অনিয়মের অভিযোগ জলপাইগুড়ি সদর
হাসপাতালে ধুঁকছে মানসিক বিভাগ
লোমেলো জামাকাপড়ে বিছানায় শুয়ে রয়েছেন মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগিণী। তাঁর তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মী। মানসিক ওয়ার্ডে ভর্তি রোগিণীর কখনও চিৎকার করে হাত পা ছুড়তে থাকলে তাকে চেপে ধরে সামলানোর কাজও করেছেন পুরুষ কর্মীরা। এমন ভাবেই চলছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের মানসিক বিভাগ। মহিলা ওয়ার্ডের জন্য সর্বক্ষণের মহিলা কর্মী এবং পুরুষ ওয়ার্ডে পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মী দায়িত্বে থাকার কথা থাকলেও জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মানসিক বিভাগে দুই ওয়ার্ড দেখভালের জন্যই একজন করে কর্মী বরাদ্দ থাকেন। দিনের অর্ধেক সময়ে থাকেন মহিলা কর্মী বাকি সময়টা পুরুষ কর্মী। তার ফলে সপ্তাহে কয়েক দিন রাতের বেলাতেও মহিলা ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকেন পুরুষ কর্মী। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, কর্মী সংখ্যা কম থাকাতেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পুরুষ ও মহিলা কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। হাসপাতালের একাংশ চিকিৎসক খোলাখুলি স্বীকার করে নিয়েছেন মহিলাদের মানসিক ওয়ার্ডে রোগিণীদের সামলানোর জন্য পুরুষ কর্মী থাকা জাতীয় মানবাধিকার আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে সরব হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “চলতি বছরের প্রথমে মানসিক বিভাগ চালু করা হলেও সরকার থেকে বাড়তি বরাদ্দ করা হয়নি। ওষুধ নেই, কর্মী সংখ্যা কমকষ্টেসৃষ্টে কাজ চালানো হচ্ছে।” হাসপাতালে ভর্তি এক রোগিণীর আত্মীয় বলেন, “কর্তৃপক্ষকে বললে ওঁরা বলেন, বাড়ির থেকে একজন রোগিণীর সঙ্গে থাকুন। সবসময়ে তা সম্ভব নয়, বাইরে কোনও মাসিকে রাখাও আর্থিক দিক থেকে সবার পক্ষে সম্ভব নয়। আর তা ছাড়া রোগিণী কখনও উত্তেজিত হয়ে উঠলে তাকে সামলানোর কায়দাও আমাদের জানা নেই। তাই, একজন পুরুষ কর্মীই রোগিণীর গায়ে হাত দিচ্ছেন বা রাতে পাহারা দিচ্ছেন এটা বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়েছে।” হাসপাতালের মানসিক ওয়ার্ডের এমন অবস্থার কথা শুনে চমকে উঠেছেন মানবাধিকার কর্মী ডালিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, “এটা তো আপত্তিজনক এবং অশালীন ব্যাপার। মহিলাদের অধিকার বিপন্ন হচ্ছে. এটা কখনওই কাম্য নয়।” এখানে শেষ নয়। গত শুক্রবার সদর হাসপাতালের মানসিক ওয়ার্ডের বর্হিবিভাগের দরজায় একটি নোটিস টাঙানো হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘‘এখন থেকে হাসপাতালের মানসিক বিভাগের পাঁচটি ওষুধ শুধু পাওয়া যাবে।’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ মেনে ২০০৭-২০০৮ সালে রাজ্য সরকার সব মানসিক বিভাগে ২৪টি ওষুধ বাধ্যতামূলক সরবরাহ করার নির্দেশ দেন। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে প্রায় মাসখানেক ধরে এই ২৪টি ওষুধের মধ্যে ১৯টি ওষুধই অমিল। মাথা ব্যাথা সহ সামান্য প্রয়োজনের পাঁচটি ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবারহ করা হচ্ছে। মানসিক রোগীদের সবথেকে প্রয়োজনীয় ঘুমের ওষুধ, অবসাদ দূর করার মতো ওষুধই হাসপাতালে নেই। বাকি যে পাঁচটি ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে সেগুলিও অত্যন্ত নিম্নমানের বলে অভিযোগ। এর মধ্যে কোনও ওষুধ গলে গিয়েছে। কোনও ওষুধ আবার একেবারেই গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের তরফে চলতি মাসের প্রথম দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনও ফল মেলেনি বলে জানা গিয়েছে। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বরবাবু বলেছেন, “সদর হাসপাতালের পরিকাঠামো অপ্রতুল। সরকার থেকে যে পরিমাণ ওষুধ বরাদ্দ হয়, চাহিদা তার থেকে অনেক গুণ বেশি। সে কারণে ওষুধের সঙ্কট রয়েছে। দীর্ঘদিন আগের ব্যবস্থায় ৪৫০ রোগীর জন্য সদর হাসপাতালে সরকার বরাদ্দ মঞ্জুর করে অথচ হাসপাতালে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা গড়পড়তা সাতশোরও বেশি। যা মিলছে তা দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.