তাঁর পেশা ছিল শিক্ষকতা। কিন্তু পেশার বাইরে গিয়েও বিভিন্ন কাজে আনন্দ খুঁজে নেওয়াই তাঁর নেশা। যাত্রায় অভিনয় থেকে চাষবাস, পরিচারকের কাজ থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি--সব কাজই সামলেছেন অনায়াস দক্ষতায়। আর শিক্ষকতার পেশা থেকে অবসর গ্রহণের পরে তিনি ব্যস্ত দানধ্যানে। পেনশনের টাকা বিলিয়ে দিয়েছেন দুঃস্থ মেধাবী পড়ুয়াদের মধ্যে। |
বলাইচরণ দাস। |
এমনই বর্ণময় চরিত্র খেজুরির কটকাদেবীচক গ্রামের বলাইচরণ দাস। খেজুরি জনকল্যাণ উচ্চশিক্ষায়তনের দর্শন বিষয়ের এই প্রাক্তন শিক্ষক অবসর নেন ১৯৯৮ সালে। অবসরের দিনই ঘোষণা করেন, পেনশনের সব টাকাই তিনি বিলি করবেন আজীবন। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারেই প্রতি বছর মে থেকে অগস্ট পর্যন্ত তিনি পৌঁছে যান দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশের বেশি নম্বর পাওয়া দুঃস্থ-মেধাবী পড়ুয়াদের হাতে এককালীন নগদ টাকা তুলে দেন। কিনে দেন বইও। প্রাথমিকের |
|
পড়ুয়াদের একাংশকে বৃত্তিও দেন তিনি। আসলে নিজে যে কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন, সেই কষ্ট যেন আর কাউকে পেতে না হয়---তা নিশ্চিত করতেই তাঁর এই উদ্যোগ। ছেলেবেলায় পারিবারিক অনটনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর পড়া। যোগ দেন যাত্রাদলে। বছর সাতেক পরে, খানিক টাকা জমতেই ফের শুরু করেন পড়াশোনা। এ সময়ে টাকার জন্য অন্যের বাড়িতে থেকে ফাই-ফরমাশও খেটেছেন। জেদ, পরিশ্রম আর অধ্যবসায়কে সম্বল করে পান চাকরিও। তবে অতীতকে তিনি ভোলেননি। তাঁর কথায়, “অর্থাভাবে আমার নিজের পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই শিক্ষক থাকাকালীন কোনও ছাত্রের এই অবস্থা দেখলে খুব কষ্ট হত। তখনই ঠিক করি অবসরের পর তাদের পাশে দাঁড়াব।”
১৯৭৮-এ হয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে করেছেন চাষবাস। এই ৭৫ বছর বয়সেও তিনি মাঝে মাঝে গ্রামের হাটে সব্জি বেচেন। নিজে রোজগার করেন এখনও এবং তা বিলিয়ে দেন সংসারের সবার জন্য। তাঁর কথায়, “চাকরিজীবনে ছাত্র পড়িয়েছি, তাই সরকারের টাকা নিয়েছি। এখন তো আর পড়াই না। তাই পেনশনের টাকা নিতে সঙ্কোচ হয়।” |