এক জন-দু’জন নয়, এক মাসে ২৬ জন! গত জুলাই মাসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসা ২৬ জন রোগী ‘পালিয়ে গিয়েছেন’ কর্তৃপক্ষের অগোচরে! আর জুন মাসের হাল আরও ভয়ানক! ৩০ দিনে ‘বেপাত্তা’ ৩১ জন! ‘উদ্বেগজনক’ এই ছবি সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসায় হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপত্তা-রক্ষী থাকা সত্ত্বেও অন্তর্বিভাগে ভর্তি রোগীরা কী ভাবে সবার অগোচরে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে পারছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রত্যক্ষ ভাবে ঘটনার দায় তাঁদের উপরেই এসে পড়লেও নিরাপত্তারক্ষীদের বক্তব্য, হাসপাতাল চত্বরে দোকানপাট, অ্যাম্বুল্যান্সের ভিড়। অনবরত বাইরের লোকজন ঢুকছেন। যেন বাজার চলছে! এই অবস্থায় ঠিক মতো নজরদারি চালানো প্রায় অসম্ভব। জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সভাপতি গান্ধী হাজরাও সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হাসপাতালের গেটগুলি সংস্কারের কথা ভাবা হচ্ছে। হাসপাতাল চত্বর থেকে দোকানপাট তুলে দেওয়ার জন্য কড়া পদক্ষেপ করা হবে। আপাতত সন্ধ্যার পর বাইরের লোকজনদের ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ঠিক হয়েছে।” স্থায়ী পুলিশ পিকেট বসানোরও উদ্যোগ চলছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
প্রতি দিন ৯০ থেকে ১০০ জন রোগী অন্তর্বিভাগে ভর্তি হন এই জেলা হাসপাতালে। রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালের মূল প্রবেশপথে রয়েছেন একাধিক নিরাপত্তাকর্মী। তা সত্ত্বেও, নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এড়িয়ে হাসপাতাল থেকে জুন ও জুলাই মাসে প্রতি দিন গড়ে এক জন করে রোগী পালিয়ে গিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই রোগীদের ‘পলাতক’ হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন এবং পুলিশে খবরও দিয়েছেন। কিন্তু আচমকা রোগী পালানোর সংখ্যা বেড়ে গেল কেন তা স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি।
একই দিনে একাধিক রোগী পালানোর ‘রেকর্ড’ও রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই হিসাব অনুযায়ী, জুনের ২০ ও ২২ তারিখে ‘বেপাত্তা’ হন যথাক্রমে ৩ ও ৪ জন রোগী। আর ৩০ জুন রেকর্ডসংখ্যক ৭ জন! আবার জুলাই মাস শুরু হতেই ২ তারিখে পালিয়ে যান ৪ জন রোগী। ২২, ২৪ এবং ২৭ জুলাইয়েও ২ জন করে রোগী পালিয়ে গিয়েছেন বলে উল্লেখ রয়েছে নথিতে। সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি অনেক সময়েই বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদেরও (জেল ও পুলিশ হেফাজতে বন্দি) ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। জেলা হাসপাতাল থেকে এর আগে বন্দি পালানোর ঘটনা ঘটলেও, গোলমেলে জুন-জুলাইয়ে তেমন কিছু যে ঘটেনি, এই রক্ষে!
স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন স্টেট হেল্থ এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক সত্যরঞ্জন সাহুর অভিযোগ, “জেলা হাসপাতালের ভিতরে ও চত্বরে রোগী ও তাঁদের পরিবারের উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। তাই নিয়মিতই ঘটছে রোগী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা।” সত্যরঞ্জনবাবুর দাবি, “জেলা হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ পিকেট বসিয়ে টহলের ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালের প্রবেশপথে কড়া পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।”
হাসপাতালের সহকারী সুপার দিলীপ গিরি গোস্বামী বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে গিয়েছে বলে চিকিৎসক জানানোর পর কর্তৃপক্ষকে কিছু না জানিয়ে রোগীকে নিয়ে চলে যান পরিবারের লোকজন।” পুলিশও অনেক সময়ে খোঁজ নিয়ে দেখেছে, সুস্থ হওয়ার পরে হাসপাতালের খরচ এড়াতেই ঘটে ‘অন্তর্ধান’। তাতেও অবশ্য ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর গাফিলতি আড়াল হয় না। তবে সুপার নিমাই মণ্ডলের আশ্বাস, “নজরদারি বাড়ানো হবে। পুলিশ পিকেটও বসবে।” এখন কত শিগ্গির হুঁশ ফেরে, সেটাই দেখার! |