দুই মেদিনীপুর থেকে লাগাতার হাড়গোড় উদ্ধার নিয়ে চাপানউতোর চলছেই। প্রতিটি ঘটনাতেই সিপিএমের একাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। কোথাও অভিযুক্ত ২৩, কোথাও আবার ৪৯। বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের দাবি, এতেই প্রমাণিত বাম-জমানায় কত মানুষ ‘সন্ত্রাসে’র বলি হয়েছেন। অন্য দিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা’র অভিযোগ করছে বামেরা।
দাসেরবাঁধের হাড়গোড়-কাণ্ডে আপাতত জেলে দাপুটে সিপিএম নেতা তথা বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ। বাজকুলের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের। এ নিয়ে বিতর্ক চলছিলই। তবে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বিধানসভা এলাকা নারায়ণগড়ের মণিনাথপুর থেকে হাড়গোড় উদ্ধারের ঘটনায় পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের নাম জড়ানোর পরে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র অভিযোগই মান্যতা পাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
অন্তরাদেবী বিরোধী মহলেও সজ্জন হিসেবেই পরিচিত। নারায়ণগড়ের হাড়গোড় ২০০০ সালের ২ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ পিংলার তৃণমূলকর্মী প্রবোধ দাসের বলে দাবি করেছেন
তাঁর পরিজনেরা। সেই সময় পিংলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন অন্তরাদেবী। অভিযোগ, সেই সূত্রেই এই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
গোটা বিষয়টিতে হতবাক অন্তরাদেবী বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই আমার নাম এ ঘটনার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।” একই বক্তব্য সিপিএমেরও। দলের জেলা কমিটির সদস্য তথা বেলদা জোনাল কমিটির সম্পাদক ভাস্কর দত্তের কথায়, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই দলীয় কর্মীদের নামে এমন অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে।”
তৃণমূল অবশ্য ‘প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা’র অভিযোগ খারিজ করেছে। দলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি সূর্য অট্টর দাবি, “মণিনাথপুরের ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি। ঘটনাস্থল থেকে সভাধিপতির বাড়ি দেড় থেকে দু’কিলোমিটার। সে দিন সুশান্ত ঘোষের মদতেই আমাদের দলীয় কর্মীকে খুন করে দেহ পোঁতা হয়। সুশান্তবাবু সভাধিপতির বাড়িতেই ছিলেন।” পাশাপাশি, তাঁর অভিযোগ, অন্তরাদেবীর বাড়ির আশপাশে এক দলীয় কর্মীর দেহ পোঁতা থাকার খবর রয়েছে তাঁর কাছে। প্রসঙ্গত, হাড়গোড় উদ্ধারের ঘটনার সঙ্গে যাঁদের নামে অভিযোগ হচ্ছে, তার বাইরে যে আরও অভিযুক্ত রয়েছে, তা দাসেরবাঁধের ঘটনাতেই স্পষ্ট। এই হাড়গোড়-কাণ্ডে সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ-সহ এখনও পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। অথচ এদের মধ্যে ৪ জনের নামই অভিযুক্তের তালিকায় নেই। তদন্তে নেমে সিআইডি অফিসারা এঁদের নাম জানতে পেরেছেন।
গোয়ালতোড়ের চৌরঙ্গি সংলগ্ন কুঁন্দরিশোল জঙ্গল থেকেও শনিবার খুলি-সহ হাড়গোড় উদ্ধার হয়। সঙ্গে মেলে লুঙ্গি, জামা, জুতো। এই পোশাক দেখেই উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় তাঁর বাবা সুদর্শন কারকের বলে দাবি করেছেন পাথরপাড়ার ভাণ্ডারপুর গ্রামের বাপি কারক। অভিযোগ, ২০১০ সালের ৪ জুন সুন্দরগেড়িয়ায় তাঁর দিদি বাড়ি থেকে সুদর্শনবাবুকে অপহরণ করে সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন। পরে খুন করে তাঁর দেহ গায়েব করা হয়। রবিবার সকালে পাতা কুড়োতে স্থানীয় কিছু মহিলা জঙ্গলে এসেছিলেন। তখনই তাঁদের চোখে পড়ে, জঙ্গলের মধ্যে মাথার খুলি, হাড়গোড় পড়ে রয়েছে। পরে পুলিশ এসে সেগুলি উদ্ধার করে। এই ঘটনাতেও ২০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযুক্তের তালিকায় নাম রয়েছে এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা গোয়ালতোড় জোনাল কমিটির সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসাদ দুলে, জেলা পরিষদের প্রাক্তন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তারাশঙ্কর বিশ্বাস, এলাকার ‘দাপুটে’ নেতা সিপিএম নেতা নিমাই লায়েক, সুবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূলের গোয়ালতোড় ব্লক সভাপতি রবি রায়ের বক্তব্য, “সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনীই সুদর্শনকে অপহরণ করে খুন করেছে। দলীয় কর্মীর পরিবার এখন বিচার চাইছে।”
|
হাড়গোড় নিয়ে অভিযোগ |
গড়বেতার ৩ ব্লকের দাসেরবাঁধ |
অভিযুক্ত ৪০ |
কেশপুর ব্লকের পাঁওশা |
অভিযুক্ত ২৩ |
কেশপুর ব্লকের মোহনপুর |
অভিযুক্ত ২৬ |
শালবনি ব্লকের ঝর্নাডাঙা |
অভিযুক্ত ৩৯ |
শালবনি ব্লকের কাশীজোড়া |
অভিযুক্ত ৪৯ |
নারায়ণগড় ব্লকের মণিনাথপুর |
অভিযুক্ত ৩৬ |
গোয়ালতোড় ব্লকের কুঁন্দরিশোল |
অভিযুক্ত ২০ |
|