সরকার অস্বস্তিতেই
অনশন ভেঙেই অণ্ণার দাবি ভোট-সংস্কার
কটা লড়াই আপাতত শেষ হতেই নতুন এক সংগ্রামের ডাক দিলেন অণ্ণা হজারে। লোকপাল বিলের পর অণ্ণার নিশানায় এ বার নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার। তালিকায় রয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারও। এর সঙ্গে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে লড়াইয়ে নামার কথাও বলেছেন তিনি।
অণ্ণা অনশন প্রত্যাহারে রাজি হওয়ায় কাল কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু অণ্ণার এ দিনের ঘোষণায় এখনই অশনি সঙ্কেত দেখছে তারা। কারণ আজ মঞ্চ ছাড়ার আগে প্রবীণ গাঁধীবাদী নেতা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর এই অনশন তুলে নেওয়া সাময়িক বিরতি মাত্র। লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি আন্দোলন, প্রয়োজনে অনশনের রাস্তায় ফিরে যেতে দ্বিধা করবেন না। মধু মেশানো ডাবের জল দিয়ে অনশন ভাঙার পরে রামলীলায় উপস্থিত প্রায় ১৫ হাজার সমর্থক ও অজস্র টিভি ক্যামেরাকে সাক্ষী রেখে অণ্ণা আজ বলেন, “আমাদের আগামী লক্ষ্য হবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার ঘটানো।” এটা অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল। যন্তর-মন্তরে অনশন চালানোর সময়েই অণ্ণা এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
অনশন ভাঙছেন অণ্ণা হজারে। রবিবার রামলীলা ময়দানে। ছবি এ এফ পি
কালই অণ্ণা ঘোষণা করেছিলেন আজ সকাল দশটায় তিনি অনশন ভাঙবেন। ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়ে রামলীলা ময়দানে। অনশন ভাঙার সাক্ষী হতে মোটরবাইকে, গাড়িতে, বাসে করে সমর্থকরা ভিড় জমান রামলীলাতে। প্রায় সকলের হাতেই জাতীয় পতাকা। মাথায় অণ্ণা টুপি। জন লোকপাল বিল কী ও কেন, সরকারের বিলের সঙ্গে অণ্ণার দাবির কী পার্থক্য এ সবের বিস্তারিত বিবরণ-সহ একাধিক লিফলেট গত কয়েক দিন ধরেই দিল্লি মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে বিলি করছিলেন কিছু স্বেচ্ছাসেবক। জয় পাওয়ার স্বাদ আজ তাঁদেরও চোখে-মুখে। অনশন ভাঙার পরে অণ্ণাকে নিয়ে যাওয়া হয় গুড়গাঁওয়ের একটি হাসপাতালে। সেখানেও দলে দলে পৌঁছে যান সমর্থকরা। কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে দিল্লি-গুড়গাঁও এক্সপ্রেসওয়ে।
সকালে রামলীলা ময়দানে যতটা ভিড় হয়েছিল, তার দ্বিগুণ ভিড় দেখা গেল সন্ধ্যায়, ইন্ডিয়া গেটের সামনে বিজয় সমাবেশে। বিকেল থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল পৌঁছতে শুরু করে সেখানে, অমর জওয়ান জ্যোতির সামনে। রাত পর্যন্ত সেই মিছিল আসা থামেনি, জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। তেরো দিনের মাথায় সাফল্যের স্বাদ পাওয়া দিল্লির মানুষ সেখানে শপথ নিলেন, আগামী দিনে নির্বাচনী সংস্কার থেকে শুরু করে সমস্ত আন্দোলনে অণ্ণার পাশে থাকার।
অণ্ণা হজারের সঙ্গে অনশন ভঙ্গ করলেন তাঁর সমর্থকরাও। জামশেদপুরে পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কী সংস্কার চান অণ্ণা? তাঁর প্রথম দাবি, ‘রাইট টু রিজেক্ট’ ভোটে প্রার্থী পছন্দ না হলে প্রত্যাখ্যানের অধিকার দিতে হবে মানুষকে। কোনও কেন্দ্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমস্ত প্রার্থীকে অপছন্দ করলে সেই কেন্দ্রের নির্বাচন বাতিল করতে হবে। অণ্ণা শিবিরের মতে, এই পথেই ভোট প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও কালো টাকার প্রভাব মুক্ত করা যেতে পারে। অণ্ণার কথায়, “কোনও প্রার্থী ভোটে ১০ কোটি টাকা খরচ করার পর যদি সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়, তবেই তাদের সুবুদ্ধির উদয় হবে।” অণ্ণার মতে, এতে অযোগ্য প্রার্থীদের জেতাতে জলের মতো টাকা ঢেলে রাজনৈতিক দলগুলি যোগ্য প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা নষ্ট করতে পারবে না। পরবর্তী সময়ে কেবল যোগ্য ব্যক্তিরাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সাহস দেখাবেন। পাশাপাশি ‘রাইট টু রিকল’ বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকারও ভোটারদের থাকা উচিত বলে মনে করেন অণ্ণা। গদি যাওয়ার ভয় থাকলেই দায়িত্ব পালনে জনপ্রতিনিধিরা যত্নবান হবেন বলে মনে করেন গাঁধীবাদী নেতা।
স্বাধীনতার ৬৪ বছর পরেও অবহেলিত রয়ে যাওয়া কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির উন্নতির জন্যও আগামী দিনে আন্দোলনে নামবেন বলে আজ বার্তা দেন অণ্ণা। বারো দিন ধরে সমর্থনের জন্য রামলীলায় উপস্থিত সমর্থকদের কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। ধন্যবাদ দেন সহযোগী কিরণ বেদী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, প্রশান্ত ভূষণ, শান্তি ভূষণকেও। লোকপাল প্রশ্নে সাফল্যকে জনগণের জয় বলে অভিহিত করে অণ্ণা বলেন, “দেশবাসী যে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চায়, সেই বিশ্বাসই তৈরি করেছে এই আন্দোলন। তবে অনশন প্রত্যাহার সাময়িক। গোটা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ডাক দিয়ে যে লড়াই শুরু হয়েছে, তা অর্জন না করা পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.