ইস্তফাপত্র নিঃশর্ত না হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র সেনের ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার দিকেই পদক্ষেপ করতে পারে সরকার। এ ব্যাপারে সরকার আইনি পরামর্শ নিচ্ছে বলে আজ কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে। ওই ইস্তফাপত্রে সৌমিত্রবাবু বলেছেন, নিজেকে এখনও নির্দোষ বলেই মনে করেন তিনি। সুতরাং তাঁর ইস্তফা নিঃশর্ত নয় বলেই মনে করছে কেন্দ্র।
রাজনৈতিক সূত্রে খবর, বিষয়টি আজ সরকারের তরফে বিজেপির শীর্ষ নেতাদেরও জানানো হয়েছে। রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির সঙ্গে আজ এ ব্যাপারে বৈঠক করেন সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীব শুক্ল। পরে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনসল জানান, নিয়ম অনুযায়ী নিজের হাতে ইস্তফাপত্র লিখে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হয়। তাতে নিজের স্বাক্ষর থাকতে হয়। সর্বোপরি সেই ইস্তফাপত্র নিঃশর্ত হতে হয়।
মন্ত্রীর কথায়, রাষ্ট্রপতি ‘যথাযথ’ ইস্তফাপত্র পেলে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবেন। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তা বিবেচনা করে লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারের কাছে পাঠাবেন। ইমপিচমেন্ট
প্রক্রিয়ার আর প্রয়োজন আছে কি না, তার পরেই সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির কাছে সৌমিত্রবাবুর পাঠানো ইস্তফাপত্র নিজের হাতে লেখা তো নয়ই। উপরন্তু তা ফ্যাক্স করে পাঠানো হয়েছে। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক এখন অ্যাটর্নি জেনারেল জি ই বাহানবতীর পরামর্শ নিচ্ছে। ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া হবে কি না, তা নিয়ে সোমবার সংসদে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, বাহানবতী ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ারই পক্ষপাতী। একই অধিবেশনে সংসদের দুই কক্ষে ইমপিচমেন্ট না হলে গোটা প্রক্রিয়াটাই
বাতিল হয়ে যায়। সুতরাং সৌমিত্রর ইস্তফাপত্র পেয়ে এখন লোকসভা যদি ইমপিচ না করে, তা হলে গত দু’বছর ধরে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার যাবতীয় উদ্যোগই জলে যাবে বলে বাহানবতী জানিয়েছেন।
টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে রাজ্যসভায় ইতিমধ্যেই বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনে সৌমিত্রবাবু নিজে সওয়াল করার পরেও ভোটাভুটিতে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে সোমবার ও মঙ্গলবার ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হওয়ার কথা। সংসদের নিম্ন কক্ষেও আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সৌমিত্রবাবুকে সুযোগ দিতে চেয়েছিল লোকসভার সচিবালয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর পরে লোকসভার স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়ে গত কাল সৌমিত্রবাবু জানিয়েছেন, যে সিদ্ধান্ত হয়েই গিয়েছে তার জন্য তিনি আর লড়তে চান না।
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, সৌমিত্রবাবুর চিঠির বয়ান নিয়ে কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম নেতৃত্বের বড় অংশই অসন্তুষ্ট। তাঁদের বক্তব্য, সৌমিত্রবাবু এখনও বার্তা দিতে চাইছেন যে, তিনি নিরপরাধ। কিন্তু সেটা যে নয়, রাজ্যসভায় বিতর্কেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে লোকসভায় সৌমিত্রবাবু যদি উপস্থিত না-ও থাকেন, ক্ষতি নেই। রাজ্যসভার বিতর্কে তাঁর বক্তব্যকে সামনে রেখেই লোকসভায় ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। |