বন্দিদের অভাব-অভিযোগ সংশোধনাগার পরিদর্শনে এসে শুনলেন মন্ত্রী। খেয়ে দেখলেন সেখানকার রান্নাঘরে তৈরি খাবারও। মাওবাদী সন্দেহে ধৃতদের সঙ্গেও এ দিন কথা বলেন তিনি।
একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার দুপুরে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে এসেছিলেন কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী। রাতে ছিলেন মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে। রবিবার সকাল দশটা নাগাদ স্থানীয় বিধায়ক মৃগেন মাইতিকে সঙ্গে নিয়ে সংশোধনাগার পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। এ ছাড়া ছিলেন কারা দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তারাও। প্রথমেই একের পর এক ‘সেল’ ঘুরে বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেন শঙ্করবাবু।
খাবারের মান নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে মেদিনীপুর জেলে। অভিযোগ, বন্দিদের অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা হয়। দুপুরে তৈরি করা রুটি রাতে খেতে দেওয়া হয়। ফলে বন্দিদের সরবরাহ করার সময় তা খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ দিন একই অভিযোগ শুনতে হয় মন্ত্রীকে। বন্দিরা অভিযোগ করেন, সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও সুফল মেলেনি। ‘সেল’ পরিদর্শন করার সময়ই একে একে ছত্রধর মাহাতো, মনোজ মাহাতো, সুদীপ চোঙদার, কল্পনা মাইতি’দের মুখোমুখি হন কারামন্ত্রী। ‘সেল’ ঘুরে দেখার পর রান্নাঘরে যান কারা কর্তার। জেল সূত্রে খবর, এ দিন দুপুরে ভাত-ডাল-আলু পটলের তরকারি রান্না হয়েছিল। মন্ত্রী নিজেই ডাল-তরকারি খেয়ে দেখেন। সঙ্গে থাকা মৃগেনবাবুকেও বলেন, “একটু তরকারি খেয়ে দেখুন। তা হলেই বোঝা যাবে খাবারের মান ঠিক কেমন।” এ দিন অবশ্য ডাল-তরকারির মান ভালই ছিল। খাওয়ার পর রান্নার দায়িত্বে থাকা এক কর্মীকে মন্ত্রী বলেন,“আমরা এসেছি বলেই কী আজ এমন রান্না হয়েছে!” বিড়ম্বনায় পড়ে ওই কর্মী উত্তর দেন,‘‘না স্যার। রোজ এমনই রান্না হয়।” খাদ্য তালিকাও খতিয়ে দেখেন কারা দফতরের কর্তারা। রান্নার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কিছু নির্দেশও দেন তাঁরা। সেই সঙ্গে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকেও জানান, খাবারের মানের দিকে নজর রাখবেন। অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করবেন।
মন্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন কারা দফতরের এআইজি কল্যাণ প্রামাণিক, ডিআইজি শোভন দীন প্রমুখ। যেখানে রান্নার সরঞ্জাম মজুত থাকে সেই ঘরেও যান কারামন্ত্রী। সংশোধনাগার থেকে এ বার যাঁরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের সঙ্গেও আলাদা ভাবে কথা বলেন মন্ত্রী। জানতে চান পরীক্ষার্থীদের অভাব-অভিযোগ-প্রয়োজন। জেলবন্দি এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে জানান, তাঁদের বেশ কয়েকটি বই লাগবে। একজন টিউটরও প্রয়োজন। এ কথা শুনেই বিধায়ককে মন্ত্রী ওই পরীক্ষার্থীদের বই ও টিউটরের ব্যবস্থা করতে বলেন। কোনও সমস্যা হলে তাঁকে জানাতেও বলেন শঙ্করবাবু। পরে কারারক্ষীদের সঙ্গেও আলাদা ভাবে কথা বলেন মন্ত্রী। রক্ষীরা জানান, মেদিনীপুর সংশোধনাগারে কর্মীর সংখ্যা কম। ফলে তাঁদের নানা সমস্যার মধ্যে থেকেই কাজ করতে হয়। জেল পরিদর্শন শেষে মন্ত্রীর আশ্বাস, “অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” |