বহরমপুরে এক সরকারি হোমের সুপারের বিরুদ্ধে ‘মদ্যপ’ অবস্থায় শিশু কিশোর আবাসিকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, রবিবার বিকেলে জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের অধীনে বহরমপুরের কাদাই এলাকায় ‘আনন্দ আশ্রম’ নামে ওই হোমের মধ্যে ‘বিদায়ী’ সুপার শুভম দাস ও ‘পরবর্তী’ সুপার প্রত্যর্পণ সিংহ রায় মদ্যপান করার সময় প্রতিবাদ করলে শুভমবাবু আবাসিকদের মারধর করেন। আবাসিকেরা লিখিত ভাবে সে কথা জেলাশাসককে জানান।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রত্যর্পণবাবু বলেন, “পরিকল্পনা করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। মদ্যপানের কোনও ঘটনা ঘটেনি। খাবারের গুণগত মান উন্নত করার জন্য আমার নির্দেশে শুভম বেশ কিছু নোটিশ জারি করেছে, যা এক শ্রেণির ঠিকাদারের পছন্দ হয়নি। তারা হোমের আবাসিকদের প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।” মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি অবশ্য বলেন, “এদিন হোমের মধ্যে কী ঘটেছে তা বিস্তারিত জানিয়ে মহকুমাশাসককে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। বিদায়ী সুপার শুভম দাসের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ হোমের আবাসিকরা করেছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই তদন্তের ভারও এসডিও-কে দেওয়া হয়েছে।” এদিন বিকেলেই বহরমপুরের মহকুমাশাসক অধীর বিশ্বাস ওই হোমে যান। সেই সময়ে হোমের ভিতরে শুভমবাবু ছাড়াও ছিলেন প্রত্যর্পণবাবুও।
বহরমপুরের বানজেটিয়া হোমের সুপার ছিলেন শুভমবাবু। বানজেটিয়া হোম বন্ধ পড়ে থাকায় তাঁকে আনন্দ আশ্রম হোমের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন থেকেই তিনি আনন্দ আশ্রমের ভিতরেই সরকারি আবাসনে থাকতে শুরু করেন। এর পরে গত শুক্রবার প্রত্যর্পণবাবুকে আনন্দ আশ্রমের সুপার হিসেবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। যদিও তিনি এখন পর্যন্ত ওই হোমের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেননি। ফলে শুভমবাবুই খাতায়-কলমে সুপার হিসেবে হোমের দায়িত্বে রয়েছেন। জেলাশাসক বলেন, “আজ, সোমবারের মধ্যেই প্রত্যর্পণ সিংহ রায়কে সুপারের ভার গ্রহণ করতেই হবে।” হোম আবাসিকদের সমর্থন করে প্রাক্তন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন অনুত্তম রায় বলেন, “সুপারের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আবাসিকদের মুখে শুনেছি। ওই একই কারণে গত ২৭ জুলাই আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। যদিও তা এখনও গ্রহণ করেনি। ফলে কমিটির যাবতীয় কাজ মাস খানেকের বেশি সময় ধরে থমকে রয়েছে।”এ দিন অবশ্য বহরমপুরের মহকুমাশাসক পৌঁছানোর পরেই প্রত্যপর্ণ সিংহ রায় হোম থেকে বেরিয়ে যান। সেই সময়ে কিশোর আবাসিকরা ছুটে গিয়ে তাঁকে ধরে আটকে রাখার চেষ্টা করে। তখন দু-পক্ষের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষণ টানা-হ্যাঁচড়াও চলে। সেই সময়ে বহরমপুর থানার পুলিশ গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই ধস্তাধস্তি দেখে নেমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পরিচিতজনের মোটরবাইকে চড়ে প্রত্যপর্ণবাবু এলাকা ছেড়ে চলে যান। এর পরেই হোমের কয়েক জন আবাসিকরা লিখিত অভিযোগ জমা দেয় জেলাশাসকের কাছে। |