যোগাযোগ রাখবেন অণ্ণার সঙ্গেও
লোকপাল খসড়ার দায়িত্ব খুরশিদকেই
বশেষে প্রত্যাশিত ভাবেই সকাল দশটায় এল সেই মুহূর্ত। ২৮৮ ঘণ্টা পর অনশন প্রত্যাহার করে নিলেন অণ্ণা হজারে।
যে তিনটি শর্তে শেষ পর্যন্ত আটকে ছিল সমাধান, অণ্ণার সেই শর্তগুলি নিয়ে গত কাল সংসদে আলোচনা এবং প্রস্তাব গ্রহণের পরে প্রধানমন্ত্রী নিজে চিঠি দিয়ে ৭৪ বছরের গাঁধীবাদী নেতাকে অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেন। সেই চিঠি পাওয়ার পরেই অণ্ণা ঘোষণা করেন, রবিবার সকাল ১০টায় অনশন ভাঙবেন তিনি। ঘোষণা মতো তিনি আজ দুই বালিকা, ইকরা ও সিমরনের হাত থেকে মধু মেশানো ডাবের জল খেয়ে অনশন প্রত্যাহার করেন। তবে লোকপাল বিল পাশ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ গত কয়েক দিনে সরকারের সঙ্গে অণ্ণার মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহই তাঁকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। কারণ, চলতি অধিবেশনে লোকপাল বিল পাশের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করা হচ্ছে। সরকারি সূত্রের খবর, স্থায়ী কমিটিতে আলোচনার পর লোকপাল বিলের নতুন খসড়া শীতকালীন অধিবেশনেই পেশ করা যেতে পারে। সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়। তত দিন অণ্ণার সঙ্গে মত বিনিময় প্রক্রিয়া চালানোরই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
অনশন ভাঙার পর অণ্ণা আপাতত গুড়গাঁওয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। টানা ১৩ দিন অনশনের শেষে অণ্ণার শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁর প্রধান চিকিৎসক নরেশ ত্রেহান জানিয়েছেন, ওঁর রক্তচাপ অনেকটাই কম। নাড়ির গতি আবার অপেক্ষাকৃত বেশি। যে হেতু এ ক’দিনেই তাঁর সাড়ে সাত কেজি ওজন কমেছে, তাই আপাতত তাঁকে হাসপাতালেই রেখে শরীরের দিকে নজর রাখা হবে। তবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ঠিক মতো কাজ করছে। তাই চিন্তার বিশেষ কারণ নেই। অনশন ভাঙার পরে প্রথম দু’দিন তাঁকে তরল খাবারই দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
অণ্ণার এই ১৩ দিনের অনশন-পর্ব সামলাতে প্রথমে সরকারের পক্ষে ময়দানে নেমেছিলেন পি চিদম্বরম ও কপিল সিব্বল। কিন্তু অণ্ণার আন্দোলন সম্পর্কে বাড়তি কঠোর মনোভাব নিতে গিয়ে তাঁরা সবটাই প্রায় ভেস্তে দিতে বসেছিলেন বলে কংগ্রেসেরই অনেকে মনে করছেন এখন। এমনকী, তাঁরা বলতে শুরু করেছেন, তেলেঙ্গানার মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে চিদম্বরম বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। টু-জি স্পেকট্রাম কাণ্ডেও তাঁর নাম জড়িয়েছে। একই ভাবে সিব্বল দিল্লির সাংসদ হয়েও অণ্ণার আন্দোলনের মোকাবিলা করতে পারেননি। তা হলে তাঁদের মন্ত্রিসভায় রেখে দেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়!
এই দু’জন যখন সরকার ও দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন, তখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় উঠে এসেছেন সলমন খুরশিদ। ইউপিএ-সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ে অণ্ণা-পর্ব সলমনের রাজনৈতিক জীবনের সব থেকে বড় সাফল্য। এই ক’দিন কুশক রোডের চার নম্বর বাংলোয় আইনমন্ত্রীর বাসভবনই কার্যত মনমোহন-সরকারের ‘ওয়ার রুম’ হয়ে উঠেছিল। এখানেই বারবার সন্দীপ দীক্ষিতকে নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বা মেধা পাটেকরদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন সলমন। দূত পাঠিয়ে অণ্ণার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন। টিম অণ্ণাকে সরকারের মতামত বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। প্রাথমিক ভাবে যে সরকারের তরফে কিছু অবিবেচক পদক্ষেপ করা হয়েছিল, তা সলমনও মানছেন। তবে একে ভুল বলে মানতে রাজি নন তিনি। অনশন-পর্ব মিটে যাওয়ার পরে সলমন বলেন, “কঠিন পরিস্থিতিতে বিবেচনার ত্রুটি হতেই পারে। আমরা যা ভেবেছিলাম বা হিসেব করেছিলাম, তা মেলেনি। তবে তাকে ভুল বলা যাবে না।” তাঁর বক্তব্য, একটা আন্দোলনকে ঘিরে যখন অনেকখানি আবেগ জড়িয়ে থাকে, এবং সংবাদমাধ্যমও যখন সব সময় নজর রাখছে, সেই স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। এত দিন যাঁদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত দর কষাকষি চলছিল, আজ অণ্ণার অনশন-প্রত্যাহারের পর সেই ‘টিম অণ্ণা’-কেও অভিনন্দন জানান তিনি।
সলমন খুরশিদের কাজ অবশ্য এখানেই থামছে না। অণ্ণাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে তো হবেই, আইন মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে লোকপাল বিলের নতুন খসড়া তৈরির দায়িত্বও থাকছে সলমনের উপরেই। প্রধানমন্ত্রী দেখাতে চাইছেন, তিনি লোকপাল গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে চান। গত কাল সংসদে যা হয়েছে, আজ প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের সঙ্গে দেখা করে সে বিষয়ে তাঁকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। ওই আলোচনার বিবরণী ও প্রস্তাব সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। স্থায়ী কমিটির কাছে সরকারি বিল ছাড়াও জন লোকপাল বিল, অরুণা রায় ও জয়প্রকাশ নারায়ণের তৈরি বিলটিও রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য বিষয়গুলি নিয়ে নতুন খসড়া তৈরি করতে হবে। সংসদের মধ্যে সাংসদদের কাজকে লোকপালের আওতায় আনার মতো বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকে কী পদ্ধতিতে লোকপালের আওতায় আনা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। লোকায়ুক্ত তৈরি নিয়ে সমস্ত রাজ্য সরকারের সঙ্গে ঐকমত্য গড়ে তোলার গুরুদায়িত্বও পালন করতে হবে খুরশিদকে। তা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এর মধ্যে অণ্ণা হজারে যাতে আবার না অনশন-আন্দোলনে নেমে পড়েন, তা নিশ্চিত করতেই টিম অণ্ণার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে খুরশিদকে।
এখন প্রশ্ন, অণ্ণা কতটা সফল? কংগ্রেস ও বিজেপি, দুই শিবিরই মানছে, অণ্ণার এই আন্দোলন ভারতীয় গণতন্ত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর সাফল্য মেনে নিয়েই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরিসর দখল করার লক্ষ্যে শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস সাংগঠনিক ভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানে নামার কথা ভাবছে। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডা মহাপঞ্চায়েত ডেকে ‘কখনও ঘুষ নেব না, ঘুষ দেব না’-র সংকল্প করতে চাইছেন। বিজেপিও অনুরাগ ঠাকুরের নেতৃত্বে দলের যুব মোর্চাকে মাঠে নামিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সরকার কতটা অণ্ণার কাছে মাথা নিচু করেছে, সেই হিসেব করতে নারাজ কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। বলছেন, “এটা এমন একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত যেখানে সব পক্ষের সঙ্গে ভারতীয় গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। এখানে হারজিতের হিসেব কষা চলে না।” বিজেপির মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর মানছেন, “অণ্ণার আন্দোলন অরাজনৈতিক শ্রেণিকেও জাগিয়ে তুলেছে। রাজপথের আন্দোলন এসে মিশেছে সংসদীয় বিতর্কে।” হারজিতের হিসেব ছেড়ে তিনিও বলছেন, “এই ধরনের আন্দোলনেরও গণতন্ত্রে স্থান রয়েছে। আসল হল মজবুত লোকপাল গঠন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.