’বার সংসদে লোকপাল বিল এসেছে, বামেদের দাবিতেই এসেছে। বিচারপতি সৌমিত্র সেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বামেরাই তাঁর অপসারণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, “রামলীলা ময়দান ঘুমিয়ে পড়লেও লাল ঝাণ্ডা ঘুমিয়ে পড়বে না।”
অণ্ণার সঙ্গে বামেদের ভাবনার ফারাক যে অনেক, তা-ও বোঝানোর চেষ্টা করেছেন কারাটরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, লোকপালের আওতায় মন্ত্রী বা সরকারি কমর্চারীদের আনার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু স্পেকট্রাম, কমনওয়েলথ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি দুর্নীতিতে কোনও না কোনও পুঁজিপতি-কপোর্রেট সংস্থা জড়িত। তাই দুর্নীতির ঘটনায় কপোর্রেটের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের অধিকারও দেওয়া হোক লোকপালকে। বেআইনি ভাবে বরাত হাসিলের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই বরাত বাতিল হোক। সরকারি পরিষেবা নিয়ে আমজনতার অভিযোগের তদন্তে পৃথক ব্যবস্থা তৈরি হোক।
কারাটের বক্তব্য, অণ্ণারা যে নির্বাচিত প্রার্থীদের ফিরিয়ে আনা বা ‘রাইট টু রিকল’-এর কথা বলছেন, তাঁরা তা বলছেন না। তাঁর কথায়, “আগে নির্বাচনী সংস্কার করে ভোটে কোটি কোটি টাকা ছড়ানো বন্ধ হোক।” বাম নেতারা মনে করছেন, দুর্নীতির আরও একটি উৎস হল পুরনো জমি অধিগ্রহণ আইন। এই আইনের সাহায্যে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে জোর করে কৃষকের জমি অধিগ্রহণ করে তা কপোর্রেট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। কর্নাটকের মতো রাজ্যে বিজেপি যখন খনিজ সম্পদ বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে, তখন কৃষ্ণা-গোদাবরী উপকূলে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে একই কাজ করছে কংগ্রেস শাসিত ইউপিএ-সরকার। এই দিক থেকেই অন্য দলগুলির থেকে তাঁরা যে পৃথক, তা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন বামেরা। |