সম্পাদকীয় ১...
গণতন্ত্রের পরীক্ষা
ণ্ণা হজারের নেতৃত্বাধীন জনসমাজের লোকপাল বিল-বিষয়ক আন্দোলন একটি ক্রান্তিলগ্নে উপনীত। এই আন্দোলনের ইতিহাস বিশেষ দীর্ঘ নহে, কিন্তু যে রূপে এই আন্দোলন একটি দৃষ্টান্ত রচনা করিল, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে তাহার একটি পূর্বাপর গতিরেখা আছে। ইহা সত্য যে, সংসদই ভারতীয় সাংবিধানিক গণতন্ত্রের সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ অংশ। কথাটি দুই অর্থে বিবেচনার দাবি রাখে। এক, সংসদের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক মর্যাদা। দুই, সেই মর্যাদা সত্ত্বেও সংসদ কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্রের একটি অংশমাত্র। অর্থাৎ, ভারতীয় গণতন্ত্রকে নিতান্তই সংসদ-সর্বস্ব ভাবিলে চলিবে না। সংবিধানপ্রণেতাগণ এমনই ভাবিয়াছিলেন। এক দিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণের মাধ্যমে জনতার গরিষ্ঠ অংশের প্রতিনিধিত্ব আইনসভায় রাখিবার বন্দোবস্ত হইয়াছিল। অন্য দিকে, সেই নির্বাচিত প্রতিনিধিমণ্ডলীর বাহিরে বৃহত্তর জনসমাজের স্বর যাহাতে প্রশাসনের নিকট পৌঁছায় তাহারও বন্দোবস্ত ছিল। অণ্ণা হজারের নেতৃত্বাধীন জনসমাজের আন্দোলনের কথা পাড়িলে এই প্রেক্ষাপটটি স্মরণে রাখা জরুরি। ইহাও মনে রাখা প্রয়োজন যে, একটি সময়কাল হইতে, বিশেষত ইন্দিরা গাঁধীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় সংসদের ভিতরে বহির্সমাজের স্বরের প্রবেশের পথ ক্রমেই সংকুচিত হইয়াছিল। অবশেষে, গত শতকের সত্তরের দশকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ছিল শাসকের একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার একটি প্রয়াস। সেই প্রয়াস সফল হয় নাই। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অণ্ণা হজারের আন্দোলনও প্রমাণ করিল, সংসদের বহির্বর্তী জনসমাজের বক্তব্যকে স্থান দেওয়া এবং তাহার সমাদর করা উচিত।
একটি প্রশ্ন অবশ্য থাকে। জরুরি প্রশ্ন। যে রূপে জনসমাজের একটি বক্তব্যকে সরকারি প্রশাসনিক কাঠামোর ভিতরে আনিবার আয়োজন হইল, সেই তৎপরতার প্রকৃতি হইতেই প্রশ্নটি উঠিয়া আসে। অণ্ণা হজারের আন্দোলন একটি জরুরি কাজ করিয়াছে, ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি দিক্নির্দেশ রচনা করিয়াছে, সন্দেহ নাই, কিন্তু এই আন্দোলন যাহাতে কোনও ভাবে ‘জনতার স্বৈরাচার’-এর দিকে ঢলিয়া না পড়ে, সেই বিষয়টিও স্মরণে রাখা উচিত। আন্দোলনের স্রোত যাঁহারা রচনা করিয়াছেন, তাঁহাদেরই এই বিষয়ে যত্নবান থাকিতে হইবে। অণ্ণা হজারের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির বশে এই আন্দোলনটি চালিত হইয়াছে। ইতিপূর্বে তিনি তুলনায় অনেক সীমিত পরিসরে আন্দোলন চালনা করিয়াছেন। তাঁহার কর্মকাণ্ডের ভিতর, অন্তত এখনও পর্যন্ত, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী বা জয়প্রকাশ নারায়ণের ন্যায় গণ-নায়কের বহুমাত্রিক এবং বৃহদায়তন গতিশীলতার নজির দেখা যায় নাই। আশা করা যায়, গণমনের চাহিদা যাহাতে স্বেচ্ছাচারে পরিণত না হয়, সেই বিষয়ে তিনি অধিক যত্নবান থাকিবেন।
অতঃপর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং তাঁহার মন্ত্রিসভার দায়িত্বও অনেকগুণ বাড়িয়া গেল। কী রূপে সংসদের বহির্বর্তী জনতার স্বরলিপিকে সংসদীয় কাঠামোর ভিতরে গ্রহণ করা যায়, সেই গুরুদায়িত্বের জন্য তাঁহাদেরই প্রস্তুত থাকিতে হইবে। এই প্রস্তুতির অর্থ কিন্তু কোনও ভাবেই আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা নহে। দুঃখের বিষয়, অণ্ণা হজারে-সংক্রান্ত আন্দোলনের ক্ষেত্রে বারংবারই সরকারকে সেই কাজটি করিতে হইয়াছে। অর্থাৎ, বিষয়টি উঠিয়া আসিবার পরে তাহার মোকাবিলায় প্রথমে চূড়ান্ত অদক্ষতার প্রদর্শন। তাহার পরে, কোনওক্রমে পরিস্থিতি সামাল দিবার জন্য অহর্নিশ কর্মকাণ্ড! ইহা সুশাসনের পরিচয় নহে। অণ্ণা হজারের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন সরকারের নিকট একটি অগ্নিপরীক্ষার ন্যায় উপস্থিত। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সেই পরীক্ষাগুলির সূচনা হইল মাত্র। সরকারকে যথার্থ অর্থে প্রস্তুত থাকিতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.