বন্যাদুর্গত খানাকুল ২ ব্লকে পালস পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি সফল করতে নজিরবিহীন ব্যবস্থাপনা দেখাল প্রশাসন। খানাকুল ১ ব্লকে জল ইতিমধ্যেই নেমে গিয়েছে। ফলে, সেখানে পোলিও রবিবারের সাফল্য নিয়ে ততটা উদ্বিগ্ন ছিল না স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু খানাকুল ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনও গোড়ালি-ডোবা জল। তাতে এক দিকে যেমন নৌকো চলে না, তেমনই আবার হেঁটে বা সাইকেলে চলাফেরা করতেও সমস্যা। ফলে, কয়েক কিলোমিটার উজিয়ে পোলিও বুথ পর্যন্ত আসবেন কিনা গ্রামের মানুষ, তা নিয়ে সংশয় ছিল স্বাস্থ্যকর্তা ও প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের। তা ছাড়া, দূরদূরান্তের বুথে জল পেরিয়ে যেতেও হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তাঁদের বেশির ভাগ আবার মহিলা। আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে প্রথম দিনের বিচারে এ বার পালস পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি এখানে অনেকটাই সফল। কর্মসূচি চলবে চার দিন ধরে। যাঁরা গ্রাম থেকে বাচ্চাকে নিয়ে পোলিও খাওয়াতে আসতে পারলেন না, সেই সব বাড়ি বাড়ি স্বাস্থ্যকর্মীরা আগামী তিন দিন ধরে ঘুরবেন।” |
আমতা ২ ব্লকের সাগরির কাছে রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |
খানাকুল ২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের ৬৮টি গ্রামই বন্যাক্লিষ্ট। একটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ২৮টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এমনিতেই চিকিৎসকের অভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলে। বন্যার সময় পরিকাঠামো একেবারেই ভেঙে পড়ে বলে বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ এই এলাকার মানুষের। এ বার ৯ অগস্ট থেকে গ্রামগুলির বেশির ভাগ এলাকাই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। স্বভাবতই, পোলিও কর্মসূচি কতটা সাফল্য পাবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল। মহকুমাশাসক এ বিষয়টি নিয়ে বার চারেক বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্যকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, দিনের শেষে দেখা গিয়েছে, খানাকুল ২ ব্লকে ৮৬ শতাংশ শিশুকে পালস পোলিও খাওয়ানো গিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব মতো, খানাকুল ২ ব্লকে এ বার ১৬,৮৮৩ জন শিশুকে পোলিও খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ কাঁড়ার বলেন, “প্রথম দিনে ৬৮টি শিবির করা হয়েছিল। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে মোট ১৪০টি দল করা হয়েছে। প্রতি দলে দু’জন করে থাকবেন। চিকিৎসক থেকে শুরু করে সব স্তরের স্বাস্থ্যকর্মী, আইসিডিএস কর্মী ও সহায়িকারাও এই কাজে আছেন। আশাকর্মীদেরও নেওয়া হয়েছে।” অতীতে এই ব্লকে ৯৯.৭৩ শতাংশ পর্যন্ত সাফল্য মিলেছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
বন্যা কবলিত উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকে রবিবার পুরোদমে পালস পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি চালানো হল বলে হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। দু’টি ব্লকেরই অধিকাংশ পঞ্চায়েত দামোদরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলও নামছে খুব ধীরে। ফলে, বেশ কিছু এলাকা এখনও জলমগ্ন রয়েছে। উদয়নারায়ণপুরের বিএমওএইচ সৈকত বসু বলেন, “অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় পোলিও টিকাকরণের জন্য বুথ করা হয়েছিল। বুথের সংখ্যা ছিল মোট ১২০টি। যে সব শিশুদের আনা যায়নি তাদের বাড়িতে বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা গিয়ে পোলিও টিকা খাওয়াবেন।” আমতা ২-এর বিএমওএইচ অভিজিৎ ভট্টাচার্য জানান, মোট ১৪১টি বুথ খোলা হয়েছিল। তিনি বলেন, “থলিয়া, বিকেবাটি-সহ যে সব পঞ্চায়েত এলাকায় খুব বেশি জল জমে ছিল সেই সব প্রধানদের বলা হয়েছিল, তাঁরা যেন নৌকায় করে শিশুদের বুথ পর্যন্ত আনার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ওই সব এলাকায় এ দিন জল নেমে যাওয়ায় নৌকা কাজে লাগাতে হয়নি। মায়েরা নিজেরাই বুথে এসেছেন।” লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ শিশুকে এ দিন টিকা খাওয়ানো গিয়েছে বলে বিএমওএইচ জানান। তিনি বলেন, “এর পরেও যে সব শিশু বাকি রয়েছে, পরবর্তী এক সপ্তাহ ধরে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে গিয়ে তাদের পোলিও খাওয়াবেন।” |