কাঁধ থেকে তাঁর দু’টি হাতই নেই। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় থেকেই। আর এক জন শৈশবেই হারিয়েছেন তাঁর দৃষ্টিশক্তি। তবু ভরা বর্ষার গঙ্গা বেয়ে ১৯ কিলোমিটার সাঁতার শেষ করলেন দু’জনেই। রবিবার জিয়াগঞ্জ থেকে বহরমপুর পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ভাগীরথীর দু’পাড় বরাবর দাঁড়িয়ে থাকা কাতারে কাতারে উৎসুখ মানুষের ঢল ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন তাঁদের। কৌতুহলী জনতা বিস্ফারিত দু’চোখ ভরে দেখলেন কী ভাবে কোচ চিন্ময় দাসের চোখ দিয়ে দেখে জলপথ অতিক্রম করলেন ৩৯ বছরের দৃষ্টিহীন কানাইলাল চক্রবর্তী। স্রেফ দু’পা সম্বল করে তাঁর পাশেই ছিলেন ৩৯ বছরের বিনোদকুমার সিংহও।
অবিবাহিত কানাইবাবুর বাড়ি কৃষ্ণনগরের রাধানগর এলাকার শিবমন্দির পাড়ায়। শৈশবে ভুল চিকিৎসায় তাঁর দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে যায়। তবুও তিনি হার মানেননি। ওই অবস্থাতেই শুনে শুনে পড়া মুখস্ত করে অন্য জনকে ‘লেখক’ হিসাবে নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। দেরাদুনে গিয়ে পলিটেকনিক কলেজ থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সাঁতার শেখার জন্য তিনি পৌঁছে যান কোচ চিন্ময় দাসের কাছে। চিন্ময়বাবু বলেন, “ওঁর আগ্রহ ও জেদের কাছে হার মানলাম। তার পর থকে নদীতে ও সুইমিং পুলে কানাইলাল আমার চোখ দিয়েই জল কেটে চলে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়াগায় ৮ কিলোমিটার থেকে ২৪ কিলেমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।” কানাইবাবু বলেন, “বাবা প্রয়াত। বৃদ্ধ মা অসুস্থ। ভাই অন্যের দোকানে কাজ করে। মা ও ভাই তাঁদের কষ্টের টাকা থেকে কেনা ছোলা ভিজিয়ে আমাকে দেন সাঁতার শেখার পুষ্টি যোগাতে। খুব কষ্টে সংসার চলে। কিন্তু নেশায় পেয়েছে তাই সাঁতার ছাড়তে পারিনি। তবু প্রতিবন্ধী কোটাতেও আজও একটি সরকারি একটি চাকরি জুটল না। জুটলে সংসারটা বেঁচে যেত।” একই রকম অভিযোগ জন্মসূত্রে কাঁধ থেকে দু’টি হাত না থাকা বিনোদকুমার সিংহের। উত্তর চব্বিশ পরগণার নোয়াপাড়ার স্কুল শিক্ষকের ছেলে বিনোদকুমার সিংহ স্নাতক। তিনি বলেন, “গত ৫ বছরে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে হওয়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ২২ বার সোনার পদক জিতেছি। ইংল্যান্ড, মালয়শিয়া, তাইওয়ান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়াতেও সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। কিন্তু সরকারি চাকরি থেকে আজও আমি বঞ্চিত। রাজ্য সরকারে পরিবর্তন এসেছে। এবার দেখি আমার ভাগ্যে সরকারি কৃপাদৃষ্টির পরিবর্তন হয় কি না?” |