ঘরোয়া ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা এবং বিরোধিতাকে নস্যাৎ করে বাংলাদেশি পোশাকের জন্য ভারতের বাজার খুলে দিচ্ছে মনমোহন সরকার। বস্ত্র মন্ত্রক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর কেন্দ্র আজ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার এ দিনই বিরোধী নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি এবং সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ওই বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। বিরোধী নেতারাও বাংলাদেশের পণ্য ভারতের বাজারে আমদানির প্রশ্নে আপত্তি করেননি বলে খবর মিলেছে। প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের আগে এই ঐকমত্য তৈরি হওয়ার বিষয়টি যথেষ্ট ইতিবাচক বলেই মনে করছে তাঁর দফতর।
সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের বোঝানো হয়েছে, আরও বেশি বাংলাদেশি পণ্য এ দেশের বাজারে এলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। বিশ্বায়নের বাজারে মুক্ত বাণিজ্যের সুযোগ ভারত নিজে যে ভাবে নিচ্ছে, অন্যদেরও তার সুযোগ দিতে হবে। ভারতীয় পণ্যকে বিশ্ববাজারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজেও চিন-সহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে এই অর্থনৈতিক দর্শনটিকেই তুলে ধরেছেন। কেন্দ্রের বক্তব্য, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়লে গোটা দক্ষিণ এশিয়াই তার সুফল পাবে।
ঢাকার দাবি, বাংলাদেশের ৬১টি পণ্যের (যার মধ্যে ৪৮টি রেডিমেড জামা কাপড় সংক্রান্ত) উপর থেকে আমদানি সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিক নয়াদিল্লি। বস্ত্র মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনার পর বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছেন, “যে ৪৮টি বাংলাদেশি বস্ত্র-পণ্য ভারতে আমদানির অনুমতি নেই, সেগুলির ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশের অনুরোধ আমরা বিবেচনা করছি।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রতিরক্ষা বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিস’ বাংলাদেশ সংক্রান্ত যে রিপোর্টটি আজ প্রকাশ করেছে, তাতেও এ বিষয়ে জোরালো সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই কাঁটা হয়ে রয়েছে। নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিনিময়ে স্বাভাবিক ভাবেই বাণিজ্য ক্ষেত্রে বড় ছাড় চাইছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ভারত অন্তত কিছু দিনের জন্য হলেও বাংলাদেশি পণ্য আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিক।’ পাশাপাশি আরও যে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তা-সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, সীমান্ত চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে ছিটমহল হস্তান্তরের একটি পূর্ণ প্যাকেজ তৈরি করা, নদী চুক্তির ক্ষেত্রে ছোটখাটো মতবিরোধগুলিকে অগ্রাহ্য করার কথা। |