মাস সাড়ে তিন আগেও এখানে সুশান্ত ঘোষই বলতেন ‘শেষ কথা’। সিপিএমের সেই ‘দাপুটে’ নেতা এলাকায় না-থাকলে ঘনিষ্ঠ তপন ঘোষ-সুকুর আলিরাই ছড়ি ঘোরাতেন। তাঁদের ‘হুইপ’ অমান্য করার সাহস দেখাতেন না কেউই। রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই গড়বেতার এখনকার শাসকরা নিজেরাই কিন্তু ‘অভিভাবকহীন’! দলীয় কর্মীদের শৃঙ্খলা ও অনুশাসনে বেঁধে রাখার মতো নেতা নেই তৃণমূলে! ফলস্বরূপ যা হওয়ার তাই হচ্ছে। উঠছে দেদার ‘তোলা’ আদায়ের অভিযোগ। চলছে সিপিএমের সাধারণ সমর্থকদের উপরে অত্যাচার। প্রকট হচ্ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। মাঝেমধ্যেই সেই কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়ছে। পরিস্থিতি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে প্রতি দিনই।
পশ্চিম মেদিনীপুর সিপিএমের ‘লালদুর্গ’ বলেই পরিচিত ছিল এই সে দিন পর্যন্ত। পালাবদলের পরে সেই পরিচিতি তো উধাও হয়েছেই। এক সময়ের ‘দুর্গে’ এখন এতটুকুও স্বস্তিতে নেই দলীয় নেতৃত্ব। বেআইনি বোমা-বন্দুক-গুলি উদ্ধারের পরে জেলা জুড়ে এখন একের পর এক এলাকা থেকে উদ্ধার হচ্ছে হাড়গোড়। এর সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে ‘গুমখুনে’র অভিযোগ। এবং সেই সূত্রেই খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়ছেন সিপিএমের জেলা-জোনাল-লোকাল কমিটির এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা-কর্মীরা। আর পাল্লা দিয়ে নতুন শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠছে জেলার প্রায় সব প্রান্ত থেকেই।
গড়বেতাও তার ‘ব্যতিক্রম’ নয়। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নামে প্রায় রোজই অভিযোগ আসছে জেলা তৃণমূল নেতাদের কাছে। রাজ্যস্তরেও সেই অভিযোগ পৌঁছেছে। জোর-জুলুমের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুধু গড়বেতার জন্য পৃথক একটি ‘তদন্ত কমিটি’ গড়তে হয় জেলা নেতৃত্বকে। কমিটির সদস্যরা এলাকায় এসে কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনাচক্রে এর পরেই রাজ্য নেতৃত্ব দল থেকে বহিষ্কার করে এক সময়ের ব্লক সভাপতি অসীম ওঝাকে। সম্প্রতি দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন পরবর্তী ব্লক সভাপতি সুভাষ মাঝিও।
আপাতত জেলা তৃণমূল নেতৃত্বই গড়বেতা এলাকায় দলের সব কাজকর্ম দেখভাল করছেন। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “গড়বেতায় নতুন কে ব্লক সভাপতি হবেন, সে ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বই সিদ্ধান্ত নেবেন।” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “দলে থাকতে হলে সবাইকেই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। দলবিরোধী কাজ করলে কাউকেই বরদাস্ত করা হবে না।” জেলা নেতৃত্ব এমন হুঁশিয়ারি দিলেও গড়বেতায় কিন্তু গোলমাল লেগেই রয়েছে। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই অধিকাংশ ঘটনা ঘটছে। ক’দিন আগে ধাদিকায় তৃণমূলের এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর উপরে চড়াও হয়। এমনকী, দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন আহতও হন। সূত্রের খবর, পুলিশের কাছেও এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এতটাই বেলাগাম শাসকদল।
তৃণমূলের জয়। মাস তিনেক আগেও এলাকায় একাধিপত্য ছিল সিপিএমের। এখন সেখানেই ‘একঘরে’ দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। পরিস্থিতি এমনই যে, মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচখুরীতে স্কুলভোটে প্রার্থী পর্যন্ত দিতে পারল না সিপিএম। রবিবার স্থানীয় দেশবন্ধু হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের দিন ছিল। স্থানীয় তৃণমূল নেতা আবদুল সাদেক জানান, বামেরা প্রার্থী দিতে না-পারায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন দল সমর্থিত প্রার্থীরা। |