সম্পাদকীয় ২...
ইতিবাচক
ন্ধের ভ্রুকুটি ছিল, তবু সেই ভয় উপেক্ষা করিয়াই পড়ুয়ারা আসিয়াছিল। শিক্ষকেরা আসেন নাই। সুতরাং, জঙ্গলমহলে সাম্প্রতিক বন্ধের আওতাভুক্ত এলাকার একটি বিদ্যালয় বন্ধ রহিল। পরবর্তী দিন বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারাই জানিতে চাহিল, কেন বন্ধ ছিল বিদ্যালয়? প্রশ্নটির উত্তরসন্ধান জরুরি। বন্ধের ত্রাস একটি উত্তর। যথেষ্ট এবং যথাযথ উত্তর নহে। প্রকৃতপক্ষে ইহা একটি মানসিকতা। এই মানসিকতা বন্ধের কর্মনাশা চরিত্রটিকে একটি বাড়তি ছুটির সুযোগ হিসাবে দেখিয়া থাকে। ফলে, নিছকই বন্ধ-জনিত সন্ত্রাসের ভয়ে নহে, ছুটির প্রতি প্রবল ভক্তি হইতেও যে কোনও বন্ধে বাড়িতে থাকিবার একটি অদম্য ইচ্ছা দেখা যায়। জঙ্গলমহলের উল্লিখিত বিদ্যালয়টির পড়ুয়ারা সেই মানসিকতাটিকেই প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখে দাঁড় করাইয়া দিয়াছে। অনুপস্থিত শিক্ষকেরা কার্য-কারণগত কিছু উত্তর খাড়া করিবেন বটে, কিন্তু এলাকার অন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যখন আসিতে পারিলেন, তখন শুধু তাঁহারাই কেন পারিলেন না, তাহার ব্যাখ্যা কি? একটি ব্যাখ্যা সহজ। তাঁহারা আসিতে চাহেন নাই। চাহিলে, অন্তত সেই দিন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে পরিবহণের যে পরিস্থিতি ছিল, তাহাতে আসিতে না-পারিবার কারণ ছিল না। পড়ুয়াদিগের ক্ষোভ সঙ্গত।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সরব হইবার ডাক দিয়াছেন। গণতন্ত্রে প্রতিবাদের অধিকার থাকিতেই পারে। অন্যের কর্মনাশ করিয়া নিজস্ব প্রতিবাদ ব্যক্ত করিতে চাহিলে যে কার্যত অধিকারভঙ্গ হয়, তাহা স্মরণে রাখা জরুরি। কথাটি অবশ্য নানা ক্ষেত্রেই বন্ধ-প্রিয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে থাকে না। তাঁহারা জুলুম করিয়া বন্ধ চাপাইয়া দেন। জনতা সেই জুলুম সহ্য করে খানিক অসহায়তাবশত, এবং মুখ্যত আলস্যবশত। মুখ্যমন্ত্রী এই মানসিকতাটিকেই প্রশ্ন করিতে চাহিয়াছেন। তাঁহার সেই বক্তব্য যদি বন্ধ-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সরকারি মনোভঙ্গি হয়, তাহা হইলে উল্লিখিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তাঁহাদের অভিভাবকেরা দেখাইয়াছেন, জনসমাজ হইতেও একটি প্রতিবাদ উঠিতেছে।
সমস্যা হইল, প্রতিবাদের জন্য যাবতীয় কর্মকাণ্ড অচল করিয়া দিবার একটি প্রবণতা মজ্জার ভিতরে ঢুকিয়া গিয়াছে। সম্প্রতি ব্যারাকপুরের নিকট রেল দুর্ঘটনায় একটি বালকের প্রাণহানি ঘটিয়াছে। কাণ্ডটি চরম দুঃখজনক, সন্দেহ নাই। কোনও ভাবেই যাহাতে এই ধরনের মর্মান্তিক কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই মর্মে যাবতীয় সতর্কতাগ্রহণ জরুরি। অথচ, সেই দুর্ঘটনার প্রতিবাদ যদি ট্রেনলাইন অবরোধ করিয়া করিতে হয়, তখনই মুশকিল। ইহাতে ইতিবাচক কোনও উত্তর আসে না, বরং অগণিত মানুষের কাজকর্ম পণ্ড হইবার উপক্রম হয়। যাঁহারা রেল অবরোধের প্রতিবাদে মুখর, তাঁহারাই কিন্তু বিভিন্ন সময় লেভেল-ক্রসিং-এর নিয়মনীতির কোনও তোয়াক্কা করেন না, অবলীলায় বন্ধ লেভেল-ক্রসিং-এর নীচে মাথা গলাইয়া রেললাইন পার হইয়া যান। দুর্ঘটনা ঘটিলে তাহার প্রতিবাদ করিবার অধিকার নাগরিকের আছে, থাকিবেও, কিন্তু তাঁহাদের রেল-অবরোধ করিবার নৈতিক অধিকারটি আছে কি! জনসমাজ হইতে এই ধরনের নেতিবাচক মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠিতেছে। মানুষ পথে বাহির হইতেছেন। এমনকী, জঙ্গলমহলের ন্যায় প্রবল ত্রস্ত এলাকাতেও বাহির হইতেছেন। বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ভিড়। শিক্ষকেরা না আসিলে তাহারা প্রতিবাদও করিতেছে। মনোভঙ্গির লক্ষণটি ইতিবাচক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.